শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ নির্মূলে সহযোগিতা করুন

আলেম ওলামাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী

প্রতিদিন ডেস্ক

জঙ্গিবাদ নির্মূলে সহযোগিতা করুন

ইমাম সম্মেলন ও জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতার বিজয়ীদের মধ্যে সনদপত্র, ক্রেস্ট ও মেডেল বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ উচ্ছেদ করে দেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের ধারা বজায় রাখতে ইসলামী চিন্তাবিদদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত জাতীয় ইমাম সম্মেলন উদ্বোধনের সময় তিনি এ আহ্বান জানান। একই অনুষ্ঠানে শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে সনদ ও পুরস্কার বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। প্রধান অতিথির ভাষণে আলেমদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনাদের কথা মানুষ শুনবে, আপনাদের কথা মানুষ নেবে। আমরা চাই, আপনারা যদি মানুষকে ভালোভাবে বোঝান তাহলেই আমরা এ দেশ থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ চিরতরে দূর করতে পারব। সে বিশ্বাস আমার আছে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের দিনে বড় একটি সমস্যা মাদকাসক্তি আর অপরটি সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ। এদের হাত থেকে আমাদের শিশুদের, যুবসমাজ তথা দেশবাসীকে রক্ষা করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করছে। গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। কিন্তু সব থেকে বড় শক্তি মানুষের শক্তি। মানুষের ভিতর যদি সচেতনতা থাকে, মানুষ যদি রুখে দাঁড়ায়, তাহলে এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দেশ থেকে চিরতরে দূর হবে।’ শেখ হাসিনা জঙ্গিবাদকে বৈশ্বিক সমস্যা আখ্যায়িত করে বলেন, ‘আমরা সমগ্র বিশ্বকে দেখাতে চাই, বাংলাদেশই পারবে শান্তি প্রতিষ্ঠা করে সত্যিকার ইসলাম ধর্মের মূল মর্মবাণী মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে, মানুষ যেন সুখে-শান্তিতে বাস করতে পারে তা নিশ্চিত করতে। আর তা বাংলাদেশই করতে পারবে।’ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এবং ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. বজলুল হক হারুন। স্বাগত বক্তব্য দেন ধর্ম সচিব মো. আবদুল জলিল। এ ছাড়া বক্তব্য রাখেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামিম মো. আফজাল এবং ইমাম ও ওলামায়ে কেরামদের পক্ষে মাওলানা ওবায়দুল্লাহ এরশাদ। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২০১৫-১৬ এই দুই বছরের ছয়জন শ্রেষ্ঠ ইমাম এবং ২০১৪-১৫ সালে ইসলামিক ফাউন্ডেশন আয়োজিত দেশব্যাপী শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার ও সনদ বিতরণ করেন। ইমাম-ওলামায়ে মাশায়েখদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আপনাদের কাছে আমার আবেদন রয়েছে—ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দের ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এটা তো কোরআন শরিফে বলাই আছে। সূরা কাফেরুনে বলা হয়েছে—লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন। নিজের ধর্ম যেমন পালন করতে বলা হয়েছে, তেমনি অন্য ধর্মের প্রতিও সম্মান দেখাতে বলা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমার খুব দুঃখ হয়, যখন দেখি এই ইসলাম ধর্মের নাম করে মানুষকে হত্যা করা হয়। যদি আরেকটু খোলামেলা বলি, মুসলিম অধ্যুষিত যে দেশগুলো, সেখানেই মারামারি, সেখানেই কাটাকাটি, সেখানেই আজ খুন-খারাপি হচ্ছে। সেখানেই অস্ত্রের ব্যবহার হচ্ছে। কিন্তু এ অস্ত্র তৈরি করে কারা? আর লাভবান হয় কারা? রণক্ষেত্র বানাচ্ছে আমাদের মুসলমানদের জায়গাগুলো। রক্ত যাচ্ছে মুসলমানদের। এই অস্ত্র তৈরি করে, অস্ত্র বিক্রি করে কারা লাভবান হচ্ছে, সেটাই আপনারা একটু চিন্তা করে দেখবেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের একটাই নিয়ত, দেশের মানুষের কল্যাণ করা, মঙ্গল করা, তাদের উন্নত জীবন দেওয়া, তাদের জীবনের সেই চাহিদাগুলো—অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করে দেওয়া। দেশে চলমান উন্নতির ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে হলে শান্তি প্রয়োজন। আর জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস দমন করতে পারলেই এই শান্তি রক্ষা হবে।’

তার সরকার দেশের সব জেলা ও উপজেলায় ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সৌদি সরকারের সহযোগিতায় প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় মডেল মসজিদ-কাম-ইসলামী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভবনসহ মহিলাদের জন্য পৃথক নামাজ কক্ষ, মুসলিম পর্যটক ও মেহমানদের বিশ্রামাগার থাকবে। এখানে হজযাত্রীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, ইসলামী লাইব্রেরি ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম অন্তর্ভুক্ত থাকবে।’ তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে যাতে আয় বাড়ানো যায় এ জন্য শুধু আলেম-ওলামাদের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হবে এমন একটি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করার চিন্তাভাবনা চলছে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইমাম-মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্টের মাধ্যমে দুস্থ ও দুর্দশাগ্রস্ত ইমাম-মুয়াজ্জিনদের আর্থিক সুবিধা প্রদানের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ট্রাস্টের সদস্যভুক্ত ইমামদের সুদমুক্ত ঋণ প্রদান করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, মসজিদগুলোকে ইসলামী জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে ২৭ হাজার ৮৩২টি মসজিদ পাঠাগার স্থাপন করা হয়েছে। এ ছাড়া ৩৮ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ২১ হাজার ৫২০টি মসজিদ ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও উন্নয়ন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর