বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানের মেলা প্রতিদিন

নো ম্যান্স ল্যান্ডে বাংলা ভাষাপ্রেমীদের মিলনমেলা

বকুল মাহবুব, বেনাপোল

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে ভাষার টানে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গের হাজার হাজার বাংলাভাষী মানুষ মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় বেনাপোল চেকপোস্ট নো ম্যান্স ল্যান্ডে। ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবলমাত্র ভাষার টানে গতকাল সকালে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া উপেক্ষা করেই কার্যত দলে দলে মানুষ যোগ দেন একুশের মিলনমেলায়।

‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি আমি কি ভুলিতে পারি’ এই গান গাইতে গাইতে ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধায় মাথানত করতে বাংলাদেশের বাঙালিদের সঙ্গে মিলিত হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঙালিরাও। নো ম্যান্স ল্যান্ডে অস্থায়ী শহীদ বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান দুই বাংলার হাজারো মানুষ, রাজনৈতিক, সামাজিক, ব্যবসায়িক ও সংস্কৃতিক দল এবং সরকারের প্রতিনিধিরাও। দুই দেশের বেনাপোল ও বনগাঁও পৌর সভা যৌথভাবে এই মিলনমেলার আয়োজন করেন। ভাষা দিবসের মিলনমেলায় বিজিবি বিএসএফকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। এরপর দুই দেশের জাতীয় পতাকা উড়িয়ে হাজার হাজার ভাষাপ্রেমী মানুষ দিবসটি উদযাপন করে যৌথভাবে। নো ম্যান্স ল্যান্ডে নির্মিত অস্থায়ী শহীদ বেদিতে সকাল ৯টায় প্রথম ফুল দিয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সরকারের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক, তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রী শ্রী ব্রাত্য বসু, শ্রীমতী মমতা ঠাকুর, সংসদ বনগাঁ লোকসভা, বিধায়ক বিশ্বজিত্ দাস, বিধায়ক সুরজিত কুমার বিশ্বাস, বনগাঁও পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য। বাংলাদেশের আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য পীযূষ কান্তি ভট্টাচার্য, যশোরের জেলা প্রশাসক ড. হুমায়ন কবির, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন, পুলিশ সুপার আনিছুর রহমান, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিন চাকলাদার, বেনাপোল পৌর মেয়র আশরাফুল আলম লিটন, বেনাপোল বন্দরের পরিচালক রেজাউল ইসলাম, বেনাপোল কাস্টসের সহকারী কমিশনার আলী রেজা হায়দার, বেনাপোল সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন। মিলনমেলার অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বেনাপোল পৌর সভার মেয়র আশরাফুল আলম লিটন ও বনগাঁও পৌর সভার মেয়র শংকর আঢ্য।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের সংগীত শিল্পী খুরশিদ আলম, রথীন্দ্রনাথ রায়, কবি আসাদ চৌধুরী, নাট্যকার জয়ন্ত চট্টপাধ্যায় ও পশ্চিম বাংলার কবি ও সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, বিখ্যাত লোক সংগীত দল দোহার, লোক সংগীত শিল্পী অর্পিতা চক্রবর্তী, অর্পণ চক্রবর্তী। উভয় দেশের বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক সংগঠনগুলো স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নেয় এ অনুষ্ঠানে। তারা একই মঞ্চে গাইলেন ভাষা শহীদদের স্মরণে বাংলার জয়গান। নেতারা শ্রদ্ধা জানাতে হাতে হাত রেখে ঊর্ধ্বে তুলে ধরলেন বাংলা ভাষাকে।

হিলি সীমান্তের শূন্য রেখায় মিলনমেলা : ভৌগোলিক সীমারেখা ভুলে কেবল ভাষার টানে দিনাজপুরের হাকিমপুরের হিলি সীমান্তের শূন্য রেখায় উদযাপিত হলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। গতকাল হিলি শূন্য রেখায় এক সঙ্গে সুর মিলিয়ে গান গায় দুই বাংলার মানুষ। এ সময় পরিণত হয় দুই বাংলার হাজারো মানুষের পদচারণায় মিলনমেলা। হাকিমপুর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড এ মিলনমেলার আয়োজন করে। এতে ভারত হিলি ও মেঘালয়ের তুরা করিডর (ভায়া বাংলাদেশ) মুভমেন্ট কমিটির সদস্যরা অংশগ্রহণ করেন। মেলায় উভয় দেশের কবি, সাহিত্যিক ও শিল্পীদের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মো. মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার। বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আজিজুল ইমাম চৌধুরী, স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিক, হাকিমপুর ইউএনও শুকরিয়া পাভিন, হাকিমপুর (হিলি) পৌর মেয়র জামিল হোসেন চলন্ত, ভারতীয় করিডর কমিটির আহ্বায়ক নবকুমার দাস, কলকাতার মনোভূমি সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক গৌতম চক্রবর্তী, কলকাতা গণশাক্তি পত্রিকার সম্পাদক জয়ন্ত চক্রবর্তী প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালন করেন শাহিনুর রেজা শাহিন ও জাহিদুল ইসলাম জাহিদ। এর আগে সেখানে অস্থায়ী শহীদ মিনারে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, আওয়ামী লীগ, পৌরসভা, প্রেস ক্লাবসহ পশ্চিমবঙ্গের হিলি ও বালুঘাটের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠন।

সর্বশেষ খবর