সৌদিতে কর্মরত গৃহকর্মীদের সুরক্ষা দিতে দেশটিতে ‘সেফ হাউস’ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে অর্থায়ন করছে বাংলাদেশ সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দ্রুত এ উদ্যোগের বাস্তবায়ন দেখতে চান। পাশাপাশি সৌদি আরবে কর্মরত নারী কর্মীদের নিরাপত্তা ও আইনি সহায়তা প্রদানের জন্য রিয়াদ ও জেদ্দায় একটি করে মোট দুটি সাপোর্ট সেন্টার চালুর লক্ষ্যে পৃথক একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হচ্ছে। এ প্রকল্পও সরকারের অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। দেশটির রাজধানী রিয়াদে প্রস্তাবিত ‘সেফ হাউস’ নির্মাণের লক্ষ্যে সেখানকার বাংলাদেশ দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। উদ্যোগ বাস্তবায়নে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় অর্থ।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় ইস্যু নিয়ে যে আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক হয় সেখানেই সৌদি আরবের নারী কর্মীদের সহায়তার জন্য নেওয়া হয়েছে এসব সিদ্ধান্ত। ওই বৈঠকের কার্যবিবরণী ১৭ নভেম্বর বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
সূত্র জানায়, সৌদিতে সেফ হাউস নির্মাণে রিয়াদে বাংলাদেশ দূতাবাসের চাহিদা অনুযায়ী ৭০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দেশটিতে কর্মরত বাংলাদেশিদের অন্যান্য সমস্যা, বিশেষ করে আর্থিক ও কর্মক্ষেত্রে প্রতারণা, মানব পাচার ও ভিসা বাণিজ্য এবং নির্যাতন প্রতিরোধে দূতাবাস ও প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়কে উদ্যোগ নিতে বলেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়। সৌদি আরবে প্রায় ১৪ লাখ বাংলাদেশি বিভিন্ন পেশায় কর্মরত রয়েছেন। সাত বছর বন্ধ থাকার পর ২০১৫ সালে নারী কর্মী পাঠানোর মধ্য দিয়ে দেশটিতে বাংলাদেশি জনশক্তি রপ্তানির বাজার পুনরায় উন্মুক্ত হয়। তবে এ সুযোগে প্রতারক চক্র গ্রামের দরিদ্র নারীদের অল্প শ্রমে অধিক টাকা আয়ের লোভ দেখিয়ে সৌদিতে পাচার করে দেয়। এদের মধ্যে অনেককে বিক্রি করে দেওয়া হয় দেশটির স্থায়ী বাসিন্দাদের কাছে, যেখানে প্রায় বন্দী অবস্থায় থাকতে হয় গৃহকর্মীদের। অনেক ক্ষেত্রে যৌন নির্যাতনের শিকার হতে হয় তাদের। এর মধ্যে কেউ কেউ ফিরে আসার জন্য চেষ্টা চালান। তবে কাজে যাওয়ার বেলায় টাকা না লাগলেও ফিরে আসার সময় টাকা দাবি করা হয় নির্যাতনের শিকার গৃহকর্মীদের পরিবারের কাছে। ২০১৫ সালে গৃহকর্মী নিয়োগের পর থেকে এ ধরনের অভিযোগ উঠছে হরহামেশা। বিষয়টি নজরে পড়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনারও। এরপর প্রধানমন্ত্রী দ্রুত সৌদিতে কর্মরত গৃহকর্মীদের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তাদের যে কোনো ধরনের নির্যাতন ও প্রতারণা থেকে বাঁচাতে সেফ হাউস নির্মাণ এবং আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য সাপোর্ট সেন্টার প্রতিষ্ঠার নির্দেশনা দেন। সূত্রগুলো জানায়, সৌদি আরবে যাওয়ার ক্ষেত্রে নারী কর্মীদের সব খরচ বহন করে সৌদি নিয়োগকারী সংস্থা। নারীদের আকৃষ্ট করতে সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিনা খরচে এক মাসের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। নারী কর্মীদের বিদেশে পাঠানোর আগে স্বল্প খরচে বাংলাদেশে সরকারি ২৬টি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আরবি ভাষা, গৃহস্থালি কাজকর্ম এবং সৌদি নিয়মকানুন শেখানো হয়। বাস্তবতা হচ্ছে, এত সব সুযোগ-সুবিধার পরও দেশটিতে নারী গৃহকর্মী যাওয়ার হার কমছে। যারা গেছেন তারাও ফিরে এসে বিভিন্ন ধরনের নির্যাতনের অভিযোগ তুলছেন। সৌদি আরবে বাংলাদেশি নারী গৃহকর্মীদের নিয়োগ নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সৌদি সরকার দুই লাখের বেশি নারী কর্মীর চাহিদা জানালে বাংলাদেশ থেকে মাসে ১০ হাজার পাঠানোর কথা বলা হয়।অথচ ২০১৫ সালের হিসাবে মাত্র ২০ হাজার ৯৫২ জন নারী সৌদি আরবে গেছেন। সৌদি সরকার বাংলাদেশকে জানিয়েছে, তাদের পক্ষে এখন দুই লাখ নারীর জন্য ভিসা প্রস্তুত রয়েছে। কিন্তু গৃহকর্মী হিসেবে বাংলাদেশি নারীদের সৌদি আরবে যাওয়ার আগ্রহ খুবই কম। চুক্তির এক বছরে চাহিদার ১০ ভাগের এক ভাগ নারী বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে গেছেন। কাজ করতে যাওয়ার অল্প দিনের মধ্যে আবার নারীদের ফিরে আসার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে।