শনিবার, ২১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রকাশিত সংবাদে পুলিশের ব্যাখ্যা ও আমাদের বক্তব্য

বাংলাদেশ প্রতিদিনে গত ১৭ জানুয়ারি শেষের পাতায় ‘যে আক্রোশে সাংবাদিক নাজমুল জেলে’ শীর্ষক প্রতিবেদনের প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা জেলা পুলিশ। বিশেষ শাখার পুলিশ সুপার শাহ মিজান শাফিউর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘প্রতিবেদনে সাংবাদিক নাজমুল হুদা ঢাকা জেলার এক অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের সীমাহীন আক্রোশের শিকার হয়েছেন মর্মে অভিযোগ করা হয়েছে।  বাংলাদেশ পুলিশ একটি পেশাদার বাহিনী। দাফতরিক ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো পুলিশ সদস্যের ব্যক্তিগত আক্রোশ কিংবা প্রতিহিংসার কোনো স্থান নেই।’ প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে, ‘সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে গার্মেন্টসে প্যান্ট চুরির মামলায় জড়ানোর অভিযোগ আনয়ন করা হলেও বাস্তবে গার্মেন্টস কারখানায় প্যান্ট চুরির অভিযোগে কোনো মামলাই রুজু হয়নি। সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে দুই দফা রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ করা হয়। পুলিশ অভিযুক্তদেরকে বিজ্ঞ আদালতের আদেশ সাপেক্ষে পুলিশ রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে ঘটনার মূল রহস্য উদঘাটন করে। এক্ষেত্রে নির্মম শারীরিক নির্যাতনের কোনো সুযোগ নেই। এ ছাড়াও ওই পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সাংবাদিক নাজমুলের হাত-পা গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ প্রদান সংক্রান্ত তথ্য-প্রমাণ প্রতিবেদক কীভাবে কোথায় পেলেন তা বোধগম্য নয়। প্রতিবেদনে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে গড়ে ওঠা শ্রমিক আন্দোলন নস্যাৎ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপসহ ব্যাপক ধরপাকড় চালায় মর্মে উল্লেখ করা হয়। লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস নিক্ষেপ ও ব্যাপক ধরপাকড় সংক্রান্ত সংবাদের কোনো সত্যতা নেই। তাছাড়া সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে ডেকে নিয়ে গালাগাল করা, স্পর্শকাতর সংবাদ প্রকাশে নিষেধ করা, সংবাদ প্রকাশ হতে বিরত রাখার উদ্দেশ্যে হুমকি ও শিক্ষা দেওয়ার অভিযোগ অমূলক, ভিত্তিহীন ও মনগড়া। হুমকি প্রদানের সময় সেখানে দুটি টিভি চ্যানেলের রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানের উপস্থিতির কথা উল্লেখ করা হলেও টিভি চ্যানেলের নাম, সাংবাদিকের পরিচয় উল্লেখ করা হয়নি। রিপোর্টে কারখানার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কতিপয় পুলিশ কর্মকর্তা কর্তৃক কারখানা মালিকদের নিকট থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢাকা জেলা পুলিশের কোনো সদস্য এ ধরনের অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত না থাকা সত্ত্বেও প্রতিবেদক কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে এমন সংবাদ পরিবেশন করেছেন তা আদৌ বোধগম্য নয়। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার অপচেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এ সংবাদের তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

