সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নতুন ভবনে যাত্রা শুরু ইসির

ছিল তাড়াহুড়ো, দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অফিস করলেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ভবনে যাত্রা শুরু ইসির

দাঁড়িয়েই অফিসের কাজ করছেন নতুন ভবনে —জয়ীতা রায়

বিদায়ী নির্বাচন কমিশন মাত্র দুই সপ্তাহ অফিস করতে তড়িঘড়ি করে নতুন ভবনে যাত্রা শুরু করেছে। কাজ পুরোপুরি শেষ না হলেও সিইসির নির্দেশে হ-য-ব-র-ল অবস্থার মধ্য দিয়ে গতকাল নতুন ভবনে প্রথম অফিস করেছেন ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বসার জায়গা না থাকায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অফিসের কাজ করতে দেখা গেছে তাদের। গত শুক্রবার-শনিবার নতুন অফিসে ইসির মালামাল স্থানান্তরের কথা থাকলেও তা এখনো সম্পন্ন হয়নি। নতুন ভবনে মালামাল স্থানান্তরের কাজ যেমন চলছে, সেই সঙ্গে চলছে ভবন তৈরির কাজও। অফিসিয়াল কাজের জন্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত নয় ইসির নতুন ভবন। বিদ্যুত্-পানি সরবরাহ ও ভবনে লিফট স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ এখানো শেষ হয়নি। ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুরো কাজ শেষ হওয়ার আগে নতুন ভবনে তড়িঘড়ি করে অফিস করতেই দ্রুত মালামাল স্থানান্তরের নির্দেশ দিয়েছিলেন সিইসি। সে অনুযায়ী শুক্রবার-শনিবার মালামাল স্থানান্তরের কথা ছিল। কিন্তু গতকাল পর্যন্ত নতুন ভবনে সব মালামাল নেওয়া শেষ করতে পারেনি ইসির অফিস পরিবর্তন কমিটি। অফিস সাজগোজ করতে আরও প্রায় দুই সপ্তাহ লাগতে পারে।

গতকাল সরেজমিন গিয়ে দেখে গেছে, সকাল ৯টায় ইসির কর্মকর্তারা নাকে রুমাল দিয়ে অফিসে ঢুকছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কর্মকর্তারা বলেন, নতুন অফিসে ধুলোবালির কারণে নাকে রুমাল দিয়ে তাদের অফিসে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তাড়াহুড়ো করে পরিবর্তন করায় অফিস ধোয়ামোছাও করা হয়নি। তাই নাকে রুমাল দিয়ে প্রবেশ করতে হচ্ছে। তবে অফিসে ঢুকে বসার জায়গা না পেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে কর্মকর্তাদের। দেখা গেছে, ইসির গণসংযোগ বিভাগের জন্য এখনো কোনো জায়গা বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। অন্যান্য বিভাগ কোথায় বসবে, আগে থেকে ঠিক করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ইসির বিভিন্ন বিভাগ নির্দিষ্ট জায়গা না পাওয়ায় নিজের কাগজপত্র ফ্লোরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রেখেছে। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র ফ্লোরেই পড়ে থাকতে দেখা গেছে। যেসব কর্মকর্তা কক্ষ পেয়েছেন তারাও বসতে পারেননি। ধুলোবালিতে ঢাকা ছিল নতুন ভবন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার, চার নির্বাচন কমিশনার ও ইসি সচিবের কক্ষই শুধু সাজানো-গোছানো ছিল। কিন্তু অন্যান্য কর্মকর্তার কক্ষে বসার চেয়ার পর্যন্ত ঠিকঠাক করা হয়নি। ইসির নতুন ভবন অনেকটা আধুনিক হলেও তাড়াহুড়ো করে অফিস পরিবর্তন করায় ধুলোবালির মধ্যে বাধ্য হয়ে অফিস করছেন কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এ অবস্থায় কয়েক দিন অফিস করলে অনেকেই অসুস্থ হতে পারেন। শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরের কার্যালয় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয় গতকাল আগারগাঁওয়ের ইসির অফিস। সেখানেই প্রথম অফিস করেন বিদায়ী কমিশন। গতকাল নির্বাচন ভবন ঘুরে দেখে সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়া জানান প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। তিনি বলেন, ‘আমরা এত দিন অন্যের বাড়িতে ছিলাম। এখন আমরা নিজেদের বাড়িতে এসেছি। আশা করছি ভবনের কাজ কিছু দিনের মধ্যে শেষ হবে।’ এর আগে বর্তমান কমিশনের ‘তাড়াহুড়ো’র মধ্যেই ৩১ ডিসেম্বর আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত বহুতল ভবনটির উদ্বোধন করা হয়। পুরোপুরি কাজ শেষ না করেই নতুন ভবনে ইসি সচিবালয় স্থানান্তর করায় বিপাকে পড়েছেন কর্মকর্তারা। যদিও ভবন পরিবর্তনের প্রস্তুতি সভায় কর্মকর্তারা বলেছিলেন, কাজ শেষ হওয়ার আগে মালামাল স্থানান্তর করলে সমস্যায় পড়তে হবে। কিছু কাজ, যেমন টাইলসের পয়েন্টিং ও রঙের কাজ অসম্পূর্ণ থেকে যেতে পারে। একজন সিস্টেম অ্যানালিস্ট বলেন, নির্বাচন কমিশনের ডাটা সেন্টার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থানান্তর করা না গেলে মাঠপর্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। গতকাল নতুন ভবনে কর্মকর্তারা অফিস করলেও বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন। এর আগে শেরেবাংলানগরে পরিকল্পনা কমিশন চত্বরে নির্বাচন কমিশনের কার্যালয় ছিল। ইসির নিজস্ব ‘নির্বাচন ভবন’ আগারগাঁওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের অর্থায়নে জুলাই ২০১১ থেকে জুন ২০১৭ মেয়াদে বাস্তবায়নে কনস্ট্রাকশন অব ইলেকশন রিসোর্সেস সেন্টার (ইআরসি) প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ২১৩.০৩ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় দুটি বেইজমেন্ট ও ১২ তলাবিশিষ্ট ১.২২ লাখ বর্গফুট আয়তনের ইটিআই ভবন এবং দুটি বেইজমেন্ট ও ১১ তলাবিশিষ্ট ২.৫৮ লাখ বর্গফুট আয়তনের নির্বাচন ভবন নির্মাণ হলো।

সর্বশেষ খবর