শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকছেন তরুণরা উদ্যোক্তা বেড়েছে ১২ লাখ

কোন পথে কর্মসংস্থান - ২

মানিক মুনতাসির

আত্মকর্মসংস্থানে ঝুঁকছেন তরুণরা উদ্যোক্তা বেড়েছে ১২ লাখ

বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে চাকরির পেছনে ছোটা এখন পছন্দ নয় তরুণদের। বরং নিজেই হয়ে উঠছেন চাকরিদাতা। নিজেকে উদ্যোক্তা হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটিয়ে সচ্ছল জীবন যাপন করছেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ হওয়ার আগেই অনেকেই যুক্ত হচ্ছেন আউটসোর্সিংসহ বিভিন্ন ধরনের কাজের সঙ্গে। জুনিয়র চেম্বার ইন্টারন্যাশনালের চট্টগ্রাম (জেসিআই) প্রেসিডেন্ট মো. গিয়াস উদ্দীন নিজেকে বিভিন্ন ধরনের ট্রেডিং ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত করেছেন। এ ছাড়া পারবারিকভাবে পাওয়া ফুলকলি গ্রুপের পরিচালকও তিনি। চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট ডিগ্রিধারী এই মেধাবী তরুণ চাকরির পেছনে না ছোটে নিজেই সরকারের বিভিন্ন ধরনের তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত ও উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে সম্পৃক্ত করেছেন। ফুলকলি গ্রুপের মাধ্যমে সারা দেশে ৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান করা হয়েছে। এ ছাড়া তরুণ উদ্যোক্তাদের সংগঠন জেসিআইকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন এই তরুণ উদ্যোক্তা। তিনি নিজেই প্রতিষ্ঠা করেছেন বড়তাকিয়া গ্রুপ। এখানেই অনেক মানুষের কর্মসংস্থান করেছেন এই তরুণ। চট্টগ্রামের আরেক তরুণ উদ্যোক্তা তানভীর শাহরিয়ার রিমন। পড়াশোনা শেষ করে চাকরির পাশাপাশি গড়ে তুলেছেন বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। প্রতিনিধিত্ব করছেন এএনজেড ডেভেলপমেন্টসে।

এমন তরুণ উদ্যোক্তারা নিজেদের উদ্যোগে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। ‘চাকরি খুঁজব না চাকরি দেব’ নামে একটি ফেসবুক গ্রুপও এ নিয়ে কাজ করছে। পড়াশোনা শেষ করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে— ক্রিয়েটিভ কিটেন, কক্সবাজারশপডটকম, সাফান ট্রেডস ইন্টারন্যাশনাল, বন্ধুডটকম, স্কেলড হোম সফট, সুগার পাফ ইত্যাদি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে ২০১৩ সালে দেশে তরুণ উদ্যোক্তা ছিল ৫ লাখ। আর ২০১৬ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখে। এ হার প্রতিদিনই বাড়ছে। বিবিএসের তথ্যমতে, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ৪৪ শতাংশ কৃষি খাতের ওপর নির্ভরশীল। আর তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছে। তবে এ খাত বর্তমানে শ্রম ঘন না হয়ে প্রযুক্তিনির্ভর হয়ে উঠেছে। ফলে সাম্প্রতিক সময়ের এ খাতে কর্মসংস্থান কমেছে। অতীতে এ খাতে যে হারে কর্মসংস্থান হতো এখন আর তা হয় না। তবে সেবা খাতে কর্মসংস্থান বাড়ছে। এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উচ্চ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হলে কর্মসংস্থান বাড়াতে হবে। শ্রমঘন শিল্পখাত গড়ে তুলতে হবে। তাহলে কর্মসংস্থান বাড়বে। তবে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাতের উৎপাদন শ্রমঘন শিল্পখাতের চেয়ে বেশি। ফলে উদ্যোক্তা বা ব্যবসায়ীরা প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাতে বেশি আগ্রহ দেখান। কিন্তু কর্মসংস্থানের কথা মাথায় রেখে শ্রমঘন শিল্পখাতকে অগ্রাধিকার দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।  মো. গিয়াস উদ্দীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এখন বিশ্বব্যাপী একটা চিন্তার প্রসার ঘটছে ‘তথ্যই অর্থ’। তিনি মনে করেন ঘরে বসেই এখন বিশ্ববাজারের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়। যার মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের আউটসোর্সিং করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করা যায়। আবার নিজে কোনো ফার্ম প্রতিষ্ঠা করে তার মাধ্যমে আউটসোর্সিং করে অন্যদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দেওয়া যাচ্ছে। ফলে তরুণদের উচিত চাকরির পেছনে না ছোটে নিজেই উদ্যোক্তা হয়ে অন্য চাকরি দেওয়া।

 এদিকে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, তরুণ সমাজের চাকরির পেছনে না ছোটার অন্যতম কারণ হচ্ছে— সরকারি চাকরি পেতে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ থেকে শুরু করে চাকরিতে যোগদান পর্যন্ত অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়। এমন কি ৩৪তম বিসিএসের এই প্রক্রিয়া শেষ করতে সময় লেগেছিল তিন বছর চার মাস। এমন দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক মেধাবী তরুণ চাকরির পেছনে না ঘোরে উদ্যোক্তা হিসেবে ক্যারিয়ার বেছে নিচ্ছেন।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর