মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সুন্দরবনে ভালো নেই ৩০৭ হরিণ-কুমির

প্রতিদিন একটি প্রাণীর জন্য বরাদ্দ ৫ টাকা ৫৩ পয়সা

বাগেরহাট প্রতিনিধি

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একমাত্র প্রজনন কেন্দ্রে ভালো নেই  ৩০৭টি হরিণ ও কুমির। এই কেন্দ্রের প্রাণিকুলের জন্য প্রতি মাসে সরকারি বরাদ্দ রয়েছে মাত্র ৫১ হাজার টাকা। ২৪ ঘণ্টায় একটি প্রাণীর জন্য সরকারি বরাদ্দ মাত্র ৫ টাকা ৫৩ পয়সা। এই অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দের মধ্যেও রয়েছে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের কমিশন বাণিজ্য ও ঠিকাদারের লভ্যাংশ। এমনই অবস্থায় অপুষ্টিতে ভুগছে এই প্রজনন কেন্দ্রের প্রাণীরা। এই কেন্দ্রের প্রাণিকুলের জন্য নেই পর্যাপ্ত ওষুধেরও ব্যবস্থা। এমনকি হরিণ ও লবণ পানির কুমিরগুলো দেখভালের জন্য লোকবল সংকটের পাশাপাশি নেই কোনো প্রশিক্ষিত হরিণ এবং কুমির বিশেষজ্ঞ ও প্রাণী চিকিৎসক। গতকাল দিনভর সরেজমিন করমজল প্রজনন কেন্দ্র ঘুরে কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর এসব তথ্য।  সরকারের পদক্ষেপের অভাবে ইতিমধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ সুন্দরবন থেকে অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়েছে মিঠাপানির প্রজাতির কুমির ও ঘড়িয়ালসহ অনেক প্রজাতির বন্যপ্রাণী। এ অবস্থায় সুন্দরবন থেকে কুমিরের বিলুপ্তি ঠেকাতে সুন্দরবন বিভাগের উদ্যোগে ১৯৯৭ সালে সুন্দরবনের দুবলারচরে জেলেদের জালে একটি কুমির ধরা পড়ার পর থেকেই প্রজননের মাধ্যমে কুমিরের বংশবৃদ্ধির প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। এরপর ২০০২ সালে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একমাত্র হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রটি আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। শুরু হয় প্রজননের মাধ্যমে হরিণ ও কুমিরের বংশবৃদ্ধির কাজ। কুমির বাচ্চা দেয় ২০০৫ ও হরিণ ২০০৭ সালে। এ পর্যন্ত কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ৩১৮টি বাচ্চা জন্ম নিয়েছে। বর্তমানে করমজল হরিণ ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রমিয়েট নামে একটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুটি মা কুমির ও ২৬৩টি বাচ্চা কুমির রয়েছে। এই কেন্দ্রে সদ্য প্রসূত দুই শাবকসহ রয়েছে ৪১টি হরিণ। কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেস্টার মো. তৌহিদুর রহমান জানান, এই কেন্দ্রে মিঠাপানির কুমিরের প্রজননের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বিদ্যমান রয়েছে। অবকাঠামোসহ রয়েছে বিশাল বিশাল মিঠাপানির পুকুর। এখানে এখন এক জোড়া মিঠাপানির কুমির সংগ্রহ করা গেলে আবারও বিলুপ্ত মিঠাপানির কুমিরের বংশবৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। বাগেরহাট পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, এই কেন্দ্রের প্রাণীর খাদ্য বরাদ্দ খুবই অপ্রতুল। এখানে প্রশিক্ষিত কুমির বিশেষজ্ঞ ও বন্যপ্রাণী চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় লোকবল আজও নিয়োগ দেওয়া হয়নি। নেই পর্যাপ্ত ওষুধ বরাদ্দও।

 

সর্বশেষ খবর