রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানেরমেলা প্রতিদিন

গল্প-কবিতা-প্রজ্ঞায় সাড়া জাগালেন প্রতিবন্ধীরাও

মোস্তফা মতিহার

গল্প-কবিতা-প্রজ্ঞায় সাড়া জাগালেন প্রতিবন্ধীরাও

একুশের গ্রন্থমেলায় সাধারণ মানুষের মতো গল্প-কবিতা আর প্রজ্ঞা দিয়ে সাড়া জাগিয়েছেন প্রতিবন্ধীরাও। অমর একুশে গ্রন্থমেলার ১৮তম দিনে গতকাল এটাই ছিল বড় আকর্ষণ। গ্রন্থমেলার বাংলা একাডেমি অংশে স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনা সংস্থার স্টলে বসে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরা সাধারণ মানুষকে জানাচ্ছিলেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের নিয়ে তাদের স্বপ্নের কথা। ব্রেইল পদ্ধতির মাধ্যমে বিভিন্ন বই পড়ে তারা মেলায় আগতদের জানান দিচ্ছিলেন তাদের অসামান্য প্রতিভার কথা। ব্রেইল বইগুলো থেকে একুশের গল্প ও কবিতা পড়ে শোনাচ্ছিলেন তারা। তাদেরই কয়েকজন হলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের ছাত্রী ঝরনা আক্তার রূপা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাসলিমা সুলতানা মিতু ও মেহরাব এবং একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদ, বদরুন্নেসা কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সম্মান শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মোরশেদা, একই কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক প্রথম বর্ষ ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী যথাক্রমে রিমি ও আইরিন সুলতানা আঁখি। কথা প্রসঙ্গে মেধাবী এই শিক্ষার্থীরা জানান, ভালো কিছু করতে হলে দৃষ্টিহীনতা কোনো বাধা হতে পারে না, ইচ্ছা শক্তিটাই যথেষ্ট। চোখের আলোর পরিবর্তে বিশেষ পদ্ধতির ব্রেইলের আলোতেই তারা নিজেদের জ্ঞানের আলোর শিখা ছড়িয়ে দিচ্ছেন চারদিকে। তবে একুশের চেতনায় ঋদ্ধ বইমেলায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি উদ্যোগে কোনো ব্রেইল প্রকাশনা না থাকাতে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। আগামী একুশে গ্রন্থমেলা থেকে দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য ব্রেইল প্রকাশনা বৃদ্ধির দাবি তোলেন তারা। স্পর্শ ব্রেইল প্রকাশনার উদ্যোক্তা নাজিয়া জাবীন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘মানুষ দৃষ্টিহীন বলেই অন্ধ নয়, মানুষ মূলত প্রজ্ঞাহীন বলেই অন্ধ’। দৃষ্টিশক্তিসম্পন্ন মানুষের মতো দৃষ্টি প্রতিবন্ধীরাও একুশের চেতনায় শানিত হয়ে মেলায় আসছে এবং ব্রেইল সম্পর্কে সব মানুষকে সম্যক ধারণা দিচ্ছে। তিনি জানান, এবারের মেলায় তিনি ৮টি ব্রেইল প্রকাশনা আনছেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সেই ৮টি ব্রেইল বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হবে।

মেলায় এমাজউদ্দীন : এদিন মেলায় এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দীন আহমদ। মেলায় প্রকাশিত তার দুটি বই ‘গণতন্ত্রের শত্রুমিত্র’, ‘গণতন্ত্র এখন’-এর প্রকাশনা সংস্থা দি ইউনিভার্সেল একাডেমির স্টলে বেশ কিছু সময় কাটান তিনি।

সৈয়দ আবুল হোসেনের ‘আমার কথা’ : প্রকাশনা সংস্থা পুঁথিনিলয় প্রকাশ করেছে সাবেক মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনের বই ‘আমার কথা’। ১৮৮ পৃষ্ঠার এই বইটির মূল্য ১৮০০ টাকা। প্রচ্ছদ এঁকেছেন সুমন বৈদ্য, আলোক চিত্র তুলেছেন চঞ্চল মাহমুদ।  উৎসর্গ করা হয়েছে তার স্ত্রী খাজা নারগিছ হোসেনকে। 

নতুন বই : বাংলা একাডেমির জনসংযোগ উপ-বিভাগের তথ্যানুযায়ী, গতকাল মেলার ১৮তম দিনে ১৫৬টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে রয়েছে অন্যপ্রকাশ থেকে হাসান আজিজুল হকের ‘ছোবল’, চারুলিপি থেকে সৈয়দ শামসুল হকের ‘কিশোর সমগ্র-২’, তাম্রলিপি থেকে ৬৪টি জেলার ‘মুক্তিযুদ্ধের কিশোর ইতিহাস’, কালিকলম প্রকাশনা থেকে আহসান হাবীবের ‘নির্বাচিত রম্য গল্প’, অনিন্দ্য প্রকাশ থেকে আহমদ রফিকের ‘এ কোন বাংলাদেশী সমাজ’, পারিজাত প্রকাশনী থেকে মোনায়েম সরকারের ‘বাংলা ভাষার রক্তরঞ্জিত ইতিহাস’, বলাকা প্রকাশন থেকে শরীফা বুলবুলের ‘বীরাঙ্গনা নয় মুক্তিযোদ্ধা’, নওরোজ কিতাবিস্তান থেকে  তাইসির রেজার নাটকের বই ‘লাল পদ্ম’, যৌথ কবিতার বই ‘খেয়ালী মনের কাব্য’ ইত্যাদি। গতকাল ৬১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মূল মঞ্চ : বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় নব্বইয়ের দশকের কবিতা শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন কবি মোস্তাক আহমাদ দীন। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন ড. শহীদ ইকবাল এবং ড. এ এম মাসুদুজ্জামান। সভাপতিত্ব করেন কবি সাজ্জাদ শরিফ। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল লাকী ইনামের পরিচালনায় এবং নাগরিক নাট্যাঙ্গন-এর পরিবেশনায় নাটক ক্রীতদাসের হাসি। 

সর্বশেষ খবর