বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

চোখ বেঁধে গুম করা হয় জাপা নেতাকে স্ত্রীর সন্দেহে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক

শেখ সফিউদ্দিন জিন্নাহ্

চোখ বেঁধে গুম করা হয় জাপা নেতাকে স্ত্রীর সন্দেহে দেহরক্ষী ও গাড়িচালক

জাতীয় পার্টি (মঞ্জু) নেতা খন্দকার হেফজুর রহমানের স্ত্রী সালেহা বেগম বলেছেন, তার স্বামীকে গুলশান এলাকা থেকে গুম করা হয়েছে। তার সন্দেহ : এ ঘটনায় স্বামীর দুই দেহরক্ষী ও প্রাডো গাড়ির চালক জড়িত। তার ধারণা, নগদ টাকার লোভেই হেফজুরকে অপহরণ করা হয়েছে। কারণ খন্দকার হেফজুর জমি কেনাবেচা ও অন্যান্য ব্যবসা করতেন। হয়তো তার সঙ্গে প্রচুর নগদ টাকা দেখে লোভী হয়ে উঠেছিলেন তার দেহরক্ষী ও গাড়িচালক। কিংবা ওই তিনজনের সঙ্গে কোনো অপহরণ চক্র আঁতাত করে ঘটনা ঘটিয়েছে। সালেহা বেগম গতকাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ প্রতিদিনের কাছে তার দুঃখের কাহিনী বর্ণনা করছিলেন। হেফজুর রহমান ২০১৫ সালের ৭ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টায় তার প্রাডো গাড়িতে থাকা অবস্থায় অপহৃত হন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন দুই দেহরক্ষী ক্যাপ্টেন (অব.) শওকত ও আউয়াল এবং চালক শাহ আলম। এই তিনজন ১৭ দিন পরে ফিরে এসে সপরিবারে গাঢাকা দেন। এদের মধ্যে চালক শাহ আলম ২০১৬ সালের ৯ জুন ধরা পড়েন। প্রাডো গাড়িটি গত ১৯ জানুয়ারি গাজীপুরের কাপাসিয়ার দস্যুনারায়ণপুর বাজারের লাগোয়া নদীতে পাওয়া যায়। পুলিশ এখন বলছে, গাড়ি যখন পাওয়া গেছে রহস্য উদঘাটন সহজ হবে। সালেহা বলেন, মোটা অঙ্কের টাকা আত্মসাত্ করার উদ্দেশ্যেই শওকত, আউয়াল ও শাহ আলম তার স্বামীকে অপহরণ করে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। তিনি বলেন, ওরা তিনজনই ১৭ দিন পর ফিরে এসে বউ-বাচ্চা নিয়ে পালিয়ে যায়। এদের মধ্যে দুজন এখনো পলাতক রয়েছে। শওকত যে বাসায় বাস করত সালেহা ওই বাসায় গিয়েছিলেন। বাড়ির মালিক তাকে জানান, হঠাত্ রাত ১টায় শওকত গাড়ি নিয়ে এসে পরিবার নিয়ে পালিয়ে যায়। সালেহা বলেন, ‘২০১৬ সালের ৯ জুন গাড়িচালক শাহ আলমকে হঠাত্ পেয়ে আটক করে গুলশান থানায় সোপর্দ করি। শাহ আলম বলেন, ‘আমি কিছুই বলব না। বললে ওরা আমায় মেরে ফেলবে। শুধু আমাকে না, আমার স্ত্রী-সন্তানকেও মেরে ফেলবে।’ চালক আরও জানান, তাকে মেরে ফেললেও তিনি কিছু বলবেন না। তিনি বলেন, ‘আমাকে ও বসকে চোখ বেঁধে ওরা নিয়ে গিয়েছিল। ওরা আমাদের চোখ বেঁধেই খাবার-দাবার দিত। কী কারণে বসকে রেখে আমাদের ছেড়ে দিয়েছে তা জানি না।  সালেহা বেগম জানান, চালক ও দেহরক্ষীরা তার স্বামীর অনেক কিছু জানেন। তিনি তাদের খুবই যত্নআত্তি করতেন। ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়েও ওদের সঙ্গে মতবিনিময় করতেন। জানা গেছে, গাড়ি চালক শাহ আলমের বাড়ি মাতুয়াইলে। দেহরক্ষী শওকত বাস করতেন ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট এলাকার কচুক্ষেতের ২০৪ নম্বর বাড়িতে। আউয়ালের বাড়ি গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায়। হেফজুরের প্রাডো গাড়িটি কাপাসিয়া থানা চত্বরে এখনো পড়ে আছে। এই গাড়িটি দেড় বছর আগে গুলশান-১ এর চেক পোস্টের লিংক রোডের মাথায় পৌঁছলে কয়েক ব্যক্তি এর গতিরোধ করে। তারা অস্ত্রের মুখে গাড়িটিসহ হেফজুর রহমানকে অপহরণ করে। সালেহা বেগম পরদিন গুলশান থানায় মামলা করতে যান। কিন্তু পুলিশ মামলা নিতে গড়িমসি করে। তখন তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে প্রতিকার চেয়ে আবেদন করেন। ২৫ সেপ্টেম্বর গুলশান থানা পুলিশ মামলা নেয়। ওই সময় মামলাটি তদন্ত করেন গুলশান থানার এসআই মোহাম্মদ আলী হাসান। মামলার কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় তদন্তের ভার পরে সিআইডির ওপর। সালেহা বেগম জানান, তার স্বামী খন্দকার হেফজুর রহমান জাতীয় পার্টির (মঞ্জু) মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তার বাড়ি কসবা উপজেলার কাইয়ূমপুর ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামে। এদিকে ঢাকার সিআইডি গুলশান উত্তর ইউনিটের পুলিশ পরিদর্শক মো. আবদুল কাইউম তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলতে রাজি হননি। তবে তিনি বলেন, গাড়ি উদ্ধার হওয়ায় রহস্য উদঘাটন সহজ হবে।

সর্বশেষ খবর