বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
দুই প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য

কোনিওকে গুলি করে জেএমবির মাসুদ

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

কোনিওকে গুলি করে জেএমবির মাসুদ

রংপুরে জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও হত্যা মামলার প্রধান আসামি জেএমবির রংপুরের আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানাকে শনাক্ত করেছেন ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও কোনিওকে বহনকারী রিকশাচালক আবদুল মোন্নাফ এবং ঘটনাস্থলের চা-দোকানি আবদুল্লাহ আল মামুন। গতকাল রংপুরের বিশেষ জজ নরেশ চন্দ্র সরকারের  আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার সময় আবদুল মোন্নাফ ও আবদুল্লাহ আল মামুন মাসুদ রানাকে শনাক্ত করেন বলে আদালতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী রথীশ্চন্দ্র ভৌমিক বাবু সোনা জানিয়েছেন। তিনি সাংবাদিকদের জানান, আদালতে কোনিও হত্যার ঘটনা বর্ণনা করতে গিয়ে আবদুল মোন্নাফ ও আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, রিকশা থামিয়ে কোনিওকে খুব কাছ থেকে গুলি করে জেএমবি মাসুদ রানা। সঙ্গে ছিলেন আরও দুজন। সাক্ষ্য দেওয়ার সময় রিকশাচালক আবদুল মোন্নাফ আদালতের কাঠগড়ায় থাকা আসামি মাসুদ রানাকে দেখিয়ে বলেন, সে-ই কোনিওকে গুলি করে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, ‘আমি প্রতিদিন আমার রিকশায় করে হোশি কোনিওকে তার জাপানি কয়েল ঘাসের খামারে নিয়ে যেতাম। ঘটনার দিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কোনিওকে নিয়ে আলুটারি গ্রামে পাকা রাস্তা থেকে নেমে ঘাসের খামারে যাওয়ার পথে মাসুদ রানাসহ তিনজন রিকশাটি আটক করে। এরপর মাসুদ রানা পিস্তল বের করে কাছ থেকে কোনিওকে লক্ষ্য করে দুটি গুলি করে। কোনিও রিকশা থেকে মাটিতে পড়ে যান। ভয়ে আমি পালিয়ে যাই। দূর থেকে দেখি, আরেকজন কয়েকটি ফাঁকা গুলি করার পর তিনজনে লাল রঙের একটি মোটরসাইকেলে করে হারাগাছের দিকে চলে যায়।’ আরেক প্রত্যক্ষদর্শী আবদুল্লাহ আল মামুনও মাসুদ রানাকে শনাক্ত করে বলেন, ‘আমি সকালেই চা-দোকান খুলি। সকাল আনুমানিক ৯টার দিকে একটি লাল রঙের মোটরসাইকেলে করে তিনজন যুবক আসে। একজন কোনিওর ঘাসের খামারে যাওয়ার সড়কে চলে যায়। মাসুদ রানাসহ অপর দুজন মোটসাইকেলের কাছে মাহীগঞ্জ-হারাগাছ সড়কে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর আবদুল মোন্নাফের রিকশায় আসেন কোনিও। রিকশাটি পাকা সড়ক থেকে কোনিওর ঘাসের খামারে যাওয়ার সড়কে নামার সঙ্গে সঙ্গে অপর দুজন দ্রুত হেঁটে গিয়ে রিকশাটি আটক করে। এরপর কয়েক রাউন্ড গুলির শব্দ শুনতে পাই। তিনজন দ্রুত ছুটে এসে মোটরসাইকেলে উঠে হারাগাছের দিকে চলে যায়। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, কোনিও মাটিতে পড়ে আছেন। স্থানীয়রা অটোরিকশায় করে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।’ আবদুল মোন্নাফ ও আবদুল্লাহ আল মামুন ছাড়াও যে বাড়ির সামনে নিহত হন কোনিও, সেই বাড়িওয়ালার ছেলে মাইদুল ইসলাম মুরাদ, একই এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম ও আরশাদ হোসেনও সাক্ষ্য দেন। আদালতে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে তাদের জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা। আজ বুধবার আরও পাঁচজনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে বলে জানান রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী। ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর সকালে কাউনিয়া উপজেলার সারাই ইউনিয়নের আলুটারি গ্রামে দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হন ৬৬ বছর বয়সী জাপানি নাগরিক হোশি কোনিও।

এ হত্যা মামলায় গত বছর ১০ জুলাই জেএমবির আট সদস্যের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। সাক্ষ্য গ্রহণের সময় কারাগারে থাকা আসামি জেএমবির রংপুর আঞ্চলিক কমান্ডার মাসুদ রানা, সদস্য ইছাহাক আলী, লিটন মিয়া, আবু সাঈদ, সাখাওয়াত হোসেনকে আদালতে হাজির করা হয়। পলাতক আসামিদের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন ওরফে রাহুল ৫ জানুয়ারি রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুর বেড়িবাঁধ এলাকায় কাউন্টার টেররিজম পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ এবং নজরুল ইসলাম ওরফে বাইক নজরুল ওরফে হাসান গত বছরের ২ আগস্ট ভোরে রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হন। আরেক আসামি আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব এখনো পলাতক রয়েছেন। তিনি রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিবন্ধক ইব্রাহীম কবীর বলেন, আহসান উল্লাহ আনসারী ওরফে বিপ্লব গত বছরের জানুয়ারি থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুপস্থিত।

সর্বশেষ খবর