বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা চান এমপিরা

নিজামুল হক বিপুল ও আহমদ সেলিম রেজা

নিরাপত্তা চান এমপিরা

নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্যরা। গাইবান্ধা-১ (সুন্দরগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন হত্যাকাণ্ডের পর বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তাদের নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়ে এবং বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে সংসদের স্পিকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদনও করেছেন। নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করাদের বেশির ভাগই দেশের উত্তরাঞ্চল, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য।

জাতীয় সংসদ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা সংসদ সদস্যদের সূত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধার সংসদ সদস্য লিটন হত্যাকাণ্ডের পর থেকে দেশের অনেক এলাকায় সংসদ সদস্যরা নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। বিশেষ করে জামায়াত অধ্যুষিত এলাকার সংসদ সদস্যরাই বেশি নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছেন। গাইবান্ধা, বগুড়া, নওগাঁ, রাজশাহী, নাটোর, দিনাজপুর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, খুলনা, নড়াইল, সাতক্ষীরার অনেক সংসদ সদস্য ইতিমধ্যে নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে পৃথক আবেদন করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, লিটন হত্যাকাণ্ডের পর ইতিমধ্যে অন্তত জনা দশেক সংসদ সদস্য গানম্যান চেয়ে আবেদন করেছেন। তাদের মধ্যে নড়াইলের আওয়ামী লীগদলীয় সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, নাটোর সদরের সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম শিমুলসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। তবে তাদের এ আবেদনের ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিষয়টি সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের ব্যাপার। তিনি বলেন, গাইবান্ধার একজন সংসদ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের পর সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তার বিষয়টি এখন আলোচনায়। এ ব্যাপারে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্ত পাওয়া গেলেই তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখা হবে।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে সংসদীয় কমিটিগুলোর সভাপতিরা তাদের নিরাপত্তায় একজন গানম্যান পান। তবে সাধারণ সংসদ সদস্যরা এ সুবিধা কখনই পাননি। যদি সরকার সংসদ সদস্যদের সবার নিরাপত্তা দিতে চায় তাহলে জনবলের প্রয়োজন হবে। এ ক্ষেত্রে পুলিশ বিভাগে নতুন জনবল প্রয়োজন হবে। বাড়তি ব্যয়ও বাড়বে। সঙ্গত কারণেই সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তায় গানম্যান নিয়োগ দেওয়ার বিষয়টি সময়সাপেক্ষ এবং উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের বিষয়। এদিকে জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে, বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি স্পিকারকেও জানিয়েছেন। তারা নিজেদের নিরাপত্তা চেয়ে স্পিকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। ওই আবেদনের অনুলিপি কেউ কেউ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়েও জমা দিয়েছেন। গত রবিবার জাতীয় সংসদে নতুন বছরের প্রথম অধিবেশনে শোকপ্রস্তাবের ওপর আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংসদ সদস্য লিটন খুনের ঘটনা বর্ণনা করে ঘাতকদের আইনের আওতায় আনার প্রতিশ্রুতি দেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, দেশবাসী এবং সব সংসদ সদস্য যাতে নিরাপদে থাকেন সেজন্য সাধ্যমতো চেষ্টা করা হবে। এ অধিবেশনে একাধিক সংসদ সদস্য তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি তুলে ধরে সব সংসদ সদস্যকে নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান। জাতীয় সংসদের প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ সংসদ সদস্যদের তাদের নির্বাচনী এলাকায় নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। সূত্র জানায়, সংসদে প্রধানমন্ত্রী এবং প্রধান হুইপের বক্তব্যের পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকা সংসদ সদস্যরা তাদের নিরাপত্তার জন্য স্পিকার ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে লিখিত আবেদন করেছেন। স্পিকারের সঙ্গে দেখা করে কয়েকজন সংসদ সদস্য প্রটেকশন সুবিধা চান। তিনি তাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার পরামর্শ দেন বলে জানা গেছে। এ ছাড়া সংসদের ফ্লোরে প্রথম দিন জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদ বলেন, ‘ আমরা সংসদ সদস্যরা একটা তামাশার বস্তুতে পরিণত হয়েছি। আমাদের (এমপিদের) সব সময় মানুষের মধ্যে থাকতে হয়। আমাদের সঙ্গে দেহরক্ষী থাকে না। আবার অস্ত্রের লাইসেন্সও দেওয়া হয় না। ৩০০ ভিআইপি আছেন। মন্ত্রী কজন আছেন। এমপিরা নেই তাতে। বাকিরা তাহলে কারা? আমাদের সঙ্গে পুলিশ নেই, লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নেই।’ পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘লিটনের নির্বাচনী এলাকার কাঠামোর সঙ্গে আমার এলাকার মিল আছে। লিটন জামায়াত-বিএনপি অধ্যুষিত এলাকার। আমি বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়েছি। সবাই মিলে জীবিত অবস্থায় লিটনকে একজন খারাপ মানুষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা হয়েছে। বিশেষ করে মিডিয়ায়। মাননীয় স্পিকার! আপনি আগামীতে উদ্যোগী হবেন, একজন জনপ্রতিনিধিকেও যেন নিরস্ত্র করা না হয়।’ প্রধান হুইপ আ স ম ফিরোজ বলেন, স্বাধীনতার পরও কিন্তু আওয়ামী লীগের নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। তার বাসায় পুলিশি পাহারা ছিল। কিন্তু নির্বাচনের কথা বলে পুলিশ তুলে নেওয়া হলো। তার অস্ত্র ছিল। কিন্তু তাও সিজ করে নেওয়া হয়েছে। তাই এটি একটি গভীর ষড়যন্ত্র। সংসদ সদস্যদের নিরাপত্তার জন্য সরকারকে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানান তিনি। প্রসঙ্গত, ৩১ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য মনজুরুল ইসলাম লিটন নিজ বাড়িতে খুন হন। ঘাতকরা ঘরে ঢুকে তাকে গুলি করে হত্যা করে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর