সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
নারায়ণগঞ্জে ৭ খুন

র‌্যাবে নিয়োগ, সতর্ক হওয়ার তাগিদ রায়ে

রায়সহ নথিপত্র হাই কোর্টে প্রেরণ

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি

নারায়ণগঞ্জে সাত খুন মামলার রায়ের পর্যবেক্ষণে আদালত বলেছে, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই কাউন্সিলর নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম ও আসামি নূর হোসেনের দ্বন্দ্বের জের ধরে নিরীহ ছয়জন খুন হয়েছেন। টার্গেট শুধু নজরুল থাকলেও খুন হয়েছেন ওই ছয় জন। রায়ের পর্যবেক্ষণে বিচারক আরও বলেছেন, এটি একটি শৃঙ্খলিত বাহিনীর কিছুসংখ্যক দুষ্কৃতকারী ও কতিপয় রাজনৈতিক সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত। এখানে নূর হোসেন একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও গডফাদার যেমন, অপরজন নিহত প্যানেল মেয়র নজরুল ইসলাম সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে এই দুজনের দ্বন্দ্বের জের ধরে এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। একজন প্যানেল মেয়র নজরুলকে হত্যা করতে গিয়ে নিরীহ ছয় জন মানুষ র‌্যাব ও নূর হোসেন বাহিনীর দ্বারা নির্মম হত্যার শিকার হয়েছেন।  গতকাল নারায়ণগঞ্জ জেলা ও দায়রা আজ আদালতে প্রেস কনফারেন্স রুমে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে রায়ের কপির বরাত দিয়ে পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন এ তথ্য জানান। রায় নিয়ে আদালতের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরে অ্যাডভোকেট ওয়াজেদ আলী খোকন বলেন, ‘মামলার জুডিশিয়াল রেকর্ড, রায় ও ডকুমেন্ট হাই কোর্টে পাঠানো হয়েছে। রায় দেওয়ার এক সপ্তাহ পর রবিবার দুপুরে আদালতের দাফতরিক কাজ শেষে পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে উচ্চ আদালতে প্রেরণ করা হয় পূর্ণাঙ্গ রায়ের কপি। নিয়মানুযায়ী লাল সালুতে মুড়িয়ে সিলগালা করে দুটি মামলার সব নথিসহ পূর্ণাঙ্গ এ রায়ের কপি প্রেরণ করা হয়। সাত খুনের দুটি মামলার রায় ১৬৩ পাতা করে। প্রতি মামলায় ১১ হাজার করে লাইন। মোট ২২ হাজার লাইন। ইংরেজিতে রায় দেওয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘ডেথ রেফারেন্সে এ মামলার শুনানি হবে। আমরা আশা করব নিম্ন আদালতের রায় হাই কোর্টেও বহাল থাকবে।’ ওয়াজেদ আলী খোকন সাংবাদিকদের বলেন, র‌্যাব একটি শৃঙ্খলিত বাহিনী। এই বাহিনীর অনেক সুনাম ও সুখ্যাতি অর্জন এ দেশে আছে। সন্ত্রাসবিরোধী থেকে আরম্ভ করে জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূলসহ বিভিন্ন অর্জন রয়েছে এ বাহিনীর। কিন্তু এদের যে কজন সদস্য এ ঘটনার জন্য সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিশে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। এর দায় যারা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তাদের। আদালত তার পর্যবেক্ষণে র‌্যাবের প্রশংসাও করেছেন। আবার তিরস্কার দিয়েছেন, যাতে ভবিষ্যতে বাহিনীর কেউ এ ধরনের উচ্চাভিলাষী, ঘৃণ্যতম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত হতে না পারে এ জন্য র‌্যাবকে সতর্ক রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৬ জানুয়ারি নারায়ণগঞ্জের চাঞ্চল্যকর সাত খুনের দুই মামলায় সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বহিষ্কৃত তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেনের আদালত। এ মামলার ৩৫ আসামির বাকি নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১২ জন এখনো পলাতক। গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ও পাঁচ জনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারের ১ ও ২ নম্বর কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।

ডেথ রেফারেন্স হাই কোর্টে : বহুল আলোচিত সাত খুন মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্সের নথি গতকাল হাই কোর্টে এসেছে। গতকাল নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রায়ের কপি, জুডিশিয়াল রেকর্ড, সিডি, বিভিন্ন নথিপত্রসহ সব কাগজপত্র হাই কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় জমা দেন। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) সাব্বির ফয়েজ বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, ১৬৩ পৃষ্ঠার রায় ডেসপাস (আদান-প্রদান) শাখায় এসেছে। সেখান থেকে রেজিস্ট্রার জেনারেলের কার্যালয় হয়ে নথিপত্র ডেথ রেফারেন্স শাখায় যাবে। অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, এখন এটি ফৌজদারি শাখায় পাঠানো হবে। তারা এটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পেপারবুক তৈরির জন্য পাঠাবেন। পেপারবুক তৈরির পর এ মামলা দ্রুত শুনানির জন্য আবেদন করা হবে।

সর্বশেষ খবর