মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

দুই দিনেই ১৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

সাইফুল ইসলাম, যশোর

দুই দিনেই ১৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি

পহেলা ফাল্গুন আর ভালোবাসা দিবসের আগের দুই দিনে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী বাজারে প্রায় ১৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। এবার চাষিরা ফুলের দামও পেয়েছেন ভালো। তবে নির্দিষ্ট কয়েকটি ফুলের বিক্রি এবার কম হয়েছে। চীন থেকে কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি ফুলের আমদানি বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করছেন ফুলচাষিরা। বিষয়টি নিয়ে তারা এখন চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

যশোর-বেনাপোল সড়কের ধারে গত তিন দশক ধরে গড়ে উঠেছে দেশের সবচেয়ে বড় ফুলের বাজার গদখালী। এর সংলগ্ন দুটি ইউনিয়নে সাড়ে তিন হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে দেশি-বিদেশি নানা রকমের ফুলের চাষ করেন প্রায় তিন হাজার চাষি। সারা বছরই গদখালী ফুলের বাজার জমজমাট থাকলেও মূলত এখানকার চাষিরা তাকিয়ে থাকেন ফেব্রুয়ারি মাসের দিকে। কারণ এ মাসে পয়লা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মার্তৃভাষা দিবসে ফুলের ব্যবহার হয়ে থাকে সবচেয়ে বেশি। এ বছরের আবহাওয়া ফুলচাষের পক্ষে খুবই অনুকূল আছে। এ বছর ২০ কোটিরও বেশি টাকার ফুল কেনা-বেচা হবে বলে আশা করছেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি আবদুর রহিম। তিনি বলেন, ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে গতকাল অর্থাৎ ভালোবাসা দিবসের আগের দিন পর্যন্ত গদখালী বাজারে ১৩/১৪ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের আগে আরও ৭/৮ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে তিনি আশা করছেন। আবদুর রহিম জানান, ভালোবাসা দিবসের আগের গদখালী বাজারে ১০০ গোলাপ ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা, ১০০ জারবেরা ৮ থেকে ১২০০ টাকা, ১০০ গ্লাডিওলাস ৩০০ থেকে এক হাজার টাকা, রজনীগন্ধার ১০০ স্টিক ১৫০ থেকে সাড়ে ৩৫০ টাকা, রথস্টিক প্রতি আঁটি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, জিপসি প্রতি আঁটি ৪০ থেকে ৫০ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ১০০ পিস ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা এবং গাঁদা ১০০ থেকে ১৫০টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। গদখালী এলাকার ফুলচাষি আমিনুল ইসলাম এবার ১৫ বিঘা জমিতে ফুলের চাষ করেছেন। তিনি বলেন, গত দেড় মাস ফুলের বাজার একটু খারাপ থাকলেও ফেব্রুয়ারি মাস ভালো যাচ্ছে। তিনটি দিবসে তিনি দেড় থেকে দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করবেন বলে আশা করছেন। আরেক ফুলচাষি সোহাগ হোসেন বলেন, ‘ফেব্রুয়ারি মাস সামনে রেখে ফুলবাগানে অনেক পরিশ্রম করেছি। এক বিঘা জমিতে গোলাপ ফুটিয়েছি। এ মাসে অন্তত এক লাখ টাকার গোলাপ বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’ জারবেরা ফুলের চাষ করেছেন রনি ইসলাম। তিনি বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ৬/৭ হাজার পিস জারবেরা বিক্রি করি। ফেব্রুয়ারি মাসে তিনটি দিবসে ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারব বলে আশা করছি।’ তবে ফুলের এই রমরমা বাজারেও খারাপ খবর শোনালেন বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি। তিনি বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের কিছু ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি চীন থেকে কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি ফুল আমদানি করে ব্যবহার করছে। কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি এসব ফুল বেশ কয়েকবার ব্যবহার করা যায়। তাতে খরচও অনেক কম পড়ছে। তিনি বলেন, সব অনুষ্ঠানেই কাঁচা ফুলের চাহিদা থাকলেও ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিগুলো কৌশলে কাগজের ফুল ঢুকিয়ে দিয়ে নিজেরা লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে এবার গ্লাডিওলাস ফুলচাষিরা অনেক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। কারণ কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি গ্লাডিওলাসের মতো ফুল আমদানি হয়েছে সবচেয়ে বেশি। আবদুর রহিম বলেন, ৮০’র দশক থেকে তিল তিল করে দেশে ফুল সেক্টরটি গড়ে উঠেছে। এই সেক্টরের সঙ্গে ৩০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকা জড়িয়ে আছে। মাত্র কয়েকটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির স্বার্থে এই সম্ভাবনাময় সেক্টরটিকে ধ্বংস হতে দেওয়া যায় না। তিনি বলেন, যেখানে আমরা ইতিমধ্যেই সংযুক্ত আরব-আমিরাত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়ায় কাঁচা ফুল রফতানি করতে শুরু করেছি, তখন আমাদের দেশেই আমদানি করা হচ্ছে কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি নকল ফুল। এসব নকল ফুল আমদানি বন্ধে পদক্ষেপ নিতে তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সর্বশেষ খবর