বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

বাচ্চা দিয়েছে উটপাখি

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাচ্চা দিয়েছে উটপাখি

মরুভূমি অঞ্চলের উটপাখি দেশে প্রথমবারের মতো বাচ্চা দিয়েছে। গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে ঘটে এমন বিরল ঘটনা। এ পাখি এ দেশের পরিবেশে ডিম পেড়ে বাচ্চা ফোটানোর ঘটনায় উটপাখির বংশ বিস্তারের সম্ভাবনা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশে প্রাকৃতিক পরিবেশে এটিই প্রথম ডিম থেকে উটপাখির বাচ্চা ফোটার ঘটনা। প্রায় দেড় মাস আগে ১৫টি ডিমে পুরুষ ও নারী উটপাখি ‘তা’ দিতে শুরু করে। মায়ের সঙ্গে বাচ্চার ঘুরে বেড়ানোর এ দৃশ্য পার্কের লোকেদের নজরে আসে। একটি বাচ্চা ফুটলেও অন্য ডিমগুলোয় নিয়মিত পালাক্রমে ‘তা’ দিচ্ছে পুরুষ ও নারী উটপাখি। আরও বেশ কয়েকটি বাচ্চা ফুটবে বলে আশা করছে পার্ক কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, ২০১৩ সালের ২১ ও ৩০ জুন আফ্রিকা থেকে ৬টি উটপাখি কেনা হয়। এরই মধ্যে বেশ কয়েকবার ডিম দিলেও বাচ্চা ফোটেনি। প্রথমবার ডিম পাড়ার পরই পার্ক কর্তৃপক্ষ উটপাখির নিয়মিত জীবনযাপনের ওপর নজর রাখে। উন্নত খাদ্য দেওয়ার পাশাপাশি পরিচর্যায় পরিবর্তন আনা হয়। সাফারি পার্কের অ্যানিমল কিপার মাসুদ হাওলাদার জানান, উটপাখি শাক খেতে পছন্দ করে। বিশেষ করে কলমি শাক, পালং শাক, ভুট্টা ভাঙা, পোলট্রি ফিড ও কলা বেশি পছন্দ। উটপাখির বাচ্চা ফুটেছে এমন খবরে দর্শনার্থীরা ভিড় জমিয়েছেন উটপাখির বেষ্টনীর কাছে। এতে বাচ্চাটি মৃত্যুঝুঁকিতে রয়েছে। এখনই এ বেষ্টনী নির্দিষ্ট সময়ের জন্য দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত না রেখে বন্ধ করে দেওয়া দরকার। ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার আনিসুর রহমান জানান, আকারে সবচেয়ে বড় উটপাখি ক্যাটিভে (আবদ্ধ স্থান) অবস্থায় ৬০ বছর বেঁচে থাকে। আর ন্যাচারে (প্রকৃতিতে) বাঁচে ৪০-৪৫ বছর। এদের ওজন হয় ৬৩ থেকে ১৪৫ কেজি। তবে গড়ে পুরুষের ওজন ১১৫ আর নারীর ১০০ কেজি। এরা ঘণ্টায় ৭০ কিমি গতিতে দৌড়াতে পারে। অন্য ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার সারোয়ার হোসেন খান বলেন, ১৬ জানুয়ারি বাচ্চা নিয়ে মায়ের ঘোরাফেরার দৃশ্য প্রথম চোখে পড়ে। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় পাখি হচ্ছে উটপাখি। এদের ডিমও আকারে সবচেয়ে বড় হয়। পুরুষ পাখির শরীর কালো আর লেজ সাদা রঙের হয়। নারী পাখির সারা শরীরই ধূসর বাদামি রঙের। মরু অঞ্চলে এদের বেশি বিচরণ থাকে। সাহারা উত্তর, দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকা অঞ্চলে পাওয়া যায় উটপাখি। আফ্রিকা রেইন ফরেস্ট দক্ষিণাঞ্চল, আরবের বালুময় অঞ্চলেও রয়েছে এদের বাস। সাভানা ফরেস্টে (ঝোপঝাড় অঞ্চল) উটপাখি চলাফেরা করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। লায়ন, লেপার্ড, মুঙ্গোস, বাঘ, শিয়াল এদের প্রধান শত্রু। ন্যাচারে ৫ থেকে ৫০টি পাখি দলবদ্ধ হয়ে বসবাস করে। পুরুষ পাখি বালুময় স্থানে বাসা তৈরি করে। রাতে পুরুষ পাখি আর দিনে নারী পাখি ‘তা’ দেয়। উটপাখি ২ থেকে ৪ বছরে প্রাপ্তবয়স্ক হয়। একটি পাখি ৫ থেকে ১০টি ডিম দেয়। ডিমে ৪০ দিন ‘তা’ দেওয়ার পর বাচ্চা ফোটে। সহকারী বন সংরক্ষক (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) মো. সাহাব উদ্দিন বলেন, আগেও ডিম পেড়েছিল উটপাখি। এবার উপযুক্ত পরিবেশ পেয়ে উটপাখি নিজে ‘তা’ দিয়ে বাচ্চা ফুটিয়েছে। উটপাখির বাচ্চার নিরাপত্তার কারণে পাখির বেষ্টনী ভিজিট সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপদ দূরত্ব থেকে যতটুকু সম্ভব ততটুকু দেখার সুযোগ রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর