সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে স্থলবন্দরগুলো

নিজামুল হক বিপুল

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে স্থলবন্দরগুলো

দেশের স্থল বন্দরগুলো নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। কোথাও চোরাচালানিদের দৌরাত্ম্য, কোথাও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অনিয়ম-দুর্নীতি হচ্ছে। আবার কোথাও প্রভাবশালী সিন্ডিকেট সদস্যদের দাপটে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্থলবন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। টেকনাফ স্থলবন্দরে রোহিঙ্গাদের প্রবেশে দেওয়া হচ্ছে অবৈধ বর্ডার পাস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় অনেক স্থলবন্দরে চলছে জমজমাট চোরাচালান ও মাদকের ব্যবসা। এসব কারণে দেশের স্থলবন্দরগুলো ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। গতকাল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত দেশের স্থলবন্দরগুলোর নিরাপত্তাসহ সার্বিক পরিস্থিতির ওপর এক সভায় এসব তথ্য উঠে এসেছে বলে সভা সূত্রে জানা গেছে। এই স্থল বন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদারসহ অন্যান্য সমস্যা সমাধানে অবকাঠামোর উন্নয়ন, সিসি টিভি স্থাপনসহ সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের নেতৃত্বে একটি মনিটরিং টিম গঠনেরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। দেশে বর্তমানে স্থলবন্দরের সংখ্যা ২৩টি। এরমধ্যে ১০টি স্থলবন্দর সক্রিয়। যার পাঁচটি সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং বাকি পাঁচটি চলছে পিপিপি ভিত্তিতে। এসব স্থলবন্দরে নিরাপত্তাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমদ, স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান তপন কুমার চক্রবর্তী, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আবুল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও দফতরের কর্মকর্তারা। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে রোহিঙ্গাদের অবৈধভাবে বর্ডার পাস দেওয়া, বিবিরবাজার বন্দর দিয়ে পাসপোর্ট-ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশ ও ভারতের জনসাধারণের অবাধ যাতায়াত ও মাদকসহ অবৈধ পণ্যের চোরাচালান দিন দিন বৃদ্ধি, হিলি বন্দর দিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় মাদক চোরাচালানের জন্য নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি এবং ভোমরা ও বেনাপোল বন্দরে শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের সহযোগিতায় আমদানি-রপ্তানিতে অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়। বৈঠক সূত্র জানায়, স্থলবন্দরগুলোর নিরাপত্তা জোরদার করতে বিজিবি, বন্দর কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি বৈঠক থেকে কড়া নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে বন্দরগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম ঠেকাতে শুল্ক বিভাগের অসাধু কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ারও নির্দেশ দেওয়া হয়। সূত্র জানায়, স্থলবন্দরগুলোতে শুল্ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দীর্ঘদিন একই স্থানে পোস্টিং নিয়েও আলোচনা হয়েছে। একেক জন কর্মকর্তা কীভাবে দীর্ঘদিন একই কর্মস্থলে পোস্টিং নিয়ে থাকেন সে বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পিওন থেকে শুরু করে কর্মকর্তাদের একই কর্মস্থলে ২০-২৫ বছর কর্মরত থাকার কারণে অনিয়ম ও দুর্নীতি বেশি হচ্ছে বলে বৈঠকে মতামত দেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এ কারণেই স্থলবন্দরগুলোতে দুর্নীতি ও অনিয়ম শিকড় গেড়েছে বলে অভিযোগ করেন তারা। বৈঠক সূত্রে আরও জানা গেছে, সোনা মসজিদ স্থলবন্দরে পানা পোর্ট লিংক লিমিটেডের তত্পরতা সবচেয়ে বেশি। তারাই এখানে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করে। ওই বন্দরে বিভিন্ন সংস্থার অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে বিদেশ থেকে আমদানিকৃত মালামালের ওজন কম দেখিয়ে আন্ডার ইনভয়েজের মাধ্যমে আর্থিক সুবিধা দেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথা বলা হয়েছে। আর টেকনাফ বন্দরে রাজস্ব সংগ্রহে কাস্টমস কর্মকর্তাদের ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্র জানায়, স্থলবন্দরগুলোর এসব সমস্যা সমাধানে সাতটি সুপারিশ করা হয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে—বন্দরের সার্বিক বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য স্থানীয়ভাবে বন্দর সংশ্লিষ্ট সব সংস্থার সত্ দায়িত্বশীল সদস্যদের সমন্বয়ে যৌথ মনিটরিং সেল গঠন করা; স্থলবন্দরে তালিকাভুক্ত সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে প্রকৃত লাইসেন্সধারীদের সমন্বয়ে একটি নির্দিষ্ট সময় পর পর নির্বাচনের মাধ্যমে কমিটি গঠন; বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানিকারক ও বাংলাদেশ-ভারতে যাতায়াতকারী যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন সে বিষয়ে নজরদারি বৃদ্ধি করা; বন্দরগুলোতে ইতিপূর্বে একই স্টেশনে একাধিকবার বা দীর্ঘদিন দায়িত্বপালনকারী কাস্টমস, ইমিগ্রেশন ও উদ্ভিদ সংগ নিরোধ এবং নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যাতে পোস্টিং না পায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে সুপারিশ করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর