বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

জামায়াত নেতার মেয়ে মহিলা আওয়ামী লীগে

চট্টগ্রামে বিস্ময় নেতা-কর্মীদের

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের কমিটিতে সাংগঠনিক সম্পাদক পদ পেয়েছেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা মুমিনুল হক চৌধুরীর মেয়ে রিজিয়া রেজা চৌধুরী। সোমবার নগরীর চকবাজারে এক কমিউনিটি সেন্টারে দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে এ কমিটি ঘোষণার পর বিস্মিত-স্তম্ভিত কর্মীরা বলছেন, রিজিয়া কীভাবে এখানে এলেন! সম্মেলন উদ্বোধন করেন মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি বেগম সাফিয়া খাতুন। প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় মহিলাবিষয়ক সম্পাদক বেগম ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা। এ ছাড়া ঘোষিত কমিটির সভাপতি হলেন সাবেক এমপি চেমন আরা তৈয়ব ও সাধারণ সম্পাদক প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আবদুল্লাহ আল হারুনের মেয়ে শামীমা লুবনা হারুন।

সম্মেলনে উপস্থিত একাধিক নারী নেত্রী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, রিজিয়া চৌধুরীর আরেক পরিচয় তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযমের শিষ্য আবু রেজা নদভীর স্ত্রী। নদভী ভোল পাল্টে আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে চট্টগ্রাম-১৪ (সাতকানিয়া-লোহাগাড়া) আসনে সংসদ সদস্য হন। এ নিয়ে দলের মধ্যে এখনো ক্ষোভ ও হতাশা রয়েছে। মমিনুল হক চৌধুরী সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসন থেকে ১৯৯১ সালে এবং পরে বাঁশখালী আসন থেকে জামায়াতের পক্ষে নির্বাচন করেন। মহিলা আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি ও সাবেক এমপি সাফিয়া খাতুন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ফোনে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা তো চট্টগ্রামের অনেক কিছুই জানি না। শুধু নাম ঘোষণা করেছি। তবে সংগঠনের নেত্রীদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ রিজিয়া রেজা চৌধুরী গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ‘আমি তো কোনো পদ চাইনি। এমপির (নদভী) নির্বাচনের জন্য আমি কাজ করেছিলাম। সেজন্য আমাকে পদ দেওয়া হয়েছে। এখন আমার পরিচয়, এমপির পরিচয়, আমার বাবার পরিচয় নিয়ে টানাটানি শুরু হয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘চলিতেছে সার্কাস’ এমন বিষয় উল্লেখ করে কামরুল আহসান রাসেল স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘রিজিয়া চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের পদ পেয়েছেন।... আসুন আমরা সবাই জোরে জোরে হাত তালি মারি।’ একইভাবে এম ইউ সাইমুন চৌধুরী লিখেছেন, “ভাইয়া, কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছি। শুধু ‘আপসোস’ রইয়ে গেল বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা রাজাকারমুক্ত আর হইল না।” স্থানীয় ও নেত্রীদের সূত্রে অভিযোগে জানা যায়, গত চারদলীয় জোট সরকারের সময় সাতকানিয়া আসনে জামায়াত নেতা শাহজাহান চৌধুরীকে বিজয়ী করার পেছনে নদভীর বিশেষ ভূমিকা ছিল। আবু রেজা নদভীর সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের বিশেষ যোগাযোগ আছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে সাতকানিয়া আসন থেকে বিএনপির মনোনয়ন চেয়ে কর্নেল অলির কাছে হার মেনেছিলেন নদভী। এরপর কিছুদিন চুপ থাকলেও পরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। আরও জানা যায়, জামায়াত কানেকশনের মাধ্যমে ইন্টারন্যাশনাল ইসলামী ইউনিভার্সিটিতে প্রভাষক পদে চাকরি করেছেন তিনি। এরপর তিনি নিজেই আল্লামা ফয়জুল্লাহ ফাউন্ডেশন নামে একটি এনজিওর কার্যক্রম শুরু করেন। গত ১/১১ সরকারের সময় গোয়েন্দা সংস্থা এই ফাউন্ডেশনের বিরুদ্ধে জঙ্গি পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ তোলে।

সর্বশেষ খবর