সোমবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

প্রথম বৈঠকে বসছে নতুন ইসি

সিদ্ধান্ত হতে পারে কুমিল্লা সিটি ও সুরঞ্জিতের আসন নিয়ে সবাইকে আস্থায় এনে যেতে চায় ইভিএমে

নিজস্ব প্রতিবেদক

নতুন ইসি যোগ দেওয়ার পর আজ প্রথম সভায় বসতে যাচ্ছেন। প্রথম সভায় কিছু নির্বাচন নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে বলে জানিয়েছেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। তিনি জানান, সুনামগঞ্জ-২ শূন্য আসনের উপনির্বাচনের সময়সূচি নির্ধারণ ও আটকে থাকা কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়েও সিদ্ধান্ত হতে পারে। আজ বেলা ১১টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম কমিশন বৈঠকে বসবেন নির্বাচন কমিশনাররা। এটিই হবে তাদের প্রথম কমিশন বৈঠক। এতে ওই দুই নির্বাচন ছাড়া বেশ কিছু স্থানীয় নির্বাচন নিয়েও আলোচনা হবে। ইসি সচিব জানান, সামনে এইচএসসি পরীক্ষা ও রমজান রয়েছে। বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে তারিখ নির্ধারণে সিদ্ধান্ত নেবে কমিশন। এক্ষেত্রে অবশ্যই পরীক্ষার ভিতরেই নির্বাচনের দিন নির্ধারণে ফাঁক খুঁজে বের করা হবে।

উপজেলার আইনশৃঙ্খলা বৈঠক : ১৮টি উপজেলায় সাধারণ ও উপনির্বাচন রয়েছে আগামী ৬ মার্চ। এই নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ২৮ ফেব্রুয়ারি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠকে বসবে ইসি।

সবাইকে আস্থায় এনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএমে যেতে চায় ইসি: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আগামীতে ই-ভোটিংয়ে যাওয়ার কথা বলায় নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের কাছে বর্তমান সময়ে এটিই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। ইসি বলছে, সবাইকে আস্থায় এনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করা হতে পারে। তবে জাতীয় নির্বাচনের আগে অন্যান্য নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে ইভিএম ব্যবহার করতে চায় ইসি। ইভিএম ব্যবহারের বিষয়ে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ গতকাল বলেছেন, আগামীতে নির্বাচনে ইভিএম বা যন্ত্রে ভোটগ্রহণ করা যাবে। আমি জাতীয় নির্বাচন বলছি না। কেননা, ২০১৮ সাল নাগাদ দুই বছর সময় হাতে আছে। সবার সহযোগিতা থাকলে এই সময়ের মধ্যে ইভিএম বা যে নামেই ডাকা হোক, ভোটযন্ত্রটি আমরা প্রস্তুত করতে পারব। এ জন্য একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠন করা হয়েছে। যে কমিটি যন্ত্রে ভোট নেওয়ার বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করে সুপারিশ দেবে। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে ভোটযন্ত্র প্রস্তুত করা হবে। তিনি বলেন, বর্তমানে যে নষ্ট ইভিএম আছে, আমরা সেরকম কোনো ভোটযন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই না। এমন একটি যন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই, যা হ্যাক করা যাবে না, ম্যানিপুলেট (ফলাফল কারসাজি) করা যাবে না, ব্যাটারি বেকআপ ভালো থাকবে। গতকাল নির্বাচন ভবনে তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি। এ টি এম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন ২০১০ সালে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের প্রচলন করে। কিন্তু ২০১৩ সালের ১৫ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একটি কেন্দ্রে একটি ইভিএম মেশিন বিকল হয়ে পড়ে। সেই যন্ত্রটি এখনো ঠিক করতে পারেনি কমিশন। সচিব বলেন, আমরা এমন কোনো যন্ত্র প্রস্তুত করতে চাই, যা ওই রকম নষ্ট হয়ে যায়। ভোটগ্রহণ শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যন্ত্রটি ত্রুটিমুক্ত রাখতে হবে। এমন হবে যে, সকাল ৮টায় ভোটগ্রহণের পূর্বে ওপেন হবে না। আবার বিকাল ৪টার সঙ্গে সঙ্গেই বন্ধ হয়ে যাবে। এ ছাড়া নষ্ট হলেও ভোট প্রদানের তথ্যের বেক-আপ থাকবে। কাজেই এসব বিষয় নিশ্চিত হলেই তা নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মোহাম্মদ আবদুল্লাহ বলেন, সংসদ নির্বাচনের জন্য ৪০ হাজার ৫শ’রও বেশি ভোটকেন্দ্র রয়েছে। এ জন্য অন্তত দুই লাখ ইভিএম বা ভোটযন্ত্র প্রস্তুত করতে হবে। ইটস নট অ্যা মেটার অব জোক। এত ভোটযন্ত্র তৈরির জন্য অনেক সময় এবং অর্থেরও প্রয়োজন। তাই সব কিছু ঠিকঠাক থাকলেই কেবল নির্বাচনে ব্যবহার করা যাবে। আর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যবহার করতে হলে অনেক পরীক্ষামূলক ব্যবহার করে যন্ত্রটি ত্রুটিমুক্ত বলে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন। এ ছাড়া ভোটারদেরও ব্যবহার বিধি শেখাতে হবে। তাই এই সময়ের মধ্যে একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইভিএম বা ভোটযন্ত্র ব্যবহার করা অসম্ভব।

তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার দিকে আমাদের যেতেই হবে। আর ই-ভোটিংয়ের বিষয়টি আরও পরে আসবে। কেননা, যে যেখানেই থাকুক, সেখান থেকেই যেন ভোট দিতে পারেন— এ ব্যবস্থার দিকেও আমাদের যেতে হবে। প্রযুক্তির ব্যবহারকে পাশ কাটানো যাবে না। তবে যন্ত্রে ভোট নেওয়ার জন্য ভোটার, রাজনৈতিক দল সবাইকেই আগে আস্থায় আনতে হবে। ইভিএমের মতো অন্য কোনো ভোটযন্ত্র যদি তৈরি করা হয়, সেটি কি দেশীয় কোনো প্রতিষ্ঠানই তৈরি করবে— এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, ‘আমরা এ জন্য আন্তর্জাতিক টেন্ডার দেব। দেশের কোনো প্রতিষ্ঠান পারলে করবে, সমস্যা কোথায়?

২০১০ সালের ইভিএম প্রস্তুতের জন্য বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) কাজ নিয়েছিল। কিন্তু রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ইভিএম নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণ খুঁজে বের করা বা তা সমাধানে বুয়েট অস্বীকৃতি জানায়। ফলে সে সময়ের তৈরি করা ভোটযন্ত্রগুলো বাতিল অবস্থায় রয়েছে। এ জন্য প্রায় ছয় কোটি টাকা রাষ্ট্রের গচ্চা গেছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর