সোমবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঋণ কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন

সাবেক এমডি, এসআইবিএল

আলী রিয়াজ

ঋণ কাঠামোর পরিবর্তন প্রয়োজন

শফিকুর রহমান

ব্যাংকিং খাতে যে পরিমাণ অলস অর্থ আছে সে অনুযায়ী  বিনিয়োগ হচ্ছে না। শিল্প উত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ খুব কম। আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা, খেলাপি সংকটের কারণে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে      কিছুটা গতিহীনতা আছে। এটা থেকে বের হতে হলে ঋণ কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু অলস অর্থের পরিমাণ অনেক তাই সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি দেওয়া উচিত। এ ছাড়া আস্থা ফিরিয়ে আনতে ব্যাংকিং সিস্টেমের খেলাপি সংস্কৃতি থেকে বের হতে ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িতদের শাস্তি দেওয়া উচিত। দেশের ব্যাংক, অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়োগ নিয়ে কথা বলেছেন সোস্যাল ইসলামী ব্যাংকের (এসআইবিএল) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুর রহমান। সম্প্রতি নিজ বাসায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাত্কারে নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন এই বিশিষ্ট ব্যাংকার। প্রায় ৪০ বছরের ব্যাংকিং ক্যারিয়ারে শফিকুর রহমান কাজ করেছেন সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংকে। ব্যাংকিং ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন সোনালী ব্যাংকে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী শফিকুর রহমান ২০০৩ সাল পর্যন্ত শাখা ব্যবস্থাপকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। ২০০৩ সালে তিনি অগ্রণী ব্যাংকে মহাব্যবস্থাপক হিসেবে যোগ দেন। এ ছাড়া তিনি যমুনা ব্যাংক এবং সাউথইস্ট ব্যাংকেও কাজ করেছেন। ২০১০ সালে এসআইবিএলে উপব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। তিনি দেশে-বিদেশে বিভিন্ন সেমিনার ও প্রশিক্ষণে অংশ নেন। পরের বছরই এমডি হিসেবে পদোন্নতি পান। ছয় বছর দায়িত্ব পালন শেষে সম্প্রতি অবসরে  গেছেন। দেশের ব্যাংকিং পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বলেন, যে কোনো খাতের তুলনায় ব্যাংকিং খাত ডিসিপ্লিনড। ব্যাংকিং খাতের প্রধান সমস্যা খেলাপি সংস্কৃতি। এ জন্য অল্প কিছু ব্যবসায়ী দায়ী। এসব ব্যবসায়ীর কারণেই খেলাপির পরিমাণ বেড়েছে। ফলে ব্যাংকগুলোর কস্ট অব ফান্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে ঋণ দিতে গিয়ে অনেক ব্যাংক সমস্যায় পড়েছে। দেশে ব্যাংকের সংখ্যাও একটি সমস্যা বলে আমার মনে হয়। মোট মূলধন, ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডের হিসাব ধরলে এত বেশি ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল না। এর মধ্যে বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক চলতে পারছে না। দীর্ঘ সময় ধরে লোকসানি অবস্থায় আছে। এখন সময় এসেছে এই ব্যাংকগুলোকে একীভূত করা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে এসব ব্যাংক একীভূত করে পরিচালিত হলে আমার মনে হয় আরও বেশি ভালো করত। তিনি বলেন, কস্ট অব ডুয়িং বিজনেস বৃদ্ধি পাওয়ায় বিনিয়োগে যেতে পারছে না অনেকে। কারণ খেলাপির কস্ট এখান থেকে মেটাতে হচ্ছে। এগুলো বিবেচনায় নিয়ে পুরো ঋণ কাঠামোতে একটি পরিবর্তন প্রয়োজন। ব্যবসা করতে হলে ঝুঁকি থাকবে। কেউ যদি মনে করেন ঋণ দেব, সুদ আসবে ব্যবসা হবে। এই চিন্তায় ব্যাংকিং চলবে না। এর পরিবর্তন করতে হবে। এসআইবিএলের সাবেক এমডি বলেন, মুদ্রানীতিতে ঋণের ব্যাপ্তি বাড়াতে হবে। সংকোচনমূলক, নিয়ন্ত্রিত মুদ্রানীতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এখন বিনিয়োগ বাড়াতে সম্প্রসারণ মুদ্রানীতি করতে হবে। কয়েক বছর আশাব্যঞ্জক বিনিয়োগ হয়নি। অনুত্পাদনশীল খাতে বিনিয়োগ বেশি হয়েছে। এখন ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের সুযোগ দিতে হবে। বড় আকারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে হবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে শিল্প বিনিয়োগের বিকল্প নেই। রাষ্ট্রের দায়িত্ব শিক্ষিতদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। এখন রাষ্ট্র ব্যবসা করে না। বেসরকারি খাতে সেই সুযোগ করে দিলেই কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে। বিশিষ্ট এই ব্যাংকার বলেন, গত কয়েক বছর ধরে জ্বালানি সংকট ছিল। সরকার বিদ্যুতের সংকট কাটাতে পারলেও নতুন গ্যাস সংযোগ এখনো কেউ পাচ্ছে না। কোনো শিল্প কারখানা গ্যাসের সংযোগ পায়নি। তাহলে কীভাবে বিনিয়োগ হবে। বিনিয়োগ না হলে খেলাপির পরিমাণও বাড়বে। হয়েছেও তাই। একদিকে যেমন খেলাপি বেড়েছে, অলস অর্থের পরিমাণও বেড়েছে। বর্তমানে প্রায় ১১ শতাংশের বেশি খেলাপি। এক লাখ কোটি টাকার বেশি অলস অর্থ। এই অর্থ বিনিয়োগ করতে যে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত সেটা গ্রহণ করতে হবে। সাবেক এমডি বলেন, ব্যাংকের সুশাসনে কোনো ছাড় দেওয়া যাবে। ঋণ জালিয়াতির সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবাইকে শাস্তির আওতায় নিয়ে আসতে পারলে আরেকটি হলমার্ক, বিসমিল্লাহ আমাদের দেখতে হতো না। এরপরও আমরা একাধিক ঘটনা দেখেছি। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে আরও দেখতে হবে। ঋণ নিয়ে ফেরত দিচ্ছে না। প্রকল্প নেই ঋণ পাস হয়ে যাচ্ছে, এতে অবশ্যই কিছু ব্যাংকার জড়িত। তাদেরও কঠোর শাস্তির আওতায় আনা উচিত। তবে ঘটনার সঙ্গে জড়িত মূল ব্যক্তিদের অনেকেরই কিছু হয়নি। এটা ব্যাংক খাতের জন্য অশনি সংকেত। ব্যাংকের পরিচালনায় কারা আসে, কীভাবে আসে সেটা খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। আর রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মালিক সরকার। কিন্তু সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ সময় এসআইবিএলে কাজ করেছি। এই সময়ের মধ্যে অনেক সূচকে আমাদের ব্যাংক এগিয়ে ছিল। বর্তমানে আমাদের সারির ব্যাংকগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ ব্যাংক। বর্তমানে ডিপোজিট, ঋণ যেভাবে আছে ভবিষ্যতে আরও ওপরে যাবে। এসআইবিএল সবচেয়ে কমপ্লায়েন্স ব্যাংক। মুনাফায় এগিয়ে আছে ব্যাংকটি। ছয় বছরে আমরা যে কাজ করেছি সেটা ব্যাংকের সবাই মিলে করেছে। পর্ষদ সদস্যরা সব ধরনের সহায়তা করেছে।

সর্বশেষ খবর