প্রতিবেদকের বক্তব্য : আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশের সাহসী ভূমিকার প্রশংসা বাংলাদেশ প্রতিদিন শুরু থেকেই করে আসছে। কিন্তু দু-একজন বিপথগামী অসাধু কর্মকর্তার কারণে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হলে আমরা কর্তৃপক্ষের নজরে আনার জন্য তা তুলে ধরি। সাভারের নাজমুল ইস্যু তেমনই। সাংবাদিক নাজমুল হুদার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাগুলো যে প্রতিহিংসার প্রতিফলন তা সহজেই বোধগম্য। কারণ, তাকে গ্রেফতার করে একের পর এক পুরনো মামলায় রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এসব মামলার একটিরও এজাহারে সাংবাদিক নাজমুল হুদার ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতাও নেই। এ কারণে মামলার বাদীরা এজাহারে সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে আসামিও করেননি। এ ছাড়া মামলার বাদীরা নাজমুল হুদাকে সন্দেহের তালিকাতেও রাখেননি। কিন্তু পুলিশ প্রতিহিংসার কারণেই ওইসব পুরনো মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে। এটা আশুলিয়া থানা পুলিশের পুরনো কৌশল। প্রতিবাদ পত্রে পুলিশের পক্ষ থেকে নাজমুলের বিরুদ্ধে প্যান্ট চুরির মামলা করা হয়নি বলে দাবি করা হয়েছে। প্রতিবাদের এ অংশও সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাস্তবে আশুলিয়া থানার ২৫(১২)১৬ নং মামলায় প্যান্ট চুরির অভিযোগের কথা বলা হয়েছে। যার বাদী ছিলেন আশুলিয়ার ডেন্ডাবর নতুন পাড়ার ইব্রাহীম আহমেদ। মামলার এজাহারে ২৬ নম্বর লাইনে ‘প্যান্ট চুরি করিয়া নেয়’ উল্লেখ রয়েছে। এ মামলায় গত ৩১ ডিসেম্বর সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে গ্রেফতার দেখিয়ে পাঁচ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেছে আশুলিয়া থানা পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম শামীম হাসান। তাই ঢাকা জেলা পুলিশের কাছ থেকে এমন অসার প্রতিবাদ বাংলাদেশ প্রতিদিন আশা করেনি। এ ছাড়া রিমান্ডে শারীরিক নির্যাতনের সুযোগ নেই বলে প্রতিবাদ করা হয়েছে। বাস্তবে সাংবাদিক নাজমুলকে মারধরসহ শারীরিক নির্যাতন করায় তার ডান কানে গুরুতর জখম হয়েছে। বর্তমানে তিনি কারাগারে কানের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। এই বিষয়টি নাজমুল আদালতের বিচারককে মৌখিকভাবে জানিয়েছেনও। ডিসেম্বরে আশুলিয়ায় শ্রমিক অসন্তোষে পুলিশের লাঠিচার্জ, কাঁদুনে গ্যাস ব্যবহারের কথা অস্বীকার করা হলেও বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল প্রচার করেছে। সাংবাদিক নাজমুল হুদাকে হুমকি ও গালাগালের সময় উপস্থিত দুই টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাম্যানের নাম উল্লেখ না করার কথা পুলিশের প্রতিবাদপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু সাংবাদিকতার নীতিমালা অনুযায়ী ওই দুই টিভি রিপোর্টার ও ক্যামেরাপারসনের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে নাম গোপন রাখা হয়েছে। অন্য অর্থে তাদের অবস্থাও সাংবাদিক নাজমুল হুদার মতো হওয়ার আশঙ্কায় এই নামগুলো গোপন রাখা হয়েছে। কারণ, তারাও পুলিশি হয়রানিতে পড়তে পারেন। প্রতিবাদপত্রে হয়েছে, ঢাকা জেলা পুলিশের কোনো সদস্য অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত নন। উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন সংবাদ প্রকাশ করে ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হয়েছে। এটাও সঠিক তথ্য নয়। একাধিক গার্মেন্ট মালিকের কাছ থেকে অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের টেলিফোনে ঘুষ দাবি করার কথোপকথন রেকর্ড বাংলাদেশ প্রতিদিনের হাতে রয়েছে। এর আগে বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকাণ্ডের কারণে একাধিক পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্তসহ তাত্ক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বর্তমানেও ঢাকা উত্তর আশুলিয়াসহ বিভিন্ন অপরাধে অর্ধশত পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে কারণ দর্শানোর নোটিস জারি করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভাগীয় শাস্তিমূলক মামলা চলছে বেশকিছু পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া আশুলিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে পাহাড় সমান অভিযোগের অডিও-ভিডিও রেকর্ড আমাদের কাছে রয়েছে।

সর্বশেষ খবর