শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করা হবে

——— এমডি, ব্র্যাক ব্যাংক

আলী রিয়াজ

ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন করা হবে

সেলিম আর এফ হোসেন

‘ক্ষুদ্র ব্যবসা, মাঝারি শিল্প, কৃষি খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ ব্র্যাক ব্যাংকের। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ব্যবসার ঋণে আমরা পাইওনিয়ার। এ পর্যন্ত সাড়ে চার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ রয়েছে। গ্রাহকদের কোনো সিকিউরিটি ছাড়া ঋণ দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে এসএমই খাত ব্র্যাক ব্যাংক টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত ছড়িয়ে দিতে চায়। এককভাবে       এ ব্যবসা অন্য কোনো ব্যাংক এত বেশি করে না। কম সুদের নতুন উদ্যোক্তাদের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি।’ এমনটাই বললেন ব্র্যাক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিশিষ্ট ব্যাংকার সেলিম আর এফ হোসেন। দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ব্যাংকিং সেবা পৌঁছে দেওয়ার অন্যতম ব্যাংক ব্র্যাক। এ ব্যাংকে নভেম্বরে যোগদান করে ব্যাংকিং সেবাকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে দিতে নানা উদ্যোগ নিয়েছেন সেলিম আর এফ হোসেন। দেশের ব্যাংকিং ব্যবস্থা, বিনিয়োগ, প্রবৃদ্ধি নিয়ে মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে। সাক্ষাৎকারে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিভিন্ন দিক নিয়ে কথা বলেন তিনি। ব্র্যাক ব্যাংকে যোগদানের পূর্বে সেলিম আর এফ হোসেন আইডিএলসি ফাইন্যান্স লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১০ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত আইডিএলসির দুটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান আইডিএলসি ইনভেস্টমেন্টস লিমিটেড ও আইডিএলসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানও ছিলেন তিনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাকাউন্টিংয়ে স্নাতক, আইবিএ থেকে এমবিএ করা এই ব্যাংকার বহুজাতিক এএনজেড গ্রিন্ডলেইজ ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে ২৪ বছর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশ লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স কোম্পানিজ অ্যাসোসিয়েশনের (বিএলএফসিএ) ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ব্র্যাক ব্যাংকের সফলতা, পরিকল্পনা নিয়ে সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা দেশের সার্বিক অর্থনীতির চালিকাশক্তি। তাদের পাশে দাঁড়ালে যেমন দেশ উপকৃত হয়, তেমনি অন্য যে কোনো খাতের চেয়ে বেশি রিটার্ন পায় ব্যাংক। বর্তমানে আমাদের মাঝারি ব্যবসা খাতে দেড় হাজার কোটি টাকা, ছোট ব্যবসা খাতে এক হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। অন্যদিকে করপোরেট ও রিটেইল খাতে ডিসবার্স হয়েছে ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি। মোট বিনিয়োগের প্রায় ২৫ শতাংশই এসএমই খাতে। ভবিষ্যতে আমরা ৫০ শতাংশ এ খাতে বিনিয়োগ করব। আমরা এক কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকার ঋণ সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাই, আর সে লক্ষ্যেই কাজ করছি।’ তিনি বলেন, ‘সারা দেশে আমাদের ১৮৫টি শাখা, সাড়ে চারশ এসএমই ইউনিট রয়েছে। এসব ইউনিটের মাধ্যমে সারা দেশে উদ্যোক্তা তৈরি করব। বিনিয়োগ না করলে ব্যবসা করা যাবে না। বড় উদ্যোক্তারা কুইক মানি চান। ব্যাংক থেকে কুইক মানি আসবে না। ব্যবস্থাপনা দক্ষতা দিয়ে করতে হবে। আমরা প্রচুর বিনিয়োগ করেছি প্রযুক্তিতে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যাংকিং গ্রাহকদের কাছে পৌঁছে দিতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি।’ বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, ‘আমাদের মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস সাধারণ মানুষের মুঠোয় ব্যাংকিং সুবিধা নিয়ে গেছে। কিন্তু সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিং লেনদেনের ওপর কিছুটা কড়াকড়ি আরোপ করেছে। এর মধ্যে লেনদেন হার কমানো হয়েছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ে কোনো অনিয়ম হলে তার জন্য পর্যবেক্ষণ, নজরদারি বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এজেন্টদের ওপর আরও বেশি নজরদারি করা যেতে পারে। তাই বলে গ্রাহকদের লেনদেন কমানো ঠিক হয়নি। এটা বিবেচনা করা উচিত। যদি লেনদেন করতে না পারে তাহলে সবারই সমস্যা হবে।’ আইডিএলসির সাবেক সিইও বলেন, ‘দেশের ব্যাংকিং খাত এখন চাপে আছে। সংখ্যা অনেক বেশি হয়ে গেছে। এত ছোট দেশ, ছোট অর্থনীতির দেশে এত ব্যাংকের প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে ভাবা উচিত। এতগুলো ব্যাংক টিকে থাকা কঠিন। ভবিষ্যতে ব্যাসেল-৩ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেক ব্যাংক পিছিয়ে পড়বে। অনেকেই বাস্তবায়ন করতে পারবে না। ফলে বৃহৎ ব্যাংকিংয়ের ক্ষেত্রে এসব ব্যাংক পিছিয়ে পড়বে। বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক, তথ্য আদান-প্রদান, নজরদারি করা কঠিন হবে। ফলে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হওয়া খুব স্বাভাবিক। যারা মনে করছে ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংক চালু করে দেব, এটা হবে না। ভবিষ্যতে একটি বড় চাপ আসবে। আর ব্যাংকিং খাতে চাপ তৈরি হলে পুরো অর্থনীতিতে তা পড়বে।’ তিনি বলেন, ব্যাংকিং খাতে অলস তারল্য রয়েছে। গতানুগতিক ব্যাংকিং করলে হবে না। অধিকাংশ ব্যাংক প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের বাইরে যেতে চায় না। কিন্তু এটা এখন চলবে না। ক্রিয়েটিভ ব্যাংকিংয়ের দিকে যেতে হবে। অতিরিক্ত তারল্য থাকলে তাতে কোনো লাভ নেই। এটা বিনিয়োগ করতে হবে। বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র তৈরি করতে হবে। বড় করপোরেট ঋণ দিলাম রিটার্ন আসবে এ ধারণার বাইরে যেতে হবে। নিজের কাঠামো তৈরি করতে হবে। দেশের ভালো ইয়াং ব্যাংকারের অভাব রয়েছে। ব্যাংকার তৈরি করতে হবে। বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে নতুন লোকবল সৃষ্টি করতে হবে। শিক্ষা শেষে অনেকেই দেশের বাইরে চলে যায়। এ দেশে যে কাজের চাপ সে তুলনায় বেতন, সুযোগ-সুবিধা কম। এ দেশে নানা নিয়ন্ত্রক চাপ বেশি। এটা থেকে বের হতে হবে।

সর্বশেষ খবর