বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
কৃষি সংবাদ

৬ গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে মহিলা কৃষি প্রযুক্তি ক্লাব

জহুরুল ইসলাম, কুষ্টিয়া

৬ গ্রামে আলো ছড়াচ্ছে মহিলা কৃষি প্রযুক্তি ক্লাব

দেশের প্রথম মহিলা কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাব স্থাপন করা হয়েছে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে। এ ক্লাব বদলে দিচ্ছে উপজেলার তিনটি গ্রামের শতাধিক কৃষানির জীবনযাত্রা। এ ক্লাবে হাতে-কলমে শিক্ষা নিয়ে কৃষির আদ্যোপান্ত শিখছেন তারা। বাড়ির আঙিনায় সবজি, ফলমূলসহ নানা জাতের ফসল চাষ করছেন এসব নারী। কুমারখালী উপজেলার চাঁপড়া ইউনিয়ন। এখানকার নারীদের কৃষিতে দক্ষ করে তুলতে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বকুল হোসেন বছরখানেক আগে স্থাপন করেন দেশের প্রথম মহিলা কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাব। হাতে গোনা কয়েকজন নারীকে নিয়ে এ ক্লাবের যাত্রা হলেও এখন এর সদস্য ৩ হাজার ছুঁইছুঁই। সাঁওতা, পাইকপাড়া, ইছাখালী, কাঞ্চনপুর ও শ্যামপুর গ্রামের ২ হাজার ৭০০ নারী সপ্তাহে দুই দিন বসতবাড়ির আঙিনায় চাষাবাদ পদ্ধতি, জৈব সার তৈরিসহ কৃষির খুঁটিনাটি শিখছেন এ ক্লাবে এসে। কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাবের সদস্যরা প্রশিক্ষণ নিয়ে আহরিত জ্ঞান কাজে লাগাচ্ছেন। প্রত্যেকে বাড়িতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার না করেই গড়ে তুলেছেন কৃষি খামার। এসব খামারে ফলের গাছ, হরেক রকমের শাক-সবজি চাষ করছেন তারা। শতভাগ নিরাপদ এ সবজি ও ফল নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মিটিয়ে বিক্রি করছেন বাজারেও। সরেজমিন দেখা গেছে, ছয়টি গ্রামের ২ হাজার ৮৫০ বাড়ির আঙিনায় সযত্নে গড়ে তোলা হয়েছে ছোট ছোট কৃষি খামার। যেখানে শোভা পাচ্ছে মুলা, পালং শাক, লাউ, মিষ্টি কুমড়াসহ নানা জাতের সবজি। রয়েছে কুল, পেয়ারাসহ বিভিন্ন জাতের ফলের গাছও। সাঁওতা নারী কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ঋতু খাতুন বলেন, প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর নিজের চাষ করা সবজিতেই সংসারের চাহিদা মিটছে, বাজার থেকে কেনার প্রয়োজন পড়ছে না। একই ক্লাবের সদস্য রেশমা বেগম বলেন, তাদের উত্পাদিত সবজি বা ফলে কোনো রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার হয় না। মাটির ঊর্বরতা রক্ষায় জৈব সার আর পোকামাকড় দমনে বালাইনাশক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। শ্যামপুর ক্লাবের সদস্য আমেনা খাতুন বলেন, সংসারের চাহিদা মিটিয়ে চলতি শীত মৌসুমে তিনি ২ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছেন। ক্লাবের উদ্যোক্তা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বকুল হোসেন বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী কৃষি ক্ষেত্রে ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করতে তিনি নারী কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাব চালু করেছেন। ছয়টি গ্রামে তিনি এ ধরনের সাতটি ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেছেন। কোনো পরিবার যাতে অপুষ্টিতে না ভোগে সেজন্য তিনি এই ক্লাবের মাধ্যমে এলাকার নারীদের হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে আসছেন। এ ছাড়া ছয়টি গ্রামের ২ হাজার ৮৫০টি বাড়ির প্রতিটিতে খামারজাত সার ও ভারমি কমপোস্ট সার তৈরির ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিটি বাড়িতে সবজি খামার, অন্যান্য ফল গাছের পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে কলা, পেঁপে ও একটি করে সফেদা গাছ লাগানো হয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. শাহাবুদ্দিন বলেন, নারী কৃষিপ্রযুক্তি ক্লাব ছয়টি গ্রামের নারীদের জীবনযাত্রা বদলে দিয়েছে। ক্লাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে একদিকে নারীরা যেমন পরিবারে ভেজালমুক্ত পুষ্টিকর সবজি ও ফলের জোগান দিতে পারছে, অন্যদিকে তারা দিন দিন আত্মনির্ভরশীল হয়েছে উঠছে। এ পদ্ধতি সারা দেশে চালু হলে কৃষিতে নতুন মাত্রা যোগ হবে বলে মনে করছেন এই কৃষিবিদ।

সর্বশেষ খবর