বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ রুখে দাঁড়ান

ডিএসসিএসসি কোর্সের সমাপনীতে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গিবাদ রুখে দাঁড়ান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল মিরপুর সেনানিবাসে ডিএসসিএসসি কোর্সের গ্র্যাজুয়েশন সেরিমনি অনুষ্ঠানে কেক কাটেন —বাংলাদেশ প্রতিদিন

জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি সবাইকে যার যার অবস্থান থেকে উদে?্যাগী ভূমিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদকে বিশ্বের একটি নতুন ‘সংকট’ হিসেবে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার এ সংকট মোকাবিলায় জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছে, সশস্ত্র বাহিনীও এ ব্যাপারে যথেষ্ট পারদর্শিতা অর্জন করেছে। সবাইকে স্ব স্ব জায়গা থেকে স্ব স্ব ভূমিকা রাখতে হবে, যাতে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে ছেলেমেয়েরা সংশ্লিষ্ট না হয়। গতকাল রাজধানীর মিরপুর সেনানিবাসের সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজ (ডিএসসিএসসি)-এর ‘ডিএসসিএসসি ২০১৬-১৭’ কোর্সের সমাপনী ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী এ আহ্বান জানান। স্টাফ কলেজের ‘শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের’ এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সফলভাবে কোর্স সম্পন্নকারী অফিসারদের মধ্যে গ্র্যাজুয়েশন সনদপত্র (পিএসসি) বিতরণ করেন। এবার বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১৫৮, নৌবাহিনীর ২৭ ও বিমানবাহিনীর ২৪ এবং চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লাইবেরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, ফিলিপাইন, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, সৌদি আরব, সিয়েরা লিওন, দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, উগান্ডা, যুক্তরাষ্ট্র ও জাম্বিয়ার ৭১— এই মোট ২৮০ জন অফিসার এ কোর্সে অংশ নেন। তাদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দীর্ঘ ১০ মাস অক্লান্ত পরিশ্রমের পর আজ তোমাদের পূর্ণতাপ্রাপ্তি ও আনন্দের দিন। আমাদের এই স্টাফ কলেজ দেশের সীমানা ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও অনন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে, এজন্য আমরা অত্যন্ত গর্বিত। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, শুরু থেকে এ পর্যন্ত স্টাফ কলেজে সেনাবাহিনীর ৪১, নৌবাহিনীর ৩৫ ও বিমানবাহিনীর ৩৭টি স্টাফ কোর্স শেষ হয়েছে। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর ৩ হাজার ৫৩৪ জন অফিসার ও ৪০টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৯৯৮ জন অফিসার স্টাফ কোর্স (পিএসসি) সম্পন্ন করেছেন। এ বছর ১৪ জন নারী অফিসার গ্র্যাজুয়েট হওয়ায় আনন্দ প্রকাশ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রতি বছর নারী অফিসারদের সংখ্যা বাড়ছে, যা সশস্ত্র বাহিনী তথা বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়নের দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা চাই বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শান্তিপূর্ণ দেশ হবে। অসাম্প্রদায়িক চেতনার উন্নত ও শান্তিপূর্ণ দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়, এমন কিছু ঘটুক তা কখনই কাম্য নয়।’ অবকাঠামো নির্মাণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাসহ দেশের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সশস্ত্র বাহিনী অসামরিক প্রশাসনকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে আসায় সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্যকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. সাইফুল আবেদীন। পরে প্রধানমন্ত্রী গ্র্যাজুয়েটদের সঙ্গে ছবি তোলেন এবং কেক কাটেন। অনুষ্ঠানে মন্ত্রীবর্গ, সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন আহমেদ, বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের পিএসওসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

শিল্পায়নের জন্য মূলধন ও সুদের ওপর ভর্তুকি দিচ্ছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা, সুযোগ-সুবিধা ও ছাড় দিচ্ছে। দেশে গতিশীল শিল্পায়ন ও টেকসই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে মূলধনী বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি এবং চলতি মূলধনের সুদের ওপর ভর্তুকি প্রদান করা হচ্ছে।

জাতীয় সংসদের গতকাল টেবিলে উত্থাপিত প্রধানমন্ত্রীর প্রশ্নোত্তর পর্বে মৌলভীবাজার-২ আসনের মো. আবদুল মতিনের প্রশ্নের জবাবে এসব তথ্য তুলে ধরেন তিনি।

মামুনুর রশিদ কিরণের (নোয়াখালী-৩) প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই পারবে বাংলাদেশকে ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে।

সামশুল হক চৌধুরীর (চট্টগ্রাম-১২) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অভ্যন্তরীণ ও বৈশ্বিক সব বাধাবিপত্তি অতিক্রম করে বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের মহাসড়কে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নের সর্বজনীন মডেল। দ্রুত সময়ের মধ্যে দারিদ্র্য হ্রাসে বাংলাদেশের সাফল্যকে বিশ্বব্যাংক মডেল হিসেবে বিশ্বব্যাপী উপস্থাপন করছে। অর্থনীতি ও সামাজিক সূচকের অধিকাংশ ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার এবং নিম্ন-আয়ের দেশগুলোকে ছাড়িয়ে গেছে।

সেলিনা বেগমের (মহিলা আসন-৬) এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম দুর্যোগপ্রবণ দেশ। উন্নত দেশগুলোয় মাত্রাতিরিক্ত শিল্পায়নের কারণে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পেয়ে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটছে। এজন্য আমরা দায়ী না হয়েও মারাত্মকভাবে এ দুর্যোগের শিকার। তার পরও দুর্যোগ মোকাবিলায় গৃহীত কার্যক্রম ও জনসাধারণের অংশগ্রহণমূলক সংস্কৃতি সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে।

সর্বশেষ খবর