শিরোনাম
শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুই সিটিতে এক শিশুপার্ক তাও ঝুঁকিপূর্ণ

জিন্নাতুন নূর

দুই সিটিতে এক শিশুপার্ক তাও ঝুঁকিপূর্ণ

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে শিশুদের বিনোদনের জন্য যন্ত্রচালিত আধুনিক শিশুপার্কের অভাব দীর্ঘদিনের। ঢাকা বিভক্তির আগে থেকে এ পর্যন্ত উত্তরে সরকারি উদ্যোগে সে ধরনের কোনো শিশুপার্ক গড়ে ওঠেনি। আর দক্ষিণে রাজধানীর একমাত্র ও ৩৭ বছরের পুরনো শহীদ জিয়া শিশুপার্কেরও বেহাল দশা। এ পার্কের মেয়াদোত্তীর্ণ রাইডগুলো ব্যবহার করাও ঝুঁকিপূর্ণ। অথচ পার্কের উন্নয়নে প্রতি বছর সিটি করপোরেশনের জন্য অর্থ বরাদ্দ করা হয়। আশার কথা এই যে, ঢাকা দক্ষিণে পুরান ঢাকার ধূপখোলা মাঠে এযাবৎকালের সবচেয়ে আধুনিক ও শিশুবান্ধব একটি শিশুপার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। উত্তরেও আধুনিক রাইড সহকারে শিশুপার্ক তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে নিশ্চিত করেছে। বর্তমানে ঢাকার প্রধান শিশুপার্কটি শাহবাগ এলাকায় অবস্থিত। ১৯৭৯ সালে রাজধানীতে ‘শহীদ জিয়া শিশুপার্ক’ নামে এটি স্থাপিত হয়। সরকারিভাবে শিশুদের বিনোদনে জন্য এটিই দেশে প্রথম কোনো শিশুপার্ক। বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের উদ্যোগে ১৫ একর জায়গার ওপর গড়ে ওঠা পার্কটির তত্ত্বাবধান করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। এ পার্কে বর্তমান রাইডের সংখ্যা ১২। কিন্তু ৩৭ বছরের পুরনো এ পার্কের রাইডগুলোর বেহাল দশা। নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের শিশুদের জন্য ঢাকার একমাত্র এই বিনোদন কেন্দ্রটির বেশির ভাগ রাইডই পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ। যন্ত্রপাতি অকেজো থাকায় রাইডগুলোর কিছু বন্ধও আছে। কিছু রাইডে নেই সিটবেল্ট। এতে যে কোনো মুহূর্তে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। রংহীন ও অপরিষ্কার রাইডগুলো শিশুদের এখন আর আকর্ষণও করে না। এমনকি দীর্ঘদিনেও বাড়ানো হয়নি পার্কের আয়তন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সিটি করপোরেশনের এক কর্মকর্তা জানান, ঢাকার বিভক্তির আগে বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন টেন্ডারের মাধ্যমে শাহবাগের শিশুপার্কের নতুন রাইড ক্রয়ের জন্য প্রকল্প গৃহীত হলেও উচ্চ মূল্যের কারণে প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হয়নি। তিনি জানান, জাপানি প্রযুক্তির একেকটি রাইডের দাম ১৬ থেকে ১৮ কোটি টাকা হওয়ায় ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দামি এ রাইডগুলো কর্তৃপক্ষ কিনতে পারছে না। নগর পরিকল্পনাবিদ সিরাজুল ইসলাম সংখ্যার অনুপাতে রাজধানীতে শিশুপার্কের তীব্র সংকটের বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি বলেন, ‘ঢাকা ক্রমেই কংক্রিটের নগরীতে পরিণত হচ্ছে এবং পার্কের অভাবে বিনোদন খুঁজতে ঢাকার শিশু-কিশোররা হয়ে পড়ছে কম্পিউটারনির্ভর।’ আশার কথা এই যে, ঢাকার ঐতিহ্যবাহী ধূপখোলা মাঠে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধা সংবলিত শিশুপার্ক নির্মাণ করতে যাচ্ছে ডিএসসিসি। নাগরিক সেবা প্রদানকারী এ সংস্থা উন্নত দেশগুলোর আদলে অত্যাধুনিক একটি পার্ক নির্মাণের উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। এ জন্য বিশেষ মেগা প্রকল্প গ্রহণ করেছে ডিএসসিসি। শিগগিরই এর নির্মাণকাজ শুরু হতে যাচ্ছে। আর চলতি মাসেই এর নির্মাণের জন্য টেন্ডারের আহ্বান করার কথা। প্রায় ২০০ কোটি টাকা প্রকল্পের শিশুপার্কটি সাত একর জায়গাজুড়ে তৈরি করা হবে। এমনকি দেশের প্রথম এই সর্বাধুনিক শিশুপার্কের বাইরে খেলার মাঠের জন্য স্থানও রাখা হবে। জানা যায়, বর্তমানে পার্কের বিভিন্ন স্থাপনার নকশা তৈরির কাজ প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ডিএসসিসির মেগা প্রজেক্টের আওতায় ৩১টি পার্ক ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে। এর মধ্যে ধূপখোলায় শিশুবান্ধব অত্যাধুনিক একটি পার্ক তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ঢাকার উত্তরেও যন্ত্রচালিত আধুনিক পার্ক তৈরির কথা ভাবা হচ্ছে। এ জন্য বনানী পার্ক ও উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরের পার্কসহ বেশ কয়েকটি পার্কে নতুন উপকরণসহ শিশুবান্ধব পার্ক গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-১-এর আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউদ্দীন আহমেদ বলেন, পার্কের উন্নয়ন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে উত্তরা ৭ নম্বর সেক্টরে শিশুবান্ধব পার্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ প্রতি বছর ঢাকার শিশুপার্ক উন্নয়নের জন্য বেশ কিছু টাকা বরাদ্দ পায়। কিন্তু পার্কের উন্নয়নে দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নিতে এখনো দেখা যায়নি। সরকারি শিশুপার্ক ছাড়া রাজধানীতে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে ওঠা পার্কগুলোও বন্ধ হয়ে গেছে। এর মধ্যে গুলশানের ওয়ান্ডারল্যান্ড পার্কটি অবৈধভাবে গড়ে তোলার জন্য এবং শ্যামলীর শিশুমেলা দীর্ঘদিন ইজারার মূল্য পরিশোধ না করায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বন্ধ করে দেয়। আর ঢাকার হাতে গোনা এসব শিশু বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ায় সংকট আরও প্রকট হয়ে উঠেছে।

 

সর্বশেষ খবর