বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

একুশের উদ্দীপনায় বইয়ের সঙ্গে মিতালি

মোস্তফা মতিহার

একুশের উদ্দীপনায় বইয়ের সঙ্গে মিতালি

ফুলের চাদরে ঢাকা শহীদ মিনার। রাজপথের অলিগলি, মোড়ে মোড়ে একুশের শানিত চেতনা। শরীরে বর্ণমালার উল্কি, মুখাবয়বে ‘মোদের গরব মোদের আশা, আম রি বাংলা ভাষার’ অঙ্কিত স্লোগান। শাড়ি আর পাঞ্জাবিতে শোকের কালো রঙে একুশের আবহে ভাষার প্রতি বাঙালির একাত্মতা। চেতনার এই ধারা মিশে গেছে শহীদ মিনারে। আর জনসে াতের সেই ঢেউ আছড়ে পড়েছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা একাডেমিতে। বসন্তের কোকিলও কুহুতানে স্বাগত জানাতে মুখর থাকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আগত বইপ্রেমীদের। পলাশ রাঙা এমন বিকালে কোকিলের কুহুতানে গ্রন্থমেলায়ও নেমে এসেছিল প্রাণের জোয়ার। শহীদের বেদিতে শ্রদ্ধার ফুল রেখে এসে ব্যাগ ভর্তি বই কিনে নেওয়ার মধ্য দিয়ে বাঙালি প্রমাণ করেছে বইয়ের প্রতি বাঙালির আকর্ষণের কথা। একুশের শোককে শক্তিতে পরিণত করে চেতনায় ঋদ্ধ হয়ে উত্সবে মেতে উঠে বইপ্রেমীরা। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ও শহীদ দিবস একুশে ফেব্রুয়ারির গতকালকের চিত্র ছিল এমনই। কবিতা, গল্পে, উপন্যাসে, সাইন্সফিকশনে একুশকে নতুন করে খুঁজে নিয়েছে গোটা বাঙালি। উত্সবের রঙে একুশে ফেব্রুয়ারির আবহে ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে আবালবৃদ্ধবনিতার উজ্জ্বীবিত উপস্থিতিতে প্রাণের গ্রন্থমেলাও গতকাল ছিল একুশময় এবং ভাষাময়। শহীদ মিনার থেকে দোয়েল চত্বর। টিএসসি থেকে শাহবাগ। বাংলা একাডেমি থেকে স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। একুশের টানে বইয়ের প্রেমে সব খানেই ছিল জনসমুদ্রের বাঁধভাঙা জোয়ার। প্রতিটি স্টলের বিক্রয় কর্মীরা বিকিকিনিতে এ সময় দম ফেলার ফুরসত পাচ্ছিলেন না। একুশ উদযাপনে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের রূপসা থেকে এসেছিলেন শিক্ষার্থী পারভেজ মোশাররফ তন্ময়। কথা প্রসঙ্গে এই তরুণ বলেন, একুশ আমাদের অহংকার। যত দূরেই থাকি এই দিনটিতে আমি ঢাকায় থাকি এবং বইমেলায় আসি। এবারের মেলা কেমন লাগছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, মেলায় এসে উদ্দীপনা খুঁজে পান। তবে হতাশা প্রকাশ করে পারভেজ মোশাররফ তন্ময় বলেন, একুশের চেতনায় ঋদ্ধ বইমেলায় একুশ ও ভাষা আন্দোলন নিয়ে বই খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না। বিষয়টি অনেক কষ্টের। বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ও অন্যপ্রকাশের প্রধান নির্বাহী মাজহারুল ইসলাম বলেন, চমত্কার মেলা হচ্ছে। তবে পাইরেটেড বই ও ভারতীয় লেখকদের বই এখনো অনেক স্টলে বিক্রি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বাংলা একাডেমি এখন পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলেও জানান তিনি। অন্যদিকে জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির নির্বাহী পরিচালক এবং পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের স্বত্বাধিকারী কামরুল হাসান শায়ক বলেন, এবারের মেলা স্মরণকালের সবচেয়ে সফল মেলায় পরিণত হতে যাচ্ছে। বইয়ের প্রতি মানুষের আগ্রহ যেভাবে বৃৃৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে করে মেলার সময় আরও বৃদ্ধি করা উচিত বলেও মনে করেন তিনি। এত ছিল বিকালের গল্প। সকালের চিত্রটাও ছিল প্রায় একই রকম।

নতুন বই : বাংলা একাডেমির তথ্যমতে, গতকাল ২১তম দিন পর্যন্ত মেলায় এসেছে মোট ২ হাজার ৭৪৫টি নতুন বই। এর মধ্যে গতকাল প্রকাশ হয়েছে ২৬১টি নতুন বই। গতকাল প্রকাশিত উল্লেখযোগ্য বইগুলো দেশ পাবলিকেশন্স থেকে প্রকাশিত খান চমন-ই- এলাহির কাব্যগ্রন্থ ‘মৃত্যুবার্ষিকীর আগে প্রথম শোকসভা’, পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে ‘কামাল চৌধুরীর ‘কন্যাকে নিয়ে লেখা’, অনিন্দ্য এনেছে সৈয়দ শামসুল হকের ‘সায়েন্সফিকশন সমগ্র’, শিশুরাজ্য প্রকাশন এনেছে রণজিত্ সরকারের শিশুতোষ গ্রন্থ ‘সুস্মিতা নিয়মিত স্কুলে যায়’, ইত্যাদি।

মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকাল ৪টায় অমর একুশে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘ধর্মীয় বহুত্ববাদ : বাঙালি গৌরবময় উত্তরাধিকার’ শীর্ষক বক্তৃতানুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাসবিদ ড. আবদুল মমিন চৌধুরী। স্বাগত ভাষণ প্রদান করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। সভাপতিত্ব করেন ইতিহাসবিদ অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সমবেত সংগীত পরিবেশন করে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠীর শিল্পীরা। এতে একক সংগীত পরিবেশন করেন আবদুল জব্বার, ফকির আলমগীর, নমিতা ঘোষ, শিবু রায়, আবদুল হালিম খান এবং স্বর্ণময়ী মণ্ডল।

এর আগে সকাল সাড়ে ৭টায় গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় স্বরচিত কবিতা পাঠের আসর। এতে ১২০ জন নবীন-প্রবীণ কবি কবিতা আবৃত্তি করেন।

সর্বশেষ খবর