বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

পোশাকশ্রমিকদের নিয়ে বিজিএমইএর ‘মায়াকান্না’

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৈরি পোশাকশিল্পে মজুরি বাড়ানোর দাবিতে সম্প্রতি আশুলিয়ার অসন্তোষ ঘিরে শত শত পোশাকশ্রমিক ছাঁটাইয়ের পর এবার তাদের নিয়ে ‘মায়াকান্না’ করছে বিজিএমইএ। সংগঠনটির সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেছেন, ‘মাঝে মাঝে মনে হয় ব্যবসা ছেড়ে দিই। কিন্তু যখন অসহায় শ্রমিক ভাই-বোনদের চেহারা মুখের সামনে ভেসে ওঠে, তখন আবার উদ্যমী হয়ে ব্যবসায় ঝাঁপিয়ে পড়ি।’ রাজধানীর কারওয়ান বাজারে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) ভবনে গতকাল আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন সিদ্দিকুর রহমান। এতে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিজিএমইএ সহ-সভাপতি এস এম মান্নান কচি ও মোহাম্মদ নাসির। সংবাদ সম্মেলনের প্রশ্নোত্তর পর্বে আশুলিয়ার অসন্তোষে শ্রমিক     গ্রেফতার প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘১১ ডিসেম্বর প্রথমে একটি কারখানা বন্ধ হয়। তখন আমরা সরকারের কাছে শিল্পের নিরাপত্তা চাই। সেই নিরাপত্তা দিতে গিয়ে সরকার যদি দেখে, কেউ কেউ এর পেছনে ইন্ধনদাতা আছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতেই পারেন। তবে কোনো শ্রমিককে ছাঁটাই করা হয়নি। শ্রমিকরা নিয়মবহির্ভূত কর্মবিরতি পালন করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘ইন্ধনদাতা যদি না থাকে, তাহলে সরকার গ্রেফতার করল কেন? আমার কোনো ইন্টিলিজেন্স বাহিনী নেই। সরকারের ইন্টিলিজেন্স বাহিনী আছে। বিভিন্ন তথ্য পাওয়ার যন্ত্র সরকারের আছে। সেই যন্ত্র ব্যবহার করে যারা ইন্ধনদাতা তাদের ধরেছে সরকার। নিশ্চয়ই ইন্ধনদাতা আছে, তা না হলে গ্রেফতার করবে কেন?’ শ্রমিকরা বলছেন, ‘মালিকরা অবৈধভাবে কারখানা বন্ধ করেছিলেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্প করেছে চালানোর জন্য। অবৈধভাবে কারখানা কেউ বন্ধ করে না। এখন নিরীহ শ্রমিক যারা, আইন সম্পর্কে জ্ঞান নেই, তারা কী বলল এটা নিয়ে আমি তাদের দোষ দিই না।’ আশুলিয়ার ঘটনা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সংস্থার দেওয়া চিঠি প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘ক্রেতারা আমাদের অংশীদার। তারা ভালো করত, যদি প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি না দিয়ে আমাদের চিঠি দিত।’ শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে প্রচলিত আইন আছে, আইন অনুযায়ী যখন বেতন বাড়ানোর সময় হবে তখন বাড়বে। পোশাকশিল্প মালিকদের রপ্তানি আয় বিদেশে রাখা প্রসঙ্গে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘ঢালাওভাবে অভিযোগ না করে যে লোক অসৎ কাজের সঙ্গে জড়িত তাকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে আইনের আওতায় নেওয়ার জন্য আমরা বহুবার অনুরোধ করেছি। আবারও অনুরোধ করছি।’ পোশাকশিল্প মালিকদের বন্ড সুবিধার অপব্যবহার করে অর্থ পাচার করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি ঢালাওভাবে মন্তব্য না করার জন্য অনুরোধ করেছি। আমি অনুরোধ করছি, অসৎ কাজের সঙ্গে যারা লিপ্ত তাদের আইনের আওতায় আনুন। যাদের কারখানা নেই, তারা বিজিএমইএ থেকে ইউডি বা ইউপি নেন না।’ লিখিত বক্তব্য পাঠের সময় আকুতি জানিয়ে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘তরুণ ও উদ্যমী শ্রমিক ভাই-বোনদের অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধাবী উদ্যোক্তা, সরকারের নীতি-সহায়তা আর গণমাধ্যমের সহযোগিতায় পোশাকশিল্প তিলে তিলে গড়ে উঠেছে। সবার কাছে অনুরোধ, এ শিল্পকে বাঁচান দেশের জন্য, মানুষের জন্য।’

সর্বশেষ খবর