শনিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
চাপে ট্রাম্প প্রশাসন

জ্যেষ্ঠ কূটনীতিকদের একযোগে পদত্যাগ

প্রতিদিন ডেস্ক

যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ চারজন কূটনীতিকসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা একযোগে পদত্যাগ করেছেন। এর ফলে পররাষ্ট্র দফতরে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। এসব পদে যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া এখন বেশ কঠিন হবে বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। তাদের মতে, এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন নতুন মার্কিন প্রশাসন এক ধরনের চাপে পড়তে পারে। তবে তারা এও মনে করছেন, ক্ষমতার পালাবদলের সময় কূটনীতিকদের পদত্যাগ, স্বপদে বহাল থাকা, বহিষ্কার বা অবসরে যাওয়ার ঘটনা অস্বাভাবিক কিছু নয়। পদত্যাগী ওই চার কূটনীতিক হলেন দফতরের ব্যবস্থাপনাসংক্রান্ত আন্ডার সেক্রেটারি পেট্রিক কেনেডি, দুই সহকারী সেক্রেটারি জয়সি বার ও মিশেল বন্ড এবং জেন্ট্রি স্মিথ। দফতরের আরও যে কজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পদত্যাগ করেছেন তারা সেখানে স্বল্পসময়ের জন্য নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তবে পদত্যাগকারী কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের কেউই তাদের সিদ্ধান্তের পেছনে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ে ট্রাম্পের রীতিবহির্ভূত অবস্থানকে দায়ী করেননি। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বে নতুন মার্কিন প্রশাসন দায়িত্ব নিয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ হলো। নতুন প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে রেক্স টিলারসনের নাম ঘোষণা করা হলেও তার নিয়োগ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। তাই কূটনীতিকদের পদত্যাগে চূড়ান্তভাবে নিয়োগ পাওয়ার আগেই এক ধরনের চাপে পড়েছেন তিনি। গুরুত্বপূর্ণ এ পদগুলো পূরণে চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে তাকে। কূটনীতিকদের পদত্যাগে তাদের শূন্যস্থানগুলো যোগ্য লোক দিয়ে পূরণ করা ট্রাম্প প্রশাসনের জন্য বেশ কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন দেশটির সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরির চিফ অব স্টাফ ডেভিড ওয়েড। তার ভাষায়, ‘একসঙ্গে একই সময়ে এতগুলো কূটনীতিকের পদত্যাগের ঘটনা পররাষ্ট্র দফতরের ইতিহাসে নজিরবিহীন। এ শূন্যতা পূরণ করা সত্যিই কঠিন হবে।’ ক্ষমতার পট পরিবর্তনের সময় এ ঘটনাকে আমেরিকান ফরেন সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশন স্বাভাবিক হিসেবে বর্ণনা করেছে। তবে আমেরিকান ফরেন সার্ভিসের বাইরে ওই পদগুলো পূরণে যোগ্য লোক খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হবে বলেও এক বিবৃতিতে জানায় সংস্থাটি। নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কাজটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যের সঙ্গে করতে পারবেন বলেও বিবৃতিতে আশা প্রকাশ করা হয়। এদিকে, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার রিপাবলিকান পার্টিকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। যুক্তরাষ্ট্র সফরে স্থানীয় সময় বুধবার ফিলাডেলফিয়ায় রিপাবলিকানদের উদ্দেশে এক ভাষণে এ কথা বলেন মে। সেই সঙ্গে পূর্বসূরিদের পথ অনুসরণ করে ইরাক বা আফগানিস্তান যুদ্ধের মতো ভবিষ্যতে অন্য কোনো সার্বভৌম দেশে সামরিক অভিযানের নীতি থেকে বিরত থাকার জন্যও ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। তবে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেশ দুটির হাত গুটিয়ে বসে থাকা ঠিক হবে না বলেও জানান তিনি। পুতিন প্রসঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুতিনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন। তবে সতর্ক থাকুন। এটাই আমার পরামর্শ।’ ট্রাম্পের সঙ্গে হোয়াইট হাউসে আনুষ্ঠানিক সাক্ষাতের আগেই এ মন্তব্য করলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাৎকারী প্রথম নেতা হচ্ছেন তেরেসা। দেশ দুটির মধ্যকার বাণিজ্য সহযোগিতা, উন্নয়ন ও রাশিয়া ইস্যুসহ অনেক বিষয়ে তাদের মধ্যে আলোচনা হওয়ার কথা রয়েছে। স্থানীয় সময় শনিবার ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের মধ্যে ফোনালাপ হওয়ার কথা রয়েছে। ট্রাম্পের প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেওয়ার পর দুই নেতার মধ্যে এই প্রথমবারের মতো কথা হচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সিএনএনকে এ কথা জানিয়েছেন। লক্ষণীয় হলো, ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপ সামনে রেখেই রুশ প্রেসিডেন্টের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিলেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী। তবে ট্রাম্প আগের প্রশাসনের তুলনায় রাশিয়ার সঙ্গে অধিকতর ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার কথা বরাবরই বলে আসছেন। বারাক ওবামার প্রশাসন মেয়াদের একেবারে শেষ দিকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। ট্রাম্প প্রশাসন এ নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ারও আভাস দিয়েছে। তবে বিশ্বব্যাপী সন্ত্রাসবিরোধী লড়াইয়ে ক্রেমলিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহযোগিতা করলেই কেবল তা তুলে নেওয়ার কথা বিবেচনা করা হবে বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, মেক্সিকো সীমান্তে ট্রাম্পের দেয়াল নির্মাণের ইস্যু ঘিরে যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে সম্পর্কের টানাপড়েন শুরু হয়েছে। দেয়াল নির্মাণের খরচ না দিলে মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট এনরিক পেনা নিয়েতোর পূর্বনির্ধারিত যুক্তরাষ্ট্র সফর হওয়ার দরকার নেই বলে ট্রাম্পের প্রশাসন স্পষ্ট জানিয়ে দেয়। ফলে সফর বাতিল করে দেন মেক্সিকোর প্রেসিডেন্ট, কারণ দেয়াল নির্মাণে এক পয়সাও দেওয়া হবে না বলে তিনি এর আগেই এক টুইট বার্তায় জানিয়ে দিয়েছেন। তবে দেয়াল নির্মাণের খরচ মেক্সিকোর কাছ থেকেই আদায়ের ব্যাপারে যেন আটঘাট বেঁধে নেমেছেন ট্রাম্প। তাই এ খরচ জোগাতে মেক্সিকো থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ কর আরোপের কথাও ভাবছেন ট্রাম্প। মেক্সিকো যুক্তরাষ্ট্রের এ পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়ে বলেছে, এ পদক্ষেপে যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের জন্য মেক্সিকান পণ্য আরও বেশি ব্যয়বহুল হয়ে পড়বে এবং এতে শেষ পর্যন্ত দেয়াল তৈরির খরচের বোঝা মূলত তাদের ঘাড়েই চাপবে। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ ইস্যু ও এর খরচ জোগাতে কর আরোপের পরিকল্পনার জেরে মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র সংকট আরও ঘনীভূত হওয়ারই আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এ ব্যাপারে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব সন স্পাইসার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘দেয়াল নির্মাণের খরচ জোগাতে করারোপের প্রস্তাবটি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস আগামী দিনগুলোয় কর সংস্কারের যে পরিকল্পনা করেছে তার অংশ হিসেবেই এ পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে।’ মেক্সিকোর পণ্য আমদানির ওপর ২০ শতাংশ করারোপ করা হলে বছরে প্রায় ১ হাজার কোটি ডলার সংগ্রহ করা যাবে। এতে মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণের খরচ উঠে আসবে বলেও জানান তিনি। ট্রাম্প প্রশাসন জাতিসংঘ ও এর অঙ্গসংগঠন এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থায় যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ প্রদান কমানোরও পরিকল্পনা করছে। এ লক্ষ্যে একটি নির্বাহী আদেশ তৈরি করছে ট্রাম্প প্রশাসন। যেসব সংস্থা নির্ধারিত শর্ত মেনে চলতে ব্যর্থ হবে তাদের বিরুদ্ধেই এ পদক্ষেপ নেবে দেশটি। বিবিসি, সিএনএন, নিউইয়র্ক টাইমস, ওয়াশিংটন পোস্ট।

সর্বশেষ খবর