মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

শিশুদের জন্য নেই খেলার মাঠ, বেড়ানোর স্থান

শিক্ষাজীবন যেভাবে হয় শুরু ৩

জিন্নাতুন নূর

শিশুদের জন্য নেই খেলার মাঠ, বেড়ানোর স্থান

আয়ান ইকবাল খান, বয়স সাড়ে চার বছর। মিরপুরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের প্লে গ্রুপের শিক্ষার্থী। একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ে এ কিন্ডারগার্টেন। এখানে নেই খেলার মাঠ, খোলা পরিসরে হেঁটে বেড়ানোর কোনো জায়গা। বাধ্য হয়ে আয়ানকে নগরীর অন্য অনেক শিশু শিক্ষার্থীর মতোই স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে কম্পিউটার গেম বা ভিডিও গেম নিয়ে ব্যস্ত হতে হয়। যদিও বিকালে মায়ের কাছে প্রায়ই সে বাসার ছাদে খোলা আকাশের নিচে খেলতে যাওয়ার আবদার করে। কিন্তু ব্যস্ততা ও নিরাপত্তার অভাবে অভিভাবকরা তাকে বাইরে বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ কমই পান। এই বাস্তবতায় আয়ানদের শৈশব ও শিক্ষা জীবন কাটছে আনন্দহীন যান্ত্রিকতায়। এক অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ঢাকার বিভিন্ন এলাকার স্কুল অপর্যাপ্ত পরিসরে তৈরি হওয়ায় এখানে খেলার কোনো মাঠ দূরে থাক, খেলার জায়গাও নেই। আবার নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে যেগুলোর মাঠ ছিল, তার বেশির ভাগই দখল করে নিয়েছেন প্রভাবশালীরা। ফলে স্কুলের মতো স্থানে খেলার মাঠ বা খেলাধুলা-শরীরচর্চা ছাড়াই শিশুরা বেড়ে উঠছে। বঞ্চিত হচ্ছে স্বাভাবিক সুযোগ-সুবিধা থেকে। চিকিৎসকরা বলছেন, খেলাধুলা করতে না পেরে শিশু শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, নগরীর বেসরকারি অনেক স্কুলের খেলার মাঠের জায়গায় নতুন ভবন বা অন্য কোনো অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। আর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মাঠ চলে গেছে প্রভাবশালীদের দখলে। সরকারি স্কুলগুলোর খেলার মাঠগুলোর কোনোটিতে অবকাঠামো নির্মাণের সামগ্রী রাখা, কোনোটিতে হচ্ছে মেলা, উরস, মিলাদ, কনসার্ট, রাজনৈতিক বিভিন্ন কর্মসূচি। মাঠ না থাকায় পাঠ বিরতিতে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হচ্ছে ঝুঁকি নিয়ে রাস্তার ওপর খেলতে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বহু আগে নির্মাণ ও সঠিক নকশা অনুসরণ না করায় অনেক প্রাথমিক বিদ্যালয়েই খেলার মাঠ নেই। বিশেষ করে পুরান ঢাকার অধিকাংশ বিদ্যালয়ে মাঠ নেই। অন্যদিকে সিটি করপোরেশনের অনেক পার্ক বেদখল হয়ে গেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সংরক্ষণের অভাবে অনেক খেলার মাঠ ব্যবহার-অনুপযোগী হয়ে আছে। ফলে ছেলেমেয়েরা এখন বাসার গ্যারেজ ও ছাদে খেলাধুলার চেষ্টা করছে।এসব বিষয়ে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগরীর প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোয় খেলার মাঠ না থাকা শিশুদের জন্য কঠিন এক বাস্তবতা। এ কথা ভেবেই কষ্ট লাগে যে, শিক্ষার্থীরা আনন্দময় পরিবেশের মধ্য দিয়ে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে না। আশঙ্কার বিষয় হচ্ছে, মাঠে খেলার সুযোগ না থাকায় শিশু-কিশোরদের অধিকাংশই বাসায় ফিরে কম্পিউটার-ল্যাপটপ ও মোবাইলে ভিডিও গেমসের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ছে। টিভিতে কার্টুন দেখেই তারা বিকাল পার করছে। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, তারা ভিডিও গেমস বা কার্টুন না দেখে খাবারও খেতে চায় না। ভিডিও গেমসের আসক্তি থেকে শিশুদের চোখের ক্ষতি হচ্ছে। অল্প বয়সেই চশমা নিতে হচ্ছে অনেক শিশুকে। শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, স্কুলের মাঠ দখলের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা ভেবে দখলকৃত জায়গা ছেড়ে দেওয়া উচিত। শিশু একাডেমির চেয়ারম্যান ও কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, শিশুরা সুস্থ বিনোদন পাচ্ছে কিনা, এ বিষয়ে অভিভাবকরা এখনো অসচেতন। শিশুরা যাতে ভিনদেশি কার্টুন, সিরিয়াল ও চলচ্চিত্রে আসক্ত না হয় তা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। শিশু একাডেমি, খেলাঘর ও কচিকাঁচার মেলার মতো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে শিশুদের যুক্ত করতে হবে। একই সঙ্গে শিশুদের মানসিক বিকাশে অভিভাবকদের সাধ্যমতো ঘরের বাইরে দূরে কোথাও নিয়ে যেতে হবে।

সর্বশেষ খবর