সোমবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঢাকার দুঃখ এখন মৌচাক-মালিবাগ

মাহমুদ আজহার

ঢাকার দুঃখ এখন মৌচাক-মালিবাগ

টানা এক মাস ধরে রাজধানীর মগবাজার থেকে মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত একপাশের রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ফলে বিপরীত পাশের সরু ভাঙাচোরা রাস্তা দিয়ে যানবাহন চলাচলে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। পাঁচ মিনিটের রাস্তায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে থাকতে হচ্ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন এ রাস্তায় চলাচলকারী মানুষ। ঢাকার বড় দুঃখ এখন এই মৌচাক-মালিবাগ। পুরো রাস্তায় বিভিন্ন টেলিফোন লাইন, গ্যাস লাইন ও বিদ্যুৎ লাইনের সংযোগের জন্যই চলছে ঢিমেতালে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। মৌচাক-মালিবাগবাসীর কষ্ট যেন দেখার কেউ নেই। কত দিন চলবে তাও কেউ স্পষ্ট করে বলতে পারছে না। অনুসন্ধানে গিয়ে দেখা যায়, পশ্চিম মালিবাগের ডাক্তার গলির রাস্তাও কেটে ফেলা হয়েছে। সেখান দিয়ে রিকশাও চলাচল করতে পারছে না। কোথাও কোথাও স্যুয়ারেজের পানি উপচে পড়ছে। তিন বছর ধরে দুর্গন্ধযুক্ত এ পানি উপচে পড়লেও দেখার কেউ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের। এ নিয়ে সবচেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন রোগীরা। তাদের যাতায়াতে গাড়ি দূরের কথা, একটি রিকশাও চলাচল করতে পারে না ডাক্তার গলিতে। এ ছাড়া মৌচাক মোড়ের ফরচুন শপিং মল, মৌচাক মার্কেট, বিভিন্ন গাড়ির শো-রুমসহ আশপাশের ব্যবসায়ীদের এখন মাথায় হাত। অনেকেইে এরই মধ্যে ব্যবসা গুটিয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কেউ কেউ চলে যাওয়ার চেষ্টায় আছেন। কবে নাগাদ তারা এ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবেন তা কেউই স্পষ্ট করে বলতে পারছেন না। জানা যায়, ডাক্তার গলিসহ ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই ব্যক্তিগত গাড়ি গ্যারেজ করে রেখেছেন। কেউবা অন্যত্র নিকটাত্মীয়দের বাসায় তা রেখে এসেছেন। সাফেনা হাসপাতাল সংলগ্ন বদরুজ্জামান নামে এক ফার্মেসি মালিক গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ওষুধ বেচাবিক্রি বন্ধ প্রায়। এক মাস ধরে রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়েছে। দেখার কেউ নেই। ডাক্তার গলির রাস্তাও কেটে ফেলা হয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে ব্যবসা গুটিয়ে ফেলা ছাড়া কোনো উপায় থাকবে না।’ সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মৌচাক মোড় থেকে মালিবাগ রেলগেট পর্যন্ত পশ্চিম পাশের রাস্তা পুরো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পুরো রাস্তা খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। ফ্লাইওভারের কাজ চললেও নিচের রাস্তা কেটে চলাচলের অনুপযোগী করা হয়েছে। ফ্লাইওভারের নির্মাণসামগ্রীও এবড়োখেবড়ো হয়ে পড়ে আছে। কোথাও গর্ত, আবার কোথাও সামগ্রীর স্তূপ। পাশেই ময়লার ভাগাড়। প্রায় এক মাস ধরে এ দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন স্থানীয়রা। মৌচাক হয়ে মালিবাগ মোড় পর্যন্ত শুধু গর্ত আর গর্ত। বেশ কিছু জায়গায় গর্তে ময়লা ও দুর্গন্ধযুক্ত পানি দেখা গেছে। ড্রেনের দুর্গন্ধ পানি আর খোঁড়াখুঁড়ির ধুলোবালিতে এলাকাবাসীর দম বন্ধপ্রায়। ডাক্তার গলি সংলগ্ন কার নেটওয়ার্কসহ কয়েকটি গাড়ির শো-রুম বন্ধ দেখা গেছে। এ পাশের অধিকাংশ দোকানই বন্ধ করে রাখা হয়েছে। পূর্ব পাশের রাস্তা দিয়ে গাড়ি আসা-যাওয়া করছে। ডাক্তার গলির মা জেনারেল স্টোরের মালিক মফিজ উদ্দিন বলেন, ‘প্রায় এক মাস হলো দোকানের সামনে গর্ত করে রাখা হয়েছে। কোনো ক্রেতা আসতে চায় না। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধপ্রায়।’ কথা হয় মালিবাগ রেলগেট এলাকায় রিকশাচালক শফিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘রাস্তায় জ্যাম না থাকলে রামপুরা বাজার থেকে কাকরাইল যেতে সময় লাগে ২০ মিনিটের মতো। ভাড়া নিই ৪০ টাকা। কিন্তু এ রাস্তায় এখন জ্যাম থাকে বিধায় যেতে সময় লাগে এক-দেড় ঘণ্টা। এ জন্য ভাড়াও একটু বেশি নিতে হয়। রাস্তা খারাপ তাই রিকশা টেনেও নিতে হয়। মাঝেমধ্যে রাস্তার গর্তে পড়ে আঘাতও পাই। অনেকে দরাদরি করে চড়েন, আবার বেশি ভাড়া চাওয়ার অজুহাতে কেউ গালিগালাজ করেন। এমনকি গায়েও হাত তোলেন।’ জানা যায়, মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ উদ্বোধন করা হয় ২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি। দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনো শেষ হয়নি। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত নির্মাণের সময় বাড়ানো হয়। ওই মেয়াদও শেষ হয়ে গেছে। স্থানীয়রা বলছেন, যেভাবে কাজ চলছে সামনের বর্ষায় এ এলাকার মানুষের আর দুর্ভোগের শেষ থাকবে না।

 তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই এলাকার খোঁড়াখুঁড়ি বন্ধ করে রাস্তা চালু করে দেওয়া উচিত। নইলে আশপাশের সবাই ব্যবসা গুটিয়ে ফেলবে। ফ্লাইওভার নির্মাণকাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন দুর্ভোগের কথা স্বীকার করেন। তিনি বলেন, সব ধরনের বড় প্রকল্পের নির্মাণকাজের সময় বিকল্প চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়। কিন্তু মগবাজার-মালিবাগ ফ্লাইওভারের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত রাস্তা নেই। তাই যেটুকু রাস্তা দিয়ে যান চলাচল করছে তা সব সময় খোলা রাখার চেষ্টা করা উচিত। কিন্তু নানা সমস্যার কারণে একপাশের রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সর্বশেষ খবর