শনিবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে নাকাল নগরবাসী

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

বেওয়ারিশ কুকুরের উৎপাতে অতিষ্ঠ ঢাকাবাসী। পাড়া-মহল্লাসহ বিভিন্ন অলিগলিতে হামেশাই দেখা মিলছে কুকুরের। সংঘবদ্ধ কুকুর দলের চিৎকার আর চেঁচামেচিতে অনেকেরই রাতের ঘুম হারাম হয়ে যাচ্ছে। কুকুরের উৎপাতে বিশেষ করে নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি ভুক্তভোগী। স্কুলগামী শিশুরা নির্বিঘ্নে পথ চলতে ভয় পায়। নগরীর বিভিন্ন এলাকা সরেজমিনে ঘুরে কুকুরের উৎপাত দেখা গেছে। নগরবাসী চায় কুকুরের উপদ্রবমুক্ত স্বস্তির জীবন। এদিকে কুকুরের উপদ্রব রোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) একটি বিশেষ প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এর আওতায় ইতিমধ্যে ৪০০ মাদী কুকুরকে বন্ধ্যা করা হয়েছে। আর ৪০০ কুকুরকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করা হয়েছে। চলতি বছরও এ ক্ষেত্রে ডিএসসিসি বরাদ্দ রেখেছে আড়াই কোটি টাকার বেশি।

ঢাক দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. শেখ সালাহউদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নগরবাসীকে চাইলেও সহসাই কুকুরের উৎপাত থেকে রেহাই দিতে পারছে না সিটি করপোরেশন। কারণ কুকুর নিধনের ক্ষমতা তাদের হাতে নেই। তবে উচ্চ আদালত এ বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারির পর কুকুর নিধন না করে বন্ধ্যত্বকরণের উদ্যোগটা আরও জোরালো করা হয়েছে। তিনি বলেন, এর আগে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে একটি কোম্পানিকে দায়িত্ব দেওয়া হলেও কোনো ফল আসেনি। তাই এবার ডিএসসিসি নিজ উদ্যোগে একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে। পর্যায়ক্রমে নগরীর সব কুকুরকেই এ প্রকল্পের আওতায় আনা হবে। জানা গেছে, পথেঘাটে কুকুরের হামলায় আক্রান্ত মানুষের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। রাজধানী ও এর আশপাশে যত মানুষকে কুকুরে কামড়ায়, তাদের বড় অংশটি মহাখালীর জাতীয় সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। এ হাসপাতালের তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে কুকুরের কামড় খেয়ে ঢাকায় অন্তত ২০-২৫ হাজার মানুষ চিকিৎসা নিয়েছেন। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত হওয়ার এ পরিসংখ্যান আগের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে এদের মাধ্যমে মানবদেহে ছড়াচ্ছে র‍্যাবিস, টক্সো পাজমোসিস ও কালাজ্বরের মতো ভয়াবহ রোগের জীবাণু। আর এ পরিস্থিতির জন্য বাসিন্দারা দায়ী করেছেন ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনকে।

ডিএসসিসির স্বাস্থ্য বিভাগ জানায়, তারা বেওয়ারিশ কুকুরের বংশ বিস্তার ঠেকাতে নতুন উদ্যোগ নিয়েছে। এতে হয়তো কুকুর নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে। তবে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আনতে জনবল বৃদ্ধি, পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ এবং যারা এসব কুকুরের বংশ বিস্তার রোধে কাজ করবে তাদের বিদেশ থেকে উন্নত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যথায় কুকুর নিয়ন্ত্রণে পুরোপুরি সফলতা আসবে না। অন্যদিকে ২০১২ সালে উচ্চ আদালত কুকুর নিধনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারির পর ওই বছরের মার্চে ‘অভয়ারণ্য’ নামে ওই বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) সঙ্গে চুক্তি করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন। ওই বছর ১ এপ্রিল তারা কার্যক্রম শুরু করে। চুক্তি অনুযায়ী কুকুরের বংশ বিস্তার রোধে পদক্ষেপ না নেওয়ায় পরবর্তীতে ওই এনজিওটিকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় সিটি করপোরেশন।

 

সর্বশেষ খবর