শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আসছে কোটি কোটি ডলারের বিনিয়োগ, বদলাচ্ছে চট্টগ্রাম

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

বন্দরনগরী চট্টগ্রাম এখন উন্নয়নের মহাসড়কে। চট্টলাকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী করার জন্য হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। কর্ণফুলী নদীতে টানেল, বে-টার্মিনাল, এলএনজি টার্মিনাল, আউটার রিং রোড, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মিরসরাই ও আনোয়ারায় স্পেশাল ইকোনমিক জোন নির্মাণের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে সৃষ্টি হবে লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান। আসবে কোটি কোটি ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ। সংশ্লিষ্টদের দাবি, সব সংস্থার সমন্বয়ে প্রকল্পগুলো পুরোপুরি চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র। চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ সালাম বলেন, ‘শেখ হাসিনার সরকারের আলাদা দৃষ্টি রয়েছে চট্টগ্রামের দিকে। চট্টগ্রামকে সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসেবে গড়ে তুলতে নানা প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এসব প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে পাল্টে যাবে চট্টগ্রাম তথা দেশের অর্থনৈতিক চিত্র।’ পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদ, চট্টগ্রামের সভাপতি ডা. এ কিউ এম সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘বিগত যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি উন্নয়ন হচ্ছে চট্টগ্রামে, যা সত্যিকারের বাণিজ্যিক রাজধানী হওয়ার পূর্বলক্ষণ। কিন্তু বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে এ উন্নয়ন কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। তাই সব সংস্থার সমন্বয় জরুরি।’

জানা যায়, চট্টগ্রামের মিরসরাই ও আনোয়ারা উপজেলায় গড়ে উঠছে বিশেষ অর্থনৈতিক জোন। এ দুই অর্থনৈতিক জোনে গড়ে উঠবে দেশি-বিদেশি প্রায় দুই হাজার শিল্প-কারখানা, যাতে কোটি কোটি ডলার বিদেশি বিনিয়োগ হবে। কর্মসংস্থান হবে ১৫ লাখের অধিক মানুষের। জাতীয় অর্থনীতির ‘পাইপ লাইন’ খ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে বঙ্গোপসাগরের উপকূলে উত্তর হালিশহর এলাকায় হচ্ছে ‘বে-টার্মিনাল’ প্রকল্প। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে একই সময়ে ৩৫টি জাহাজ বার্থিং করা সম্ভব হবে, যা বন্দরের বর্তমান ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ। নদীপথে ঢাকামুখী লাইটার জাহাজ চলাচলে সময় কমবে প্রায় চার ঘণ্টা। চট্টগ্রামকে চীনের সাংহাইয়ের আদলে ‘ওয়ান সিটি টু টাউন’ গড়ে তুলতে নির্মাণ করা হচ্ছে কর্ণফুলী টানেল। এ টানেলের মাধ্যমে কর্ণফুলীর তীরে অবস্থিত বন্দর এলাকা ও আনোয়ারা উপজেলা যুক্ত হবে। আট হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে অর্থনীতি আর বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। আরও সহজতর হবে যোগাযোগব্যবস্থা। গ্যাস সংকট দূর করতে মহেশখালীতে নির্মাণ হচ্ছে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল স্থাপনের কাজ। প্রায় ১ লাখ ৩৮ হাজার ঘন মিটার এলএনজি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন টার্মিনালটি থেকে দৈনিক ৫০০ ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ হবে চট্টগ্রামে। প্রকল্পটি চালু হলে চট্টগ্রামে বাড়বে শিল্প-কারখানার বিনিয়োগ। সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস রোধ, যানজট দূর এবং পর্যটন ও আবাসন খাতে বিনিয়োগ পেতে নির্মাণ চলছে ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটনশিল্পের বিকাশ হবে। বাঁধের ভিতর নগরী-সংলগ্ন অংশে পর্যটন, আবাসন ও বাণিজ্যে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট হবেন বিনিয়োগকারীরা। সরকারের নিজস্ব অর্থায়নে হবে দেশের দ্বিতীয় এবং চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে। নগরীর লালখান বাজার থেকে শাহ আমানত বিমানবন্দর এবং বারিক বিল্ডিং হয়ে কর্ণফুলী শাহ আমানত সেতু পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিশেষ এ উড়ালসড়ক নির্মাণের ফলে চট্টগ্রাম বন্দর, বিমানবন্দর, ইপিজেড এলাকায় যানজট সমস্যার নিরসন হবে।

সর্বশেষ খবর