মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

দুয়ার খুলেছে ভারত নেপাল ভুটানের হাতছানি চায়নার

মাহমুদ আজহার ও সরকার হায়দার, পঞ্চগড় থেকে

দুয়ার খুলেছে ভারত নেপাল ভুটানের হাতছানি চায়নার

বাংলাদেশের অপার সম্ভাবনার স্থলবন্দর বাংলাবান্ধা। পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া সীমান্তে এই বন্দরে ব্যবসাবাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন খাতে বিপুল রাজস্ব আয়ের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসাবাণিজ্য চলছে। রাজস্ব আয়ও হচ্ছে। ব্যবসাবাণিজ্যের পাশাপাশি এই তিন দেশে চিকিৎসা ও ভ্রমণের জন্য এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করছেন পর্যটকরা। সুযোগ এসেছে এই স্থলবন্দর ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে ব্যবসাবাণিজ্যের সম্প্রসারণ ও সংস্কৃতি আদান-প্রদানের। প্রয়োজন এখন বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের অবকাঠামো উন্নয়নের। জরুরি হয়ে পড়েছে সরকারের বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ গ্রহণের।  ১৯৯৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর নেপালের সঙ্গে এই স্থলবন্দর দিয়ে প্রথম বাণিজ্য কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর ২০১১ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয় ভারতের সঙ্গে আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম। গত ১ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ভুটানের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। ব্যবসায়ীরা প্রত্যাশা করছেন অচিরেই চীনের সঙ্গে এই বন্দর দিয়ে বাণিজ্য কার্যক্রম শুরুর উদ্যোগ গ্রহণ করবে সরকার। স্থলবন্দর সূত্র জানায়, বাংলাবান্ধা থেকে ভারতের শিলিগুড়ির দূরত্ব ১০ কিলোমিটার, নেপালের দূরত্ব ৪০ কিলোমিটার ও ভুটানের দূরত্ব মাত্র ৬০ কিলোমিটার। বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের ইমিগ্রেশনের পর ইতিমধ্যে চার দেশের মধ্যে যাতায়াতের পাশাপাশি ব্যবসাবাণিজ্য চলছে। বাংলাদেশ সরকারও রাজস্ব আয় করছে কোটি কোটি টাকা। এই স্থলবন্দর থেকে চীনের দূরত্ব মাত্র ২০০ কিলোমিটার। ব্যবসায়ীদের আশা, অবকাঠামো উন্নয়ন করে চীনের সঙ্গে যোগসূত্র স্থাপন হলে উভয় দেশই লাভবান হবে। পঞ্চগড় চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আশরাফুল আলম পাটোয়ারী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর খুবই সম্ভাবনাময়। ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে আমাদের যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে। চীন যুক্ত হলে ব্যবসাবাণিজ্য আরও সম্প্রসারিত হবে। তবে পর্যটকরা বেশি না আসার কারণ হলো পরিবহন ব্যবস্থা ভালো নয়। তাদের কাছে আমরা জিম্মি প্রায়। এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ জরুরি। সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দেশের সর্ব উত্তরের এই স্থলবন্দরে এখনো নেই মোবাইল নেটওয়ার্ক। নেই দূরপল্লার পরিবহন ব্যবস্থা। ফলে সম্ভাবনাময় এই স্থলবন্দরটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে পড়তে হচ্ছে অসহনীয় ভোগান্তিতে। পঞ্চগড় মোটর মালিক সমিতির কাছে অনেকটা জিম্মি পর্যটকরা। এ ব্যাপারে প্রশাসনও কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না। এতে হতাশ হয়ে অনেকেই বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। এদিকে মোবাইল নেটওয়ার্ক না পাওয়ায় জন্য অনেককেই প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা এলসিও খুলতে পারছেন না। এ জন্য পঞ্চগড়ে থাকা সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।  এ সময় কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, লাগেজ বহনের নেই কোনো ট্রলি। অসুস্থ রোগীদের জন্য নেই হুইল চেয়ার। আসা যাওয়ার পথে নেই কোনো যাত্রী ছাউনি। বৃষ্টি হলে ভিজেই যাতায়াত করতে হয়। ভালো মানের নেই আবাসিক হোটেল। খাবার রেস্টুরেন্ট নেই বললেই চলে। এ ব্যাপারে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। জানা যায়, গত বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর দিয়ে শুরু হয় পূর্ণাঙ্গ ইমিগ্রেশন কার্যক্রম। ফলে চতুর্দেশীয় ব্যবসাবাণিজ্যের স্বপ্নের দুয়ার খুলে যায়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধলক্ষাধিক যাত্রী এই ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট ব্যবহার করেছেন। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর থেকে ৩৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা ৪৩ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে এ বন্দর দিয়ে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে। স্থলবন্দরটিকে প্রথম শ্রেণির স্থলবন্দর হিসেবে ইমিগ্রেশন কার্যক্রম পুরোদমে চালু হলে রাজস্ব আয় শত কোটি টাকা ছড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সূত্র মতে, বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে এখন সিন্ডিকেট চাঁদাবাজি চলছে। স্থানীয় কিছু চাঁদাবাজ ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি এ স্থলবন্দর। এ কারণে অনেক আমদানি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। অনেকেই অন্য বন্দর দিয়ে ব্যবসাবাণিজ্য করছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কার্যকর উদ্যোগ চান সংশ্লিষ্টরা। বাংলাবান্ধা আমদানি রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী হাসান বাবলা গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দূরপাল্লার পরিবহনের জন্য যাত্রীরা নানা ধরনের সমস্যায় পড়ছেন। সম্প্রতি গ্রামীণফোন টাওয়ার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে। আমদানি রপ্তানি কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ হয়নি। এলসি জটিলতা রয়েছে। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে মোবাইল নেটওয়ার্ক পাওয়া যাবে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর