রবিবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আজ মুদ্রানীতি ঘোষণা

ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর আশা ব্যাংকারদের

আলী রিয়াজ

চলতি অর্থ বছরের ষাণ্মাসিক মুদ্রানীতি ঘোষণা করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। মতিঝিলে ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ে গভর্নর ফজলে কবীর আজ এ মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। ব্যাংকাররা এবার ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আগামী ছয় মাস মুদ্রা ব্যবস্থার ব্যাংকের ঋণ, আমানত প্রবৃদ্ধি নিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিনির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হবে। ব্যাংক ব্যবস্থায় বর্তমানে প্রায় সোয়া লাখ কোটি টাকা অলস অর্থ রয়েছে। এ অর্থের ব্যবহার বাড়াতে সম্প্রসারণমূলক মুদ্রানীতি দেবে এমনটা   আশা করছেন ব্যাংকাররা। গত জুলাই মাসে ঘোষিত সংকোচনমূলক মুদ্রানীতিতে সাড়ে ১৬ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধি ধরা হলেও ব্যাংকগুলো ১৫ শতাংশের বেশি করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ কম। ফলে তফসিলি ব্যাংকগুলোতে বিপুল তারল্য রয়েছে। এই তারল্য ব্যবহারে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে মুদ্রানীতির ভঙ্গি নির্ধারণ করা হবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখাই হবে নতুন মুদ্রানীতির অন্যতম লক্ষ্য। এক্ষেত্রে সরকারের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা যাতে অর্জন করতে পারে সেটি নিশ্চিত করতে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি বাড়ানোর দিকে বিশেষ মনোযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া নতুন মুদ্রানীতিতে কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে সহজ ও স্বল্প সুদে ঋণ পাওয়ার বিষয়টিও নজরদারিতে রাখা হবে। এ ছাড়া ঋণপ্রবাহ অনুৎপাদনশীল খাতে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে ব্যবহার না হয়ে যাতে অভ্যন্তরীণ ও রপ্তানি চাহিদার জন্য উৎপাদনের প্রকৃত প্রয়োজনে ব্যবহার হয়— সেদিকে লক্ষ্য রাখার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক নজরদারি বাড়াবে। খাদ্য নিরাপত্তার স্বার্থে কৃষিঋণ বিতরণে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। গত বছরের জুলাইয়ে ঘোষিত মুদ্রানীতিতে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথমার্ধের (জুলাই-ডিসেম্বর) সাড়ে ১৬ শতাংশ ঋণ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে এই প্রবৃদ্ধি হয়েছে মাত্র ১৫ শতাংশ। ওই সময় বেসরকারি খাতে এই ঋণ প্রবাহ বাড়ানোর কথা বলা হলেও কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংকুলানমুখী মুদ্রানীতির ভঙ্গি নির্ধারণ করে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোকে ঋণ প্রবাহের সঙ্গে আমানতের অনুপাত ও খেলাপি আদায়ের অনুপাত নির্ধারণ করে দেয়। ফলে অধিকাংশ ব্যাংক সেই অনুপাত নির্দিষ্ট রেখে ঋণ দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

তবে চলতি অর্থ বছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতিতে সংকোচন বা সংকুলানমুখী না হয়ে সম্প্রসারণমূলক হবে বলে আশা বেশিরভাগ ব্যাংকারের। জানতে চাইলে মেঘনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, মুদ্রানীতিতে বিনিয়োগ নিশ্চিত করে গ্রাহকদেরও সুবিধা দিতে হবে। দাবির মুখে সুদ হার নির্ধারণ করা উচিত নয়। ব্যবসায়ীদের দাবিতে সুদ হার কমানো হলো। ডিপোজিট সুদ হার চার শতাংশের নিচে নিয়ে আসা হয়েছে। তাতে তাদের ঠকানো হচ্ছে কিনা দেখা উচিত। ব্যাংকগুলো টাকা নিয়ে বসে আছে। তাই এ বিষয়ে নতুন করে নজর দেওয়া উচিত। এ ছাড়া যেহেতু ব্যাংকগুলোর হাতে প্রচুর অর্থ রয়েছে সুদ হারও কম তাই বিদেশি ঋণ কমানো উচিত। এসআইবিএলের সাবেক এমডি শফিকুর রহমান বলেন, ব্যাংকিং খাতে যে পরিমাণ অলস অর্থ আছে সে অনুযায়ী বিনিয়োগ হচ্ছে না। শিল্প উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ খুব কম। আশঙ্কা, অনিশ্চয়তা, খেলাপি সংকটের কারণে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে কিছুটা গতিহীনতা আছে। এটা থেকে বের হতে হলে ঋণ কাঠামোতে পরিবর্তন আনতে হবে। যেহেতু অলস অর্থের পরিমাণ অনেক তাই সম্প্রসারণশীল মুদ্রানীতি দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর