শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

সম্ভাবনা দেখাচ্ছে জিনজিরার লৌহশিল্প

মাহবুব মমতাজী

সম্ভাবনা দেখাচ্ছে জিনজিরার লৌহশিল্প

বিভিন্ন ধরনের লোহার পণ্য তৈরি হচ্ছে কেরানীগঞ্জের জিনজিরায়। বর্তমানে এটি দেশের অন্যতম সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে বিবেচিত হতে শুরু করেছে। গৃহস্থালির জন্য পিতল ও সিলভারের তৈজসপত্র, লোহার নাট, বোল্ট, অ্যাঙ্গেলসহ অন্তত এক হাজার ধরনের জিনিসপত্র বানানো হয় এখানে। প্রচলিত নামে এসব পণ্য ‘মেইড ইন জিনজিরা’ বলে খ্যাত। সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা জানান, প্রায় ৫০ বছর ধরে এখানে এসব কর্মযজ্ঞ চলছে। আর ছোট-বড় মিলে প্রায় পাঁচ শতাধিক কারখানা রয়েছে। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহূত লোহা, সিলভার ও পিতল সব নিয়ে আসা হয় রসুলপুর থেকে। এখানকার কাজে বিভিন্নভাবে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ জড়িত।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বাবুবাজার হয়ে বুড়িগঙ্গার দ্বিতীয় সেতু পার হলেই হাতের ডানদিকে চোখে পড়বে লোহার কারখানাগুলো। ছোট ছোট টিনের ঘর। চারদিকে অবিরল খুটখাট, টুংটাং, ঢং-ঢং শব্দ। জিনজিরা, শুভাঢ্যা, আগানগর, মান্দাইল, কালিন্দি, বরিশুর, তাওয়াপট্টি, টিনপট্টি, বাঁশপট্টি, কাঠপট্টি, মিরেরবাগ, চর-মিরেরবাগ, খেজুরবাগ, চর-খেজুরবাগ, কালীগঞ্জ, চরকালীগঞ্জ, কৈবর্ত্যপাড়া, বাঘাবাড়ি, ইস্পাহানি, নতুন শুভাঢ্যা, আমবাগিচা, ইমামবাড়ি, কদমতলী গোলচত্বর ও খোলামোড়া এলাকাজুড়ে এই লোহাশিল্পের বিস্তার। এসব এলাকার কারখানা ঘুরে জানা গেছে, নাট-বোল্ট, ওয়াশার, স্প্রিং, দরজার কবজা, সিটকিনি, বার্নার, ক্লাম, টোপ, প্লেনজার, কলের বাকেট, হ্যাশবল তালা, শার্টার স্প্র্রিং, স্ক্রু, রিপিটসহ সব ধরনের হার্ডওয়্যার সামগ্রী, গাড়ির পার্টস, তারকাঁটা, জিআই তার, আলতালা, হ্যাশবোল্ট, দা-বঁটি, শাবল, বালতি, চাপাতি, কুড়াল, কোদাল, কুন্নি, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, পিতলের বার্নার, কেরোসিন চুলা, পিতলের ডেগ, কলসি, তামার ডেগ, ক্রোকারিজ, তাওয়া, টিফিন ক্যারিয়ার, সাইলেন্সার, আশকল ডুম্বরি, নিক্তিকাঁটা, শার্টার, কলাপসিবল গেট, লোহার জানালা, দরজা, এ্যালুমিনিয়ামের জগ-মগ ইত্যাদি এখানে তৈরি হয়। তবে এখানকার কারিগররা মাত্র ২০-৩০ হাজার টাকা মূল্যের যন্ত্রে প্লেইনশিট থেকে ঢেউটিন তৈরি করেন। যার গুণগতমানও অত্যন্ত ভালো। কথা হয় হাতেম সরদার নামে এক শ্রমিকের সঙ্গে। তিনি বাঁশপট্টি থেকে তাওয়াপট্টি যাওয়ার পথেই একটি পিতলের কারখানায় কাজ করেন। তিনি জানান, আমাদের এখানকার পিতলের তৈরি সব পণ্য বিক্রির জন্য পাঠানো হয় চকবাজারের ইমামগঞ্জে। সেখান থেকে পাইকারি দরে দেশের বিভিন্ন স্থানে চলে যায়। এ পিতলের পণ্য পাশের দেশ ভারতেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

কারণ ভারতীয়রা পিতলের থালা-বাটিতে খেতে পছন্দও করেন। আর এই পিতলের জিনিসপত্র বিক্রি করা হয় কেজি প্রতি ৭০০-৮০০ টাকা করে। এগুলোর তৈরির সময় প্রতি পিস অনুসারে তাদের ৪৫-৫০ টাকা করে দেওয়া হয়। স্বাধীনতার পর থেকেই লোহার এই কারখানাগুলোতে শ্রম দিয়ে আসছেন কাশেম খান। তিনি বলেন, ছোটকাল থেকেই এসব কাজে ছিলাম। গ্রামের বাড়ি শরীয়তপুরে কিছুদিন কাজ করার পর এখানে চলে আসি। দুই-তিন বছর পরই কাজ শিখে যাই। এখনো সেই কাজই করছি, কোনো বদল হয়নি। বুড়িগঙ্গা ব্রিজের নিচ থেকে জিনজিরা বাজারে যেতে হাতের বাম পাশে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের কারখানা। যেখানে কাঠের তৈরি ফার্নিচার, বাঁশের তৈরি চালনি ও ঘরের জন্য ঝাড়ুও তৈরি করা হয়।  সিলভারের পণ্য ব্যবসায় জড়িত মলয় ভৌমিক জানান, ৫০ বছর ধরে এখানে লোহার খুঁটিনাটি এক হাজারেও বেশি মালামাল তৈরি করা হয়। এখানে গাড়ির পার্টস ও নাট- বোল্ট বেশির ভাগই ধোলাইখালের অর্ডার থেকে বানানো হয়। এখানকার তৈরি করা মালামালগুলো নিয়ে সেভাবে বাজারজাত করা হয় না। ঠিকভাবে প্রচারণা আর বাজারজাত করা হলে এর গুরুত্ব অনেক বেড়ে যেত। কিন্তু এ এলাকায় কোনো লোকের এ ব্যাপারে তেমন আগ্রহ নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর