সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জঙ্গিবাদ মাদককে প্রতিরোধ করুন

আনসার-ভিডিপির জাতীয় সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর

জঙ্গিবাদ মাদককে প্রতিরোধ করুন

জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টিতে ভূমিকা রাখার জন্য আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের প্রতি নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকাসক্তে না জড়ায়, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের সঙ্গে না জড়ায়, এ ব্যাপারে আপনাদেরও ভূমিকা রাখতে হবে। মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি করা এবং এটা প্রতিরোধ করে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখায় বিশেষ ভূমিকা আপনারা রাখবেন, সেটাই আমরা চাই। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেবল বাংলাদেশে নয়, পুরো বিশ্বের জন?্যই একটি সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে। গাজীপুরের সফিপুরে গতকাল সকালে আনসার ভিডিপি একাডেমিতে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর ৩৭তম জাতীয় সমাবেশের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ওইসব কথা বলেন। 

বাহিনীর সদস্যদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, জনগণের নিরাপত্তা বিধানের জন্য আপনারা সততা, শৃঙ্খলা, আন্তরিকতা ও সাহসের সঙ্গে কাজ করবেন। সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ২০২১ সালের মধ্যে আমরা বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলব ইনশাল্লাহ। প্রধানমন্ত্রী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশ করে বলেন, ১৯৯৮ সালে আমাদের সরকারই আপনাদের সর্বোচ্চ সম্মান জাতীয় পতাকা প্রদান করে। ব্যাটালিয়ন আনসারদের চাকরি নয়  থেকে ছয় বছরের পূর্ণতা সাপেক্ষে স্থায়ী করার খসড়া আইনটি অনুমোদন দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে আইনটা হয়ে যাবে। আপনারা ছয় বছরে স্থায়িত্ব পাবেন। কেবিনেটে অনুমোদন হয়ে গেছে। ইনশাল্লাহ আমরা পাস করে দেব। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে যুব সম্পদকে কর্মদক্ষ করে গড়ে তোলা এই বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এ বাহিনীর সদস্যরা বর্তমানে যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়ে মানসম্মত প্রশিক্ষণ গ্রহণ করছে এবং কর্মসংস্থানের মাধ্যমে দেশের  বেকার সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর কর্মকর্তারা বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠানসহ দেশে-বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করছেন। আয় বৃদ্ধিমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে স্বনির্ভরতা অর্জনের ক্ষেত্রে এ বাহিনী সারা দেশে এক বিশাল পরিবর্তন সূচনা করেছে। এ কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক। ব্যাংকটি সদস্যদের আর্থিক অবস্থার উন্নয়নসহ নারীর ক্ষমতায়নে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছে। প্রশিক্ষণ, দক্ষতা উন্নয়ন ও ঋণ গ্রহণের অপূর্ব সম্মিলনের মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণে এ ব্যাংক কাজ করছে। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকাল সাড়ে ৯টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে এসে পৌঁছান। পরে তিনি খোলা জিপে চড়ে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের মনোজ্ঞ কুচকাওয়াজ ও গ্যালারি ডিসপ্লে পরিদর্শন এবং সালাম গ্রহণ করেন। আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক  মেজর জেনারেল মিজানুর রহসান খান এবং প্যারেড কমান্ডান্ট আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর পরিচালক (অস্ত্র-প্রশিক্ষণ) মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সেনাবাহিনীর প্রধান  জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক, নৌবাহিনীর প্রধান এডমিরাল মোহাম্মদ নিজামউদ্দিন আহমেদ ও বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার, গাজীপুর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আকতারুজ্জামান, জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, স্বরাষ্ট্র সচিব ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস এম আলম, গাজীপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কুচকাওয়াজের অভিবাদন গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী সাহসিকতা ও সেবামূলক কাজের জন্য ১১১ জন আনসার ও ভিডিপি সদস্যদের মধ্যে বাংলাদেশ আনসার পদক, প্রেসিডেন্ট আনসার পদক, প্রেসিডেন্ট গ্রাম প্রতিরক্ষা দল পদক বিতরণ করেন। উদ্বোধনী ভাষণ শেষে প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের অংশগ্রহণে সচেতনতামূলক নাটিকা  দেখেন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড নিয়ে রচিত গান  শোনেন। এর আগে প্রধানমন্ত্রী আনসার সদস্যদের নির্মিত ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের স্টলও পরিদর্শন করেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি অস্থায়ী ব্যাটালিয়ন আনসার, অঙ্গীভূত আনসার, হিল আনসার এবং ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রীদের ভাতাদি উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। তৃণমূল পর্যায়ে ভিডিপি দলনেতা-দলনেত্রীদের পদসংখ্যা ৮ হাজার ৫০০ জন থেকে ১৫ হাজার ২৪৮ জনে উন্নীত করা হয়েছে। শহর এলাকায় সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার লক্ষ্যে ওয়ার্ড দলনেতা ও দলনেত্রীর পদ বাড়ানো হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী। বিশেষ করে শিল্প কারখানা, সমুদ্রবন্দর ও বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক আনসার সদস্যের সর্বদা সতর্ক উপস্থিতি দেশের অর্থনীতির চাকাকে রেখেছে নিরাপদ ও গতিশীল। তিনি বলেন, বিমান বন্দরের নিরাপত্তায় গঠিত এভসেক (এভিয়েশন সিকিউরিটি) এ আনসার বাহিনী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সম্প্রতি এ বাহিনীতে বিশেষ ইউনিট গঠন করা হয়েছে, যা হলি আর্টিজান মর্মান্তিক ঘটনা পরবর্তীকালে কূটনৈতিক জোনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এবং কূটনৈতিক মহলে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। এ ছাড়াও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গের প্রকেটশনের জন্য দুটি আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন গঠনের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আনসার ও ভিডিপির উন্নয়নে আমাদের সরকার এ ধারা অব্যাহত রাখবে।

সর্বশেষ খবর