শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এসআই খুন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ সাবেক এসপি বাবুল

শেখ রুহুল আমিন, ঝিনাইদহ

এসআই খুন নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ সাবেক এসপি বাবুল

স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যার কূলকিনারা না হলেও এবার পরকীয়ার জের ধরে পুলিশের এক এসআইকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে পদত্যাগী পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে। এসআই আকরাম হোসেনের স্ত্রী বনানী বিনতে বছির বর্ণির সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার জেরে ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মহাসড়কে মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করা হয় আকরামকে। নিহত আকরাম হোসেন তখন বিমানবন্দরে স্পেশাল ব্রাঞ্চে কর্মরত ছিলেন। দুই বছর আগের এই হত্যাকাণ্ডকে সড়ক দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। নিজ বাহিনীর সদস্য নিহত হওয়ার পরও তৎকালীন ঝিনাইদহের পুলিশ কর্মকর্তারা এই ব্যাপারে নিহতের পরিবারকে  কোনো প্রকার সহযোগিতা করেননি। তারপরও আকরাম  হোসেনের বোন জান্নাতারা রিনি ঝিনাইদহ আদালতে একটি মামলা করেন। সেই মামলাটির তদন্ত এতটুকুও এগোয়নি। এখন বিচারের আশায় আকরামের ছোট বোন রিনি গত সোমবার বাবুল আক্তারের শ্বশুরের সঙ্গে দেখা করেন। বাবুল আক্তারের শ্বশুর মোশারফ হোসেন এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘রিনি আমার কাছে এসেছিলেন। তিনি ভাই হত্যার বিচার চেয়েছেন। আমিও চাই মিতু হত্যার তদন্তের সঙ্গে আকরাম হত্যার তদন্তও করা হোক। তাহলে নিহত আকরামের পরিবার ন্যায়বিচার পাবে।’ রিনি বলেন, ২০১৫ সালের ১৩ জানুয়ারি ঝিনাইদহের শৈলকুপায় মহাসড়কে মাথায় কুপিয়ে তার ভাইকে আহত করা হয়। ওই সময় এসআই আকরামের হেলমেট ও মোটরসাইকেল অক্ষুণ্ন থাকে। ১৭ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তিনি মারা যান। তখন পুলিশ এটি ট্রাক দুর্ঘটনা বলে চালানোর চেষ্টা করে। ওই সময় চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, আকরামের মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তখনই আমরা সন্দেহ করি এটি হত্যা। কিন্তু ওই ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলে পুলিশ মামলা নেয়নি। অবশেষে উপায়ান্তর না পেয়ে ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা করি। আমরা ওই মামলায় বাবুল আক্তার, তার ফুফাতো ভাই সাদিমুল ইসলাম মুন ও নিহত আকরামের স্ত্রী বনানী বিনতে বছির বর্ণির নাম আসামি হিসেবে উল্লেখ করি। কিন্তু পুলিশ তাদের নাম বাদ দিয়ে একটি মামলা রেকর্ড করলেও তদন্ত আর এগোয়নি। এ ছাড়া আমরা মামলা করার ঘটনা আকরামের স্ত্রী বর্ণি জানতে পেরে ঢাকার শাহবাগ থানায় ইউডি মামলা করার পরও ফের তড়িঘড়ি করে শৈলকুপা থানায় আরেকটি ইউডি মামলা করেন। রিনি অভিযোগ করেন, ‘বর্ণির সঙ্গে বাবুল আক্তারের পরকীয়ার কারণে আমার ভাইয়ের সঙ্গে তার স্ত্রীর (বর্ণি) সম্পর্কের অবনতি হয়। একপর্যায়ে আমার ভাই তার স্ত্রীকে ঝিনাইদহে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেয়। এ নিয়ে মীমাংসার কথা বলে ঝিনাইদহে ডেকে নিয়ে আমার ভাইকে হত্যা করা হয়। তিনি বলেন, আমার ভাইয়ের মগবাজারে একটি ফ্ল্যাট ছিল। সেই ফ্ল্যাটে এখন বর্ণি বসবাস করে। বাবুল আক্তার বর্তমানে আদদ্বীন হাসপাতালে চাকরি নিয়েছেন। ওই ফ্ল্যাটটি হাসপাতালের পাশেই। বাবুল আক্তারও বর্তমানে ওই এলাকায় থাকেন। এখনো তাদের দুজনের মধ্যে খুবই সখ্য রয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন সাবেক এসপি বাবুলের মোবাইল ফোন ট্র্যাকিং করলে এই হত্যাকাণ্ডের আসল রহস্য বেরিয়ে আসবে।

রিনি বলেন, সাতক্ষীরাতে বাবুল আক্তারের বাবা ও বর্ণির বাবা পাশাপাশি বাড়িতে থাকতেন। বর্ণির বাবা বিআরডিবিতে চাকরি করতেন। আর বাবুলের বাবা পুলিশে। সেই সুবাদে তাদের দুজনের মধ্যে পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক তৈরি হয়। তখন থেকেই বাবুল আক্তারের সঙ্গে বর্ণির প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর মধ্যে পরিবারের সিদ্ধান্তে বাবুল মিতুকে বিয়ে করেন। আর বর্ণির বিয়ে হয় আকরামের সঙ্গে। কিন্তু বাবুল আর বর্ণির মধ্যে তখনো যোগাযোগ ছিল। প্রথমে আমরা বিষয়টা বুঝতে পারিনি। পরে বিষয়টা ধরা পড়ে।

রিনি বলেন, আমাদের পাঁচ বোনের একমাত্র ভাই ছিলেন আকরাম। তাকে মেরে ফেলা হলো, অথচ আমরা বিচার পেলাম না। বাবুল তখন এতটাই প্রভাবশালী ছিলেন তার বিরুদ্ধে কেউ অভিযোগ শুনতে চাইতেন না। মূলত বাবুলের প্রভাবের কারণেই তখন আমাদের পরিবার ন্যায়বিচার পায়নি। এসব বিষয়ে বাবুল আক্তারের সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। উল্লেখ্য, গত ৫ জুন সকালে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড় এলাকায় দুর্বৃত্তদের উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত ও গুলিতে নিহত হন তৎকালীন পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারের স্ত্রী মিতু।  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর