শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সহযোগী সংগঠনের রাজনীতি

নয়া কমিটি ঘোষণায় যুবদল তৃণমূলে প্রত্যাশা বাড়ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

দীর্ঘ সাত বছর পর জাতীয়তাবাদী যুবদলের নতুন (আংশিক) কমিটি ঘোষণার পর মাঠপর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রত্যাশা বাড়ছে। আগের কমিটির সমন্বয়হীনতা কাটানোর পাশাপাশি বিএনপির ভ্যানগার্ড হিসেবে নতুন নেতৃত্ব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন কমিটি ঘোষণার পর নেতা-কর্মীদের মধ্যে অন্য কমিটি ঘোষণার পর যেমন হয়েছে তেমন কোনো ক্ষোভ-বিক্ষোভ বা বিদ্রোহ দেখা যায়নি। বরং তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে উচ্ছ্বাস-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে। তবে নির্ধারিত সময়ে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করাসহ ৭৫টি সাংগঠনিক ইউনিটের নতুন কমিটি দেওয়াই যুবদলের নতুন নেতৃত্বের প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন নেতা-কর্মীরা। গত ১৬ জানুয়ারি রাতে ৫ সদস্যের কেন্দ্রীয় আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। আগের কমিটির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল আলম নীরবকে সভাপতি ও ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। অন্য তিনজন হলেন— সিনিয়র সহ-সভাপতি মোরতাজুল করিম বাদরু, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন ও সাংগঠনিক সম্পাদক মামুন হাসান। একই সঙ্গে ঢাকা মহানগর উত্তরে ৫ সদস্য ও দক্ষিণের সাত সদস্যের আংশিক কমিটিও ঘোষণা করা হয়। সবাইকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণ কমিটি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়। নতুন নেতৃত্বকে এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নির্দেশ দেন। তবে এ সময়সীমার মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করা সম্ভব হবে না বলে দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা জানিয়েছেন। তাদের মতে, বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী, চেয়ারপারসনের প্রতি সপ্তাহে আদালতে হাজিরা, সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কারাবন্দী দিবসসহ নানা কর্মসূচিতে নেতা-কর্মীদের ব্যস্ততা ছিল। তবে আগামী ২-৩ মাসের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার চিন্তাভাবনা করছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা।

এ প্রসঙ্গে যুবদলের সভাপতি সাইফুল আলম নীরব বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘আংশিক কমিটি ঘোষণার পর থেকেই একের পর এক কর্মসূচি থাকছে। সেগুলোতে যুবদলকেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হচ্ছে। তারপরও আমরা আশাবাদী, শিগগিরই যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিতে সক্ষম হব।’ কমিটির আকার কত হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আগের কমিটি ছিল ২৭১ সদস্যের। আমাদের কমিটিও এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে। যুবদলকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতাও চাই।’ নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু বলেন, ‘যুবদলের ৫ সদস্যের আংশিক কমিটি হয়েছে। সহোদর ভাইয়ের মতো আমরা পাঁচজন ঐক্যবদ্ধ। আমাদের নিয়ে তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের প্রত্যাশাও অনেক। তাদের এই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার স্বীকৃতি দিতে চাই। পাঁচজনের ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা সংগঠনের কাজকে ত্বরান্বিত করবে। কমিটির কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যেই শেষ হবে। সবারই সহযোগিতা পাচ্ছি।’ জানা যায়, আগের কমিটির শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বন্দ্ব ছিল অনেকটাই প্রকাশ্যে। নানামনির নানা মত ছিল। এ কারণে তৃণমূলের কর্মকাণ্ডেও নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। কয়েক দিন পরপরই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র নেতাদের কাছে শীর্ষ নেতাদের নিয়ে নালিশ পর্যন্ত যায়। সংগঠনের চেইন অব কমান্ডও ভেঙে পড়ে। আন্দোলন সংগ্রামেও তেমন কেনো ভূমিকা পালন করতে পারেনি আগের কমিটি। এসব বিবেচনায় আগের কমিটির নেতা ও ছাত্রদলের সাবেক নেতাদের সমন্বয়ে নতুন কমিটি দেন বিএনপি প্রধান। জানা গেছে, যুবদলের বর্তমান সভাপতি সাইফুল আলম নীরবের বিরুদ্ধে অন্তত দুই শতাধিক মামলার খড়গ ঝুলছে। একই অবস্থা সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুরও। অর্ধশত মামলায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। অধিকাংশ মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় নেতা-কর্মীদের নিয়মিত সময় দেওয়া ও দলীয় সব কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়াও তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। তবে কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই দুই শীর্ষ নেতা সব কর্মসূচিতেই অংশ নিয়েছেন। গ্রেফতারি পরোয়ানা নিয়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমবেতও হয়েছেন।

নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের নিন্দা : এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার আদালতে যাওয়া উপলক্ষে জড়ো হওয়াকে কেন্দ্র করে কাকরাইল ও মত্স্য ভবন এলাকায় যুবদলের ১০ নেতা-কর্মী আটকের নিন্দা জানিয়েছেন যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ও সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু। গতকাল এক বিবৃতিতে দুই নেতা বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে উপস্থিত যুবদল নেতা-কর্মীদের ওপর অবৈধ সরকারের পুলিশ বাহিনী বর্বরোচিত পৈশাচিক হামলা করে। এতে নেতা-কর্মীদের গণগ্রেফতার করা হয়।

আহত করা হয় অনেক নেতা-কর্মীকে। এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। অবিলম্বে গ্রেফতার হওয়া নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করছি।  বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীরা হলেন—নুরুল ইসলাম, মো. দিপক, শফিক, রনি, মিঠু, মাছুম, জুয়েল রানা নূর মোহাম্মদ, নয়ন, আল আমিন, আশিক, হামিদ তালুকদার সাদ্দাম, শুভ, আলম সুজন, মানিক খান, আরিফ, আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর