শুক্রবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভায় প্রধানমন্ত্রী

আগামী নির্বাচনে বিএনপি আসবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

আগামী নির্বাচনের জন্য এখন থেকেই সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে দলীয় এমপিদের নির্দেশ দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের বৈঠকে তিনি বলেন, ‘বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে। এ নির্বাচনে আমাদের একটি শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতা মোকাবিলা করতে হতে পারে। এজন্য সবার সে রকম প্রস্তুতি রাখতে হবে। দলকে সেভাবেই প্রস্তুত করতে হবে।’ সংসদ ভবনে সরকারি দলের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন শেখ হাসিনা।

সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হয়ে রাত পৌনে ৯টা পর্যন্ত বৈঠক চলে। বৈঠকের শুরুতেই আওয়ামী লীগ সংসদীয় দলের সম্পাদক নির্বাচিত করা  হয় নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে। বৈঠকে বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, মন্ত্রী শাজাহান খান, স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপন, ড. হাছান মাহমুদ, মুন্নুজান সুফিয়ান, মনিরুল ইসলাম, এ কে এম শামীম ওসমান, শামসুল হক চৌধুরী প্রমুখ।

জনবিচ্ছিন্ন হলে কেউ পার পাবেন না : দলীয় এমপিদের নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে ভালো কাজের মাধ্যমে জনগণের মন জয় করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘সবার জনসম্পৃক্ততা বাড়াতে হবে। সরকারের উন্নয়ন ও সফলতার কথা আরও বেশি করে মানুষের মধ্যে প্রচার করতে হবে। কেউ নির্বাচনী এলাকায় বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করবেন না। কে কী করছেন, কার কী অবস্থা— সব রিপোর্টই আমার কাছে আছে। জনবিচ্ছিন্ন হলে কেউ পার পাবেন না। তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখবেন।’ বৈঠক সূত্র আরও জানায়, আগামী নির্বাচন সামনে রেখে দলীয় এমপিদের বেশকিছু নির্দেশনাও দেন প্রধানমন্ত্রী। সব এমপির উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, ‘আপনারা নিজ নিজ নির্বাচনী এলাকায় কী কী উন্নয়ন করেছেন, উন্নয়নমূলক কাজের কী কী বাকি রয়েছে, আর কী করলে জনগণের মন জয় করা যাবে তা একটি রিপোর্ট আকারে তৈরি করে সংসদীয় দলের সম্পাদকের কাছে জমা দেবেন। আমরা সেগুলো সমাধানের চেষ্টা করব। একই সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা, নাশকতা ও অগ্নিসন্ত্রাসের বিষয়গুলোও বুকলেট আকারে তৈরি করে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে তা পৌঁছে দিয়ে এদের ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করবেন।’

বিএনপি সন্ত্রাসী সংগঠন কানাডার আদালতে প্রমাণিত : কানাডার আদালতের রায়ে বিএনপিকে সন্ত্রাসী দল হিসেবে ঘোষণা প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, বিএনপি যে একটি সন্ত্রাসী দল, তা শেষ পর্যন্ত কানাডার আদালতেই প্রমাণিত হয়েছে। তারা অতীতে যে সন্ত্রাসী তত্পরতা চালিয়েছে, তাও প্রমাণিত হয়েছে। এরা মানুষ মারে, পুলিশ মারে, নাশকতা করে। বিএনপি-জামায়াত জোটের সেই আগুনসন্ত্রাস, পুড়িয়ে মানুষ হত্যা, ধ্বংসযজ্ঞসহ সব অপকর্মের বিষয়ও জনগণের সামনে বেশি করে তুলে ধরতে হবে। এদের সম্পর্কে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক করতে হবে।

সংসদীয় দলের নতুন সম্পাদক : বৈঠকে সংসদীয় দলের নতুন সম্পাদক নিয়োগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আগে দলের সাধারণ সম্পাদকই সংসদীয় দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করতেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক একজন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী। তার একার পক্ষে এত দায়িত্ব পালন করা কঠিন হবে। এ কারণেই নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটনকে এবার সম্পাদকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

কোন্দল দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ : বৈঠক সূত্র জানায়, দলীয় এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় দ্বন্দ্ব-বিভেদ দ্রুত মিটিয়ে ফেলার নির্দেশ দিয়ে সংসদ নেতা বলেছেন, দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা প্রত্যেক সংসদ সদস্যের নৈতিক দায়িত্ব। তাই নিজ নিজ এলাকায় দলের মধ্যে যেখানে যেখানে সমস্যা আছে, তা চিহ্নিত করে দ্রুত নিরসন করতে হবে। দলীয় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে হবে। এখনো যথেষ্ট সময় রয়েছে। এ সময়ের মধ্যে সব ধরনের কোন্দল ও বিভেদ মিটিয়ে ফেলে দলকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে।

পদ্মার চরে গড়ে তোলা হবে অলিম্পিক কমপ্লেক্স : ক্রীড়া প্রতিবেদক জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের পাশে শেখ রাসেল রোলার স্কেটিং কমপ্লেক্সের নামফলক উন্মোচন করেন। এ সময় তিনি চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের পুরুষ ও মহিলা বিভাগে চ্যাম্পিয়ন ভারত ও রানার্স-আপ ইরানের হাতে ট্রফি তুলে দেন। প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ১৩ বছরের হৃদয় সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার গ্রহণ করে। অনুষ্ঠানে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপের আয়োজক কমিটির প্রধান মো. আবুল কালাম আজাদ বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার খেলাধুলার মানোন্নয়নে পদ্মার চরে একটি ক্রীড়াপল্লী ও অলিম্পিক কমপ্লেক্স গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ সময় তিনি বলেন, ‘যুবসমাজকে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ বা মাদকাসক্তি থেকে দূরে রাখতে হবে। তা করতে গেলে খেলাধুলা ও সংস্কৃতির চর্চা একান্তভাবে জরুরি। সে পদক্ষেপই আমরা নিচ্ছি।’ তিনি বলেন, আজকাল খেলা মাঠে গড়ালে তা খেলোয়াড়দের মধ্যে কেবল বন্ধুত্ব কিংবা ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। ‘ট্রাক থ্রি ডিপলোম্যাসি’র এই সময়ে খেলাও আন্তরাষ্ট্রীয় সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করতে পারে, আঞ্চলিক সম্পর্ককেও মজবুত করতে পারে। তিনি চতুর্থ রোল বল বিশ্বকাপে অংশগ্রহণকারী রাষ্ট্র ও ক্রীড়াবিদদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এবারের আয়োজনে অংশ নেওয়া ৬২৫ জন ক্রীড়াবিদ বাংলাদেশ দেখে গেলেন। আপনারা নিজের দেশে গিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাম্বাসাডরের ভূমিকা পালন করবেন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘রোল বল স্কেটিং প্রতিযোগিতায় পুরুষ ক্রীড়াবিদদের পাশাপাশি মহিলা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নারী-পুরুষের সমতা ও সমঅধিকার অর্জনের উল্লেখযোগ্য দৃষ্টান্ত। আমাদের সরকার নারীবান্ধব নীতি অবলম্বন করে সমাজের সর্বস্তরে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে।’ তিনি নারী ক্রীড়াবিদদের উত্তরোত্তর সাফল্যও কামনা করেন। যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান মো. জাহিদ আহসান রাসেল, আন্তর্জাতিক রোল বল ফেডারেশনের সভাপতি পেনিয়া কাবিঙ্গে এবং সাধারণ সম্পাদক রাজু ডাবাদে এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন। এ উপলক্ষে এক মনোমুগ্ধকর ডিসপ্লে ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

সর্বশেষ খবর