শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

সুন্দরবনে কুমির চুরি

বাগেরহাট প্রতিনিধি

সুন্দরবনে কুমির চুরি

বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকারিভাবে বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে একমাত্র বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি কুমিরের বাচ্চা চুরি হয়েছে। কুমির পাচারের ঘটনায় করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি কুমিরের মধ্যে চুরি হওয়ার পর এখন ২৩৪টি কুমির রয়েছে। এদিকে ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্র্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি। পাচার হওয়ার পর বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে একটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুটি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে। সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামান জানান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে ৪৩ কুমিরের বাচ্চা চুরি হয়ে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দুটি প্যানে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণনা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তা বিষয়টি জানানোর পর ওই দিন দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনে বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। গঠিত তদন্ত কর্মকর্তা চাঁদপাই রেঞ্জের এসিএফ মো. মেহেদীজ্জামান আরও বলেন, কোনো হিংস  প্রাণীভোগী প্রাণী যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করত কিংবা খেয়ে ফেলত তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর বয়সী এই কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি হয়েছে। চীন- মিয়ানমার-লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের গোল্ডেন ট্রাংগল নামের আন্তর্জাতিক চোরাই বাজারে কুমিরের বাচ্চার চড়া মূল্য থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই পাচার কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের সম্পদ চুরির পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এটা ছোট করে দেখার কারণ নেই। কুমিরগুলো উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চপর্যায়ে কমিটি করে গঠন করে এর সঙ্গে যে সব গডফাদার জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। নিলে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসবে। সুুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, ১ ফেব্রুয়ারি সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাওয়ার বিষয়টি জানতে পেয়ে আমি ওইদিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িত বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রে বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর