শিরোনাম
মঙ্গলবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আবারও আলোচনায় কে এম হাসান

রফিকুল ইসলাম রনি

আবারও আলোচনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসান। সার্চ কমিটি গঠনে তার নাম প্রস্তাব নিয়ে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতারা বাগ্যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছেন। ২০০৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগে তাকে নিয়ে প্রথম বিতর্ক শুরু হয়। বিএনপি-জামায়াতের পছন্দের লোক হিসেবে প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতেই বিচারপতিদের তখন বয়স বাড়ানো হয়। ২০০৪ সালে ১৭ মে সংবিধান সংশোধন (চতুর্দশ সংশোধন) করে বিচারপতিদের অবসরের বয়সসীমা পঁয়ষট্টি থেকে সাতষট্টি বছর করা হয়। কিন্তু  আওয়ামী লীগের জোর আপত্তির কারণে বিএনপির পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এবারও বিএনপি কেএম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখতে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম পাঠিয়েছে বলে দাবি আওয়ামী লীগের। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তারা এ নাম প্রস্তাব করেননি। গত রবিবার এক অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, বিএনপি যাকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে চেয়েছিলেন, সেই সাবেক বিচারপতি কে এম হাসানকে সার্চ কমিটিতে রাখতে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাব করেছে। আর বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য সর্বৈব মিথ্যা ও অনভিপ্রেত। এটি একেবারেই ঠিক নয়। বিএনপির চেয়ারপারসন রাষ্ট্রপতির কাছে কোনো নাম দিয়েছেন কি দেননি, তা রাষ্ট্রপতিই বলতে পারবেন। অন্য কেউ নন। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বক্তব্য স্ববিরোধী এমন দাবি করে ওবায়দুল কাদের গতকাল রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আমার বিরুদ্ধে বঙ্গভবনের গোপনীয়তা ভঙ্গের যে অভিযোগ করেছেন, সেটা স্ববিরোধী। তিনি নিজেই বলেছেন, আমরা কার নাম দিয়েছি, সেটা আওয়ামী লীগ নেতারা জানল কী করে? আবার বলেছেন, আমরা কোনো নামই প্রস্তাব করিনি। এটা তার স্ববিরোধী বক্তব্য। মানে হলো ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কলা খাই না। ফখরুলের উদ্দেশে কাদের আরও বলেন, আগে নিজেরা নিজেদের ওপর বিশ্বাস করুন। স্ববিরোধিতা পরিহার করে ইতিবাচক রাজনীতি করুন। গতকাল সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেছেন, বিএনপি রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করে সার্চ সমিটির প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি কেএম হাসানের নাম প্রস্তাব করেছে। এটা জানতে ওবায়দুল কাদেরকে রাষ্ট্রপতির কাছে বা বঙ্গভবনে যেতে হবে না। বিএনপির মধ্যে অনেক নেতাই আছেন যারা এ বিষয়টি তাকে জানিয়েছেন। বিএনপি সাবেক প্রধান বিচারপতি কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেনি বলে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দরকার নিরপেক্ষ, যোগ্য ও সাহসী নির্বাচন কমিশন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈঠকে সার্চ কমিটি গঠনে কে এম হাসানের নাম প্রস্তাব করেনি বিএনপি। অথচ ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমরা ওই নাম প্রস্তাব করেছি। এটা সত্য নয়। বিচারপতি কে এম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করতে তৎকালীন বিএনপি জোট সরকার সংবিধান সংশোধন করায় দেশে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছিল। ওই সংকট কাটাতে ২০০৬ সালের ৫ অক্টোবর শুরু হয়েছিল বিএনপির মহাসচিব আবদুল মান্নান ভুইয়া ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিলের মধ্যে সংলাপ। সংসদ ভবনের কেবিনেট কক্ষে অনুষ্ঠিত ওই সংলাপ চলে সে বছরের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা কে হবেন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন হবে কি না এ দুটি বিষয় ছিল মূল ইস্যু। কে এম হাসান একসময় বিএনপির আন্তর্জাতিক সম্পাদক ছিলেন। আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল সেখানে। আওয়ামী লীগ পথ দেখিয়ে বলেছিল, বিচারপতি হাসান অপারগতা প্রকাশ করলেই সমাধান হয়ে যায়। বিএনপি তাতেও রাজি হয়নি। দুটি মূল ইস্যুসহ আওয়ামী লীগ ওই সংলাপে ৩১ দফা প্রস্তাব দিয়েছিল। সেগুলো নিয়ে মান্নান ও জলিলের মধ্যে বৈঠক হয় ছয়টি। তবে পঞ্চম বৈঠকেই ব্যর্থতার চিত্র স্পষ্ট হয়ে ওঠে। ১৬ অক্টোবরের ওই বৈঠকের পর দুজন জানান, তারা আলোচনার পর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব দুই নেত্রীর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এরপর ২৩ অক্টোবর ষষ্ঠ বৈঠক হলেও সেটি ছিল নিষ্ফল। ঢাকায়  নিযুক্ত তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস সে বছর ২৭ অক্টোবর বিচারপতি হাসানের বাসভবনে দেখা করেন। ফলে ওইদিন বিচারপতি হাসান প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনে অপারগতা প্রকাশ করেন। কিন্তু শুরু হয় নতুন সংকট।

সর্বশেষ খবর