শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

বাংলাদেশকে থাই-ভিয়েতনামের পর্যায়ে নিয়ে যেতে চায় জাপান

ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে প্রত্যাশা এক বিনিয়োগ নীতির

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

বিনিয়োগে আগ্রহী জাপান বাংলাদেশকে ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের মতো অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। তবে তাদের শর্ত, বিনিয়োগের প্রচলিত আইন ও নীতি বদলাতে হবে। ভিন্ন ভিন্ন সেবার জন্য তারা ভিন্ন ভিন্ন নীতির মুখোমুখি দাঁড়াতে চায় না। জাপানি বিনিয়োগকারীরা চান, ‘এক বিনিয়োগ নীতি’ যেখানে একই ছাতার নিচে (ওয়ান স্টপ সার্ভিস সেন্টার) সবরকম সুবিধা পাওয়া সম্ভব।

জাপান-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের প্রথম বৈঠকে এ প্রত্যাশা তুলে ধরেছে জেট্রো (জাপান এক্সটার্নাল ট্রেড অর্গানাইজেশন)। গত সেপ্টেম্বরে শিল্প মন্ত্রণালয়ে দুই দেশের ওয়ার্কিং গ্রুপের এ বৈঠকটি হলেও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে এর কার্যবিবরণী পাঠানো হয় গত ২ নভেম্বর। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সংস্থাটির প্রতিনিধি কেই কাওয়ানো ওই বৈঠকে বলেন, ‘এশিয়ার অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের (এফডিআই) হার কম। কিন্তু দেশটির জন্য ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ডের মতো সুযোগ রয়েছে। ওই দুটি দেশ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে নিজেদের অর্থনীতি শক্তিশালী করেছে। আমরা চাই, জাপানি বিনিয়োগে ভিয়েতনাম-থাইল্যান্ডের মতো লাভবান হোক বাংলাদেশ। তবে এ জন্য একটি একক ও বিস্তৃত বিনিয়োগ নীতি দরকার।’ জেট্রোর প্রতিনিধি আরও জানান, পার্শ্ববর্তী ভারতও এখন তাদের বিনিয়োগ নীতি এমনভাবে তৈরি করেছে যাতে একই জায়গা থেকে সব সুবিধা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের উচিত তেমন একটি আলাদা বিনিয়োগ নীতি করা। এ বক্তব্যের জবাবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রতিনিধি নাফিউল হাসান বলেন, সরকার ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস ল’ নিয়ে কাজ করছে। পাশাপাশি বিনিয়োগকারীরা যাতে একই ছাতার নিচ থেকে সব ধরনের সেবা পান- তারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাপান-বাংলাদেশ ওয়ার্কিং গ্রুপের আহ্বায়ক ও শিল্প মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব সুসেন চন্দ্র দাস বলেন, ভারতের বিনিয়োগ নীতি পর্যালোচনা করে সেটির অনুসরণে বাংলাদেশেও বিনিয়োগ সহায়ক উদ্যোগ নেওয়া হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপানি বিনিয়োগকারীদের সুনির্দিষ্টভাবে কী ধরনের সমস্যা হচ্ছে- সে ইস্যুগুলোও তুলে ধরতে বলেন, যাতে করে পরবর্তী সভায় সেগুলোর সমাধানে আলোচনা করা যায়। বৈঠকে ঢাকায় জাপান দূতাবাসের প্রতিনিধি তাকাসি শিমোকিয়োদা দুই দেশের এই ওয়ার্কিং কমিটিতে বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তাদের অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেন। এ ছাড়া বাংলাদেশে জাপানি বিনিয়োগে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলো পরবর্তী বৈঠকে তুলে ধরার কথা বলেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিল্প মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের এপ্রিলে জাপানের রাজধানী টোকিওতে দুই দেশের ‘সরকারি-বেসরকারি অর্থনৈতিক সহায়তা সংলাপ’ অনুষ্ঠিত হয়। ওই সংলাপে উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিরা দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা করেন। টোকিওর ওই সংলাপে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ও শিল্পায়ন নিয়ে তিনটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। যার একটি হচ্ছে ‘ওয়ার্কিং গ্রুপ অন ডাইভারসিফাইড ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন’। এটি হচ্ছে সেই গ্রুপের প্রথম বৈঠকের কার্যবিবরণী। এই বৈঠকে জাপানের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের শিল্প বহুমুখীকরণ এবং বিনিয়োগ সেবার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। কর্মকর্তারা জানান, বিনিয়োগ নীতি নিয়ে জাপান যে প্রস্তাব দিয়েছে আমরা সেটি ইতিবাচকভাবে দেখছি। তাদের বলা হয়েছে, পরবর্তী বৈঠকে (জাপান) যেন সুনির্দিষ্টভাবে বাংলাদেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে তারা যে সমস্যাগুলোর মুখে পড়ে সেগুলো তুলে ধরে। এতে করে ওই সমস্যাগুলো সমাধানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানো যাবে। এ ছাড়া ভারতের যে বিনিয়োগ নীতির কথা তুলে ধরেছে জাপান, সেটিও পর্যালোচনা করে দেখবে বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (বিডা)। এদিকে বাংলাদেশে জাপানের বিনিয়োগ ও বাণিজ্য সম্প্রসারণ বিষয়ে গত সপ্তাহে দেশটির রাষ্ট্রদূত মাসাতো ওয়াতানাবি বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে অনুষ্ঠেয় ওই বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও জাপানি নাগরিকদের নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হয়েছে বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানিয়েছে। এ বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ সুবিধার জন্য জাপানি উদ্যোক্তাদের একটা বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্দিষ্ট করে দেওয়া হবে। তিনি বলেন, জাপানের ২৪০টিরও বেশি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে কাজ করছে। দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি এক বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে। আর জাপান বাংলাদেশে এক দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি করে। দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য দুই দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার এবং প্রতি বছরই তা বাড়ছে।

সর্বশেষ খবর