শনিবার, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রকৃতি

জল ময়ূর

মোস্তফা কাজল

জল ময়ূর

শ্রীমঙ্গলের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের পুকুরপাড়ে দেখা মিলেছে অনিন্দ্য সুন্দর জল ময়ূরের। কয়েক দিন আগে এক সকালে ডোবার মধ্যে হঠাৎ কচুরিপানা ও শাপলা ফুলের ফাঁক ঠেলে লম্বা লেজের একটি পাখি এক ঝটকায় উড়ে যায়। পাখিটির নাম জল ময়ূর। পরে আরও কয়েকটি জল ময়ূরের দেখা মিলল। এ পাখির প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জলাধারের কাছাকাছি থাকতে ভালোবাসে। বন বিভাগ জল ময়ূরের জাত রক্ষায় নানা ধরনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। এটি লম্বা লেজী। বাংলাদেশের দুর্লভ আবাসিক পাখি ‘জল ময়ূর’। এ পাখির তিন ধরনের প্রজাতি রয়েছে। নেউ, নেউপিপি এবং পদ্মপিপি বা মেওয়া নামেও পরিচিত। প্রজননকালে জল ময়ূর অত্যন্ত সুন্দর হয়ে ওঠে। এ সময় ২৫ সেন্টিমিটার লম্বা লেজসহ পাখির দেহের দৈর্ঘ্য দাঁড়ায় ৩৯ থেকে ৫৮ সেন্টিমিটার। ওজনে পুরুষ ১১৩ থেকে ১৩৫ গ্রাম। স্ত্রী প্রজাতির পাখি ২০৫ থেকে ২৬০ গ্রাম হয়। প্রজননকারী পাখির মাথা, গলা ও ডানার পালক সাদা থাকে। ঘাড় সোনালি-হলুদ, পিঠ গাঢ় বাদামি, বুক-পেট কালচে-বাদামি ও লেজ কালচে হয়। একটি কালচে-খয়েরি রেখা মাথা ও ঘাড়-গলার সাদা ও সোনালি-হলুদ রংকে পৃথক করেছে। ঠোঁট নীলচে হয়। চোখ বাদামি ও পা নীলাভ-কালো। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম। জল ময়ূর হাওর, বিল, হ্রদ এবং মিঠাপানির জলাভূমিতে বাস করে। দেশের প্রায় সব বিভাগেই দেখা যায় এ পাখিটি। গ্রীষ্মকালে একাকী বা জোড়ায় ও শীতকালে ঝাঁক বেঁধে বিচরণ করে। ভাসমান পাতার ওপর হেঁটে হেঁটে জলজ উদ্ভিদে থাকা পোকা-মাকড় ও অমেরুদণ্ডী প্রাণী খায়। এ ছাড়াও জলজ উদ্ভিদের কচি পাতা, অংকুর ও বীজ খেয়ে থাকে। সচরাচর ওড়ার সময় করুণ সুরে নে...উ...ইউ...,  নে...উ...ইউ..., নে...উ...ইউ স্বরে ডাকতে থাকে। প্রজননকালে পুরুষ শাপলা ও পদ্মপাতা বা এ জাতীয় ভাসমান কোনো উদ্ভিদের পাতার ওপর বাসা বানায়। স্ত্রী এতে চারটি জলপাই-বাদামি চকচকে ডিম পেড়ে চলে যায়। পুরুষ একাই ডিমে ২৩ থেকে ২৬ দিন তা দিয়ে বাচ্চা ফোটায়। ডিম থেকে ফোটার সঙ্গে সঙ্গেই হাঁটতে, সাঁতরাতে ও ডুব দিতে পারে। প্রায় দুই মাস পর্যন্ত বাবার তত্ত্বাবধানে থাকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর