মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কথা বলছে না ফিলিপাইন

রিজার্ভ চুরি

মানিক মুনতাসির

কথা বলছে না ফিলিপাইন

ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ফেরত দেওয়া নিয়ে কোনো কথা বলছে না ফিলিপাইন। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও গণমাধ্যম প্রথম দিকে সরব থাকলেও তিন মাস ধরে এ ব্যাপারে তারা নিশ্চুপ। এমনকি অর্থমন্ত্রীর চিঠিরও জবাব দিচ্ছে না ফিলিপাইন। একইভাবে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বার বার যোগাযোগ করলেও সাড়া দিচ্ছে না ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক। এ অবস্থায় সহায়ক হিসেবে আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগের পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

তবে মামলা না করে কীভাবে টাকা ফেরত আনা যায় সে বিষয়টি নিয়ে ভাবছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ কারণে মামলা ছাড়া আর কী পদক্ষেপ নেওয়া যায় সে ব্যাপারে এশিয়া প্যাসিফিক গ্রুপ (এপিজি) ও আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং কাউন্সিলের (এএমএলসি) সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, আইন মন্ত্রণালয় অর্থমন্ত্রীকে জানিয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভ কিংবা রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) বিরুদ্ধে মামলা করা যেতে পারে। তবে তা হবে দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী এ টাকা ফেরত দিতে আরসিবিসি বাধ্য। এ ক্ষেত্রে ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যেতে অর্থ বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংককে পরামর্শ দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। তবে দু-এক জন আন্তর্জাতিক লবিস্ট নিয়োগ করা যেতে পারে বলেও মত দিয়েছে মন্ত্রণালয়। এ ধরনের সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক লবিস্ট কার্যকর ভূমিকা পালন করে বলে জানানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ বিভাগ সূত্র জানায়, রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের যেসব কর্মকর্তা জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে তাদের ব্যাপারে কী পদক্ষেপ নেওয়া যায়, এ ব্যাপারে আইন মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সহায়তা চেয়েছেন অর্থমন্ত্রী।

রিজার্ভ চুরির ১১ মাস অতিবাহিত হলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১৫ মিলিয়ন ডলার (১২০ কোটি টাকা) ফেরত পাওয়া গেছে। বাকি অর্থ কোথায় তার হদিস মেলেনি এখনো। গত ফেব্রুয়ারিতে ফেড থেকে ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার (প্রায় ৮০০ কোটি টাকা) সরিয়ে নেয় একটি হ্যাকার চক্র। বহু তদন্ত ও শুনানির পর গত বছরের ২০ সেপ্টেম্বর ১৫ মিলিয়ন ডলার বাংলাদেশকে ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেয় ফিলিপাইনের একটি আদালত।

বাংলাদেশ ফিন্যানশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মহাব্যবস্থাপক দেবপ্রসাদ দেবনাথ এ প্রসঙ্গে বলেন, ফিলিপাইনের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে যে অর্থ জমা আছে তা পাওয়া যাবে শিগগিরই। কিন্তু এর জন্য কিছু আইনগত বিষয় রয়েছে। এখন সেগুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বাকি অর্থ ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে ফিলিপাইন কতটা সহযোগিতা করছে— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, তারা যথেষ্ট আন্তরিক। এ ক্ষেত্রে আইনগত বিভিন্ন বাধা রয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ ব্যাপারে বলেন, চুরি হওয়া অর্থ ফেরত আনা সময়সাপেক্ষ। তবে ফিলিপাইন আন্তরিক হলে দ্রুত ফেরত আনা যেতে পারে। ফিলিপাইন কেন্দ্রীয় ব্যাংক আর ফেডারেল রিজার্ভ চাইলে আরসিবিসিকে অর্থ ফেরত দিতে বাধ্য করতে পারে বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক অ্যান্টি মানি লন্ডারিং আইন অনুযায়ী কোনো ব্যক্তি, দেশ বা প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভকে ব্যবহার করে এক ডলার মানি লন্ডারিং করলে তার কাছ থেকে দ্বিগুণ হারে জরিমানা আদায় করা যাবে। তবে তা তদন্ত ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর