সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারত দেবে ৮০ ভাগ খরচ

ট্রানজিটের জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ রুট সচল রাখার উদ্যোগ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

ট্রানজিট সুবিধার জন্য বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথ সারা বছর সচল রাখতে যে খরচ হবে তার ৮০ শতাংশ বহন করবে ভারত। বাকিটা দেবে বাংলাদেশ। দুই দেশের নৌসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সম্প্রতি এ বিষয়ে নীতিগত সম্মতি দিয়েছে তারা। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেওয়া এই প্রস্তাবটি চূড়ান্ত হতে পারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরে। নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্রগুলো জানায়, আগামী এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের কথা গণমাধ্যমে এসেছে। সফর যখনই হোক ট্রানজিট সংক্রান্ত এই প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর সফরেই চূড়ান্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বর্তমানে দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট (পিআইডব্লিউটিটি) প্রটোকলের আওতায় নৌপথে ট্রানজিট সচল রাখতে বছরে প্রায় ১০ কোটি টাকা খরচ দেয় ভারত। বাংলাদেশ বলছে, সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে এই অর্থ প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। যে কারণে সারা বছর প্রয়োজনীয় নাব্য ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। এর ফলে ট্রানজিট কার্যকর হলেও সারা বছর চলছে না ভারতীয় পণ্যবাহী কার্গো। জানা গেছে, গত নভেম্বরে অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) খরচ বাবদ ভারত থেকে নেওয়া অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে ডিসেম্বরে নৌসচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেয় বাংলাদেশ। বিআইডব্লিউটিএ সূত্র জানায়, গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর ঢাকায় দুই দেশের মধ্যে নৌপথে ট্রানজিট সংক্রান্ত যে বৈঠক হয় যেখানে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দেন দেশটির বাণিজ্য সচিব রাজিব কুমার ও বাংলাদেশের নৌসচিব অশোক মাধব রায়। দুই দিনব্যাপী ওই বৈঠকে আলোচনা-পর্যালোচনা শেষে ভারত নৌপথ সংরক্ষণে মোট ব্যয়ের ৮০ ভাগ খরচ দিতে নীতিগত সিদ্ধান্তের কথা জানায়।

বাংলাদেশ-ভারত অভ্যন্তরীণ নৌপথ অতিক্রম ও বাণিজ্য প্রটোকলের পরিচালক মুহাম্মদ আবু জাফর হাওলাদার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রেড অ্যান্ড ট্রানজিট (পিআইডব্লিউটিটি)-এর আওতায় সিরাজগঞ্জ-চিলমারি-দৈখাওয়া এবং আশুগঞ্জ-শেরপুর-জকিগঞ্জ পর্যন্ত রুট দুটি সাধারণত ভারতীয় কার্গো চলাচলে ব্যবহৃত হয়। এই দুটি নৌপথ চালু রাখতে ভারত বাংলাদেশকে বর্তমানে বছরে ১০ কোটি টাকা খরচ দেয়, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। সর্বশেষ ২০১৪ সালে দুই দেশের জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি (জেটিসি) নৌপথে ট্রানজিট চালু রাখতে সরেজমিন একটি জরিপ চালায়। ওই জরিপে মেঘনা ও কুশিয়ারা নদী এবং ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীতে সারা বছরই ৩ থেকে আড়াই মিটার গভীরতার নাব্য বজায় রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়। আবু জাফর হাওলাদার বলেন, আমরা ওই প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করে দেখেছি, তাতে সারা বছর ট্রানজিটের নৌপথ সচল রাখতে ব্রহ্মপুত্র ও যমুনা নদীর সিরাজগঞ্জ থেকে দৈখাওয়া পর্যন্ত ১৭৫ কিলোমিটার অংশে ৩০ মিটার প্রস্থে এবং আড়াই মিটার গভীরতায় প্রায় ৩৬ লাখ ঘনমিটার এবং মেঘনা ও কুশিয়ারা নদীর আশুগঞ্জ-জকিগঞ্জ পর্যন্ত ২৯৫ কি.মি. অংশে তিন মিটার গভীরতায় প্রায় ১৫ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং করা প্রয়োজন। বর্তমান বাজারদর অনুসারে প্রায় প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং ৩০০ টাকা হিসেবে এতে ব্যয় হবে প্রায় ১৫৩ কোটি টাকা। তবে দুই বছর আগে করা ওই জরিপের ভিত্তিতে কোনো সিদ্ধান্ত আসা ঠিক হবে না জানিয়ে বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মকর্তারা জানান, নতুন সিদ্ধান্ত হচ্ছে, ট্রানজিটের নৌপথ সচল রাখতে নতুন করে জরিপ করবে জেটিসি। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান (আইডব্লিউটিটি) প্রটোকলের আওতায় কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-খুলনা-বরিশাল-চাঁদপুর-আরিচা-সিরাজগঞ্জ-চিলমারি-ধুবরি-পান্ডু-শিলঘাট (১/২ নং রুট) এবং কলকাতা-হলদিয়া-রায়মঙ্গল-খুলনা-বরিশাল-চাঁদপুর-আশুগঞ্জ-শেরপুর-ফেঞ্চুগঞ্জ-জকিগঞ্জ-করিমগঞ্জ (৩/৪) নং রুট)সহ বিপরীতমুখী ৮টি রুটের মধ্যে বর্তমানে ১ হতে ৪ নং রুট এবং ৭/৮ নং রুট চালু আছে। প্রটোকল রুট ১/২ এর বাংলাদেশ অংশের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৬৪ কি.মি. এবং ৩/৪ নং রুটের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭৭৮ কি.মি.। এর মধ্যে ১/২ নং রুটের প্রায় ২৮৫ কি.মি. এবং ৩/৪ নং রুটের প্রায় ৩০৫ কি.মি. অংশে সারা বছর আড়াই মিটার নাব্য বজায় রাখা সম্ভব হচ্ছে না। যে কারণে নৌপথে ট্রানজিট সুবিধা কার্যকর হওয়ার পরও ভারতের পণ্যবাহী কার্গো সারা বছর চলাচল করতে পারছে না।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর