মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বদলে গেছে মতিঝিল-গুলিস্তান

কোটি টাকার ফুটপাথ বাণিজ্য বন্ধ ক্ষুব্ধ চাঁদাবাজ চক্র ফের সক্রিয় ১০৬ সন্ত্রাসীর তালিকা প্রস্তুত

নিজস্ব প্রতিবেদক

বদলে গেছে মতিঝিল-গুলিস্তান

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের পর মতিঝিল-গুলিস্তান এলাকার ফুটপাথ দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারছে সাধারণ মানুষ —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) হকার উচ্ছেদ অভিযানের পর পাল্টে গেছে মতিঝিল, গুলিস্তান আর পল্টন এলকার ফুটপাথ। বাধা-বিপত্তি ছাড়াই ফুটপাথ দিয়ে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে যেতে পারছেন পথচারীরা। হকারদের কারণে সৃষ্টি হওয়া যানজটও নেই। নির্দিষ্ট স্টপেজ থেকে বাসে চড়তে পারছেন যাত্রীরা। এদিকে হকার উচ্ছেদের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে সেখানকার কোটি টাকার ফুটপাথ-বাণিজ্য। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছে অবৈধ এই বাণিজ্যে জড়িত একাধিক চাঁদাবাজ চক্র। তারা ফুটপাথ ফের দখলে নিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। হকারদের নাম দিয়ে চক্রটি উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করছে। তারা সাধারণ হকারদের আন্দোলনে নামতে ভয়ভীতি দেখাচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু তা-ই নয়, সভা-সমাবেশ থেকে ঢাকা দক্ষিণের মেয়রকে উদ্দেশ করে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে। পুলিশ জানিয়েছে, এসব এলাকার ফুটপাথে চাঁদাবাজিতে জড়িত ১০৬ জনের তালিকা তৈরি হয়েছে। এরা রেজিস্ট্রেশনবিহীন পাঁচটি হকার সংগঠনের নামে দীর্ঘদিন ধরে চাঁদাবাজি করে আসছে। তবে ডিএসসিসি জানিয়েছে, সাধারণের চলাচলের ফুটপাথ যারা দখল করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে হকারদের জন্য চালু করা হয়েছে পাঁচটি হলিডে হকার্স মার্কেট। আরও ১৬টি হলিডে মার্কেট তৈরির কাজ চলছে। একই সঙ্গে হকারদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু হয়ে গেছে। গত রবিবার থেকে গুলিস্তান, দৈনিক বাংলা, মতিঝিল ও পল্টন এলাকায় অবৈধ স্থাপনা ও হকার উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়।

হকার্স সংগঠনের নেতারা জানান, লাইনম্যান নামধারী সন্ত্রাসীরা তাদের চাঁদাবাজি অব্যাহত রাখতে ষড়যন্ত্র ও বিশৃঙ্খলার পথ বেছে নিচ্ছে। তারা নিরীহ হকারদের আন্দোলনে নামতে চাপ দিচ্ছে। কোথাও কোথাও ভয়ভীতিও দেখানো হচ্ছে। ওই নেতারা বলেন, যারা হকার উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করছেন, তারা কোনো অনুমোদিত সংগঠনের নেতা-কর্মী নন। গুলিস্তানের এক হকার জানান, সন্ত্রাসীরা ফুটপাথের নিয়ন্ত্রণ করত। মঙ্গলবার হকার সমন্বয় পরিষদের প্রতিবাদ সভায় হকার নেতা নুরুল ইসলাম তার বক্তব্যে বলেন, গুলিস্তান এলাকায় তালিকাভুক্ত হকারের সংখ্যা ১ হাজার ৬০০। বাকিরা হকার নন। সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজদের অনেকেই হকারদের নাম করে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে সভা-সমাবেশ করার চেষ্টা করছে। তার এ বক্তব্যের সঙ্গে সঙ্গে হকারদের মধ্যে থাকা চাঁদাবাজ চক্রের সদস্যরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা নুরুল ইসলামকে মারধরের চেষ্টা চালায়। হকারদের হস্তক্ষেপে সেযাত্রায় রক্ষা পান নুরুল ইসলাম। ডিএসসিসির কর্মকর্তারা জানান, ভয়াবহ যানজট এড়াতে ফুটপাথ থেকে হকারদের উচ্ছেদের কোনো বিকল্প নেই। হকাররা ফুটপাথ থেকে শুরু করে রাস্তা দখল করে রাখার কারণে যানবাহন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে না। বিভিন্ন সংস্থা এ নিয়ে অনেকবার সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছে। সুপারিশ করেছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বরং এবারই প্রথম, দিনের বেলায় হকারদের ফুটপাথে বসতে না দিয়ে সন্ধ্যার পর বসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে হকারদের পুনর্বাসনের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কাজও শুরু হয়েছে। এর পরও হকারদের উচ্ছেদে বাধা দিচ্ছে কারা এ বিষয়ে তদন্ত করা হচ্ছে।

মতিঝিল ও গুলিস্তান এলাকার বেশ কয়েকজন হকার জানান, গুলিস্তান থেকে হকারদের না তুলতে কয়েকজন প্রভাবশালী নেতা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা মেয়র সাঈদ খোকনকে প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়ে এখন লাইনম্যানদের রাস্তায় নামতে বলছেন। লাইনম্যানরা টাকার বিনিময়ে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে সাধারণ হকারদের রাস্তায় নামতে বাধ্য করছে। এ বিষয়ে একজন হকার নেতা বলেন, মেয়রের সঙ্গে মিটিং করে যারা দিনের বেলায় ফুটপাথে বসবে না বলে কথা দিয়েছিল, তাদের কেউ কেউ বাধ্য হয়ে এখন রাস্তায় নেমে উচ্ছেদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিচ্ছে। বাংলাদেশ হকার্স ফেডারেশনের হিসাবমতে, গুলিস্তান থেকে বায়তুল মোকাররম মসজিদ হয়ে ফুলবাড়িয়া পর্যন্ত রাস্তা ও ফুটপাথে কমপক্ষে সাড়ে চার হাজার দোকান বসে। এসব দোকান থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা তোলে লাইনম্যানরা। মাস শেষে এ টাকার পরিমাণ দাঁড়ায় দেড় কোটি। হকাররা জানান, প্রতিদিন নির্ধারিত চাঁদার টাকা না দিয়ে কেউই ফুটপাথে টিকতে পারে না। মারধর করে তুলে দেওয়াসহ পুলিশ দিয়েও হয়রানি করা হয়। গতকাল গুলিস্তান, জিরো পয়েন্ট, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ফুটপাথগুলো হকারমুক্ত। তারা যেন ফুটপাথে নির্দিষ্ট সময়ের আগে দোকান বসাতে না পারে সে জন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। ১১ জানুয়ারি নগর ভবনে এক বৈঠক শেষে মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দেন, ১৫ জানুয়ারি থেকে সাপ্তাহিক কোনো কর্মদিবসে আর গুলিস্তান ও আশপাশ এলাকায় দিনের বেলায় ফুটপাথে হকার বসতে দেওয়া হবে না। হকাররা দোকান নিয়ে বসতে পারবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার পর। তবে ছুটির দিনে এ নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। এরপর রবি ও সোমবার সিটি করপোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে গুলিস্তান, বায়তুল মোকাররম, দৈনিক বাংলা মোড়, মতিঝিল, দিলকুশা ও পল্টন এলাকায় চালানো হয় হকার উচ্ছেদ অভিযান।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর