শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস

প্রতিদিন ক্যান্সারে ৪১০ জনের মৃত্যু

সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে ধূমপায়ীরা বাল্যবিবাহের কারণে বাড়ছে জরায়ু ক্যান্সার

জয়শ্রী ভাদুড়ী

প্রতিবছর আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা। ফুসফুস, জরায়ু, মুখগহ্বর, রক্তনালি, স্তন ক্যান্সারসহ মানুষের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে বাসা বাঁধছে এই মরণব্যাধি।

প্রতিদিন বাংলাদেশে গড়ে প্রায় ৪১০ জন মারা যাচ্ছে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে। ক্রমেই এ সংখ্যা বাড়ছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ক্যান্সার আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছেন ধূমপায়ীরা। আর বাল্যবিবাহের কারণে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ু ক্যান্সারে। এমনই এক পরিস্থিতিতে ‘আমরাই পারি আমিও পারি’ স্লোগান নিয়ে আজ বিশ্ব ক্যান্সার দিবস পালন করছে বাংলাদেশ।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞরা জানান, অবহেলা আর কুসংস্কারের কারণে প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করান না রোগীরা। ফলে ক্যান্সারে মৃত্যু অবধারিত বলে বিবেচিত হয়। প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা করানো গেলে প্রায় ৫০ শতাংশ রোগীকে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্যানুযায়ী, দেশে প্রতিবছর দুই লাখ ৫০ হাজার মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় আর এর কারণে মৃত্যুবরণ করে ১ লাখ ৫০ হাজার। এর মধ্যে ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা সর্বোচ্চ বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। তাদের মতে, ধূমপায়ীরা রয়েছেন সর্বোচ্চ মৃত্যুঝুঁকিতে। নারী রোগীদের মধ্যে ২৬ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছেন জরায়ু ক্যান্সারে। জরায়ু ক্যান্সারের কারণ হিসেবে বাল্যবিবাহকে দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। ক্যান্সার-ঝুঁকি বাড়ার জন্য ছয়টি কারণকে দায়ী করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, ধূমপায়ী ব্যক্তিরা সবচেয়ে বেশি ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকেন। তাদের ফুসফুস ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা সবচেয়ে বেশি। যারা অ্যালকোহল পান করেন তারা অনেক বেশি ক্যান্সার-ঝুঁকিতে থাকেন। এ ছাড়া কৃষিক্ষেত্রে ফসলে অতিরিক্ত পরিমাণ কীটনাশক মিশে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করছে। শুধু তা-ই নয়, অতিরিক্ত ফাস্টফুড বা জাঙ্কফুড খেলেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে ক্যান্সারে। আর বর্তমান নাগরিক জীবনে খেলাধুলা বা শারীরিক কসরতের ক্ষেত্র কমে গেছে। শারীরিক অনুশীলন না করাও প্রভাবিত করে ক্যান্সারকে। বায়ুদূষণকে ক্যান্সার বিস্তারের আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। বায়ুদূষণ, বিশেষ করে বাতাসে সিসার মাত্রা বৃদ্ধি ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে বলে মতামত দেন তারা। ক্যান্সারের কারণ হিসেবে এ্যাপোলো হাসপাতালের অ্যাডাল্ট হেমাটোলজি অ্যান্ড হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল ট্রান্সপ্ল্যান্ট কন্সালটেন্ট ডা. আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, ক্যান্সার কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়। আবার কোনো নির্দিষ্ট ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া এ রোগের জন্য দায়ী তাও নয়। নিয়মমাফিক জীবনযাপন এবং প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা নিলে ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

‘সাউথ এশিয়ান জার্নাল অব ক্যান্সার’-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে মোট ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীর ৬০ শতাংশই পুরুষ। পুরুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি, অর্থাত্ ১৩ শতাংশই আক্রান্ত হচ্ছে ফুসফুসের ক্যান্সারে। অন্যদিকে লিপ অ্যান্ড ওরাল ক্যান্সারে ১২ ও অন্ননালির ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে ৮ দশমিক ২ শতাংশ। এ ছাড়া আছে পাকস্থলি, হজকিন লিমফোমা, নন-হজকিন লিমফোমা, মূত্রনালি, লিভার ও লিউকোমিয়া ক্যান্সার। অন্যদিকে ৩৩ শতাংশ নারীই ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছেন। এ ছাড়া জরায়ু ক্যান্সারে ২৬ শতাংশ ও লিপ অ্যান্ড ওরাল ক্যান্সারে নারী আক্রান্ত হচ্ছেন প্রায় ৭ শতাংশ।

কিন্তু বিশাল এই জনগোষ্ঠীর চিকিৎসার যেমন অভাব রয়েছে, তেমনই আধুনিক যন্ত্রপাতি আর বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও নার্স অপ্রতুল। ডব্লিউএইচওর তথ্য মতে, ১৬ কোটি মানুষের ক্যান্সার শনাক্তকরণে প্রয়োজন ১৬০টি রেডিওথেরাপি মেশিন ও প্রয়োজনীয় দক্ষ জনবল। অথচ মহাখালীর ক্যান্সার ইনস্টিটিউট ও ঢাকা মেডিকেলসহ মাত্র কয়েকটি বিভাগীয় শহর ছাড়া রেডিওথেরাপি চিকিৎসার মেশিনই নেই! ক্যান্সার চিকিৎসাব্যবস্থার এই বেহাল দশা দেখে অনেক রোগী সঠিক চিকিৎসাসেবা নিতে পাড়ি জমাচ্ছেন পাশের দেশ ভারত বা সম্ভব হলে বিশ্বের অন্যান্য দেশে। এ ব্যাপারে জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের অনকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. পারভিন শাহিদা আক্তার বলেন, ‘বাংলাদেশের চিকিৎসাব্যবস্থায় দক্ষ জনবল যোগ করতে কাজ করছি আমরা। তবে রোগীদের মধ্যে সচেতনতা সবচেয়ে বেশি জরুরি। তিন সপ্তাহের বেশি কাশি হলে যে ডাক্তার দেখানো বাধ্যতামূলক, তা দেশের অধিকাংশ মানুষই জানে না। এ জন্য ক্যান্সার শনাক্ত এবং সঠিক চিকিৎসা প্রদানে রোগীদের কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা জরুরি।’

 

সর্বশেষ খবর