শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

পরিবারের তিনজনের মৃত্যু চেয়ে আবেদন

মেহেরপুর প্রতিনিধি

জটিল রোগে আক্রান্ত সন্তানদের দেশে-বিদেশে চিকিৎসা করে কোনো সুফল না পেয়ে অবশেষে সন্তানসহ পরিবারের সদস্যদের মৃত্যু কামনা করে জেলা প্রশাসকের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছেন মেহেরপুরের হতাশাগ্রস্ত এক পিতা। তবে রোগাক্রান্ত পরিবারকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন জেলা প্রশাসন।

জেলা শহরের ৩ নং ওয়ার্ডের বেড়পাড়ার ফল ব্যবসায়ী তোফাজ্জেলের দুই ছেলে সবুর, রায়হানুল ও মেয়ের ছেলে (নাতি) সৌরভের ডুফিনি মাসুকলার ডিসট্রোফি রোগে আক্রান্ত। যার চিকিৎসা আজও আবিষ্কার হয়নি। দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসা করতে গিয়ে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিকিয়ে দিতে হয়েছে তাকে। রোগাক্রান্ত সন্তানদের সুচিকিৎসার জন্য দেশে ও বিদেশে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল হয়নি। তিলে তিলে চোখের সামনে সন্তানদের মৃত্যু দেখা ছাড়া আর কিছুই করার নেই এ পরিবারের। দিন যতই যাচ্ছে ততই মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে বড় সন্তানটি। একমাত্র মেয়ের সন্তানটির শরীরেও একই রোগ বাসা বেঁধেছে। তোফাজ্জেলের স্ত্রীও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী। চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটাতে  জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেলের আবেদন—হয় আমার সন্তানের চিকিৎসাভার নেওয়া হোক অথবা তাদের মৃত্যুর অনুমতি দেওয়া হোক। আবেদনপত্র পেয়ে রোগাক্রান্ত পরিবারের কাছে গিয়ে সহযোগিতার আশ্বাস দেন দায়িত্বপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান। তোফাজ্জেল হোসেন তার সন্তানের আরোগ্যে দেশের বিভিন্ন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, দূতাবাসেও ছুটে গেছেন। ঢাকায় ফ্রান্স দূতাবাস সহযোগিতা দিতে ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের কাছে রোগের ওষুধ কি জানতে চেয়ে অনুরোধ করেন। এই অনুরোধের উত্তরে তোফাজ্জেল হতাশ হয়ে পড়েন। শত শত চিকিৎসক ইন্টারনেটে জানিয়েছেন, এখনো এ রোগের ওষুধ আবিষ্কার হয়নি। রোগটি ক্যান্সারের চেয়েও ভয়াবহ বলে একজন শিশু বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন। তবে তোফাজ্জেল হোসেনকে আশার বাণী শুনিয়েছেন ভারতের ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হোমিওপ্যাথি’ হাসপাতালের চিকিৎসকরা। তারা জানিয়েছেন, দীর্ঘ মেয়াদের চিকিৎসায় এ রোগ সারিয়ে তোলা সম্ভব। যদি সেখানে ভর্তি করা যায়। একটু আশার পথ দেখলেও অর্থ সংকটের কারণে সন্তানদের চিকিৎসা পথ না পেয়ে বাধ্য হয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে তোফাজ্জেলের  আবেদন—হয় আক্রান্ত ছেলেদের মৃত্যুর অনুমতি  অথবা চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া হোক। ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক খায়রুল হাসান বলেন, বিষয়টি অত্যন্ত মানবিক। আমরা বিভিন্নভাবে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করতে চাই।

সর্বশেষ খবর