শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

এমপিপুত্রের তোলা পাঁচিলে ‘অবরুদ্ধ’ এক পরিবার

প্রতিদিন ডেস্ক

এমপিপুত্রের তোলা পাঁচিলে ‘অবরুদ্ধ’ এক পরিবার

দেয়ালের নিচে মাটি খুঁড়ে, কখনো মই বেয়ে বাড়ি থেকে বের হন বাসিন্দারা —বাংলাদেশ প্রতিদিন

খুলনার পাইকগাছায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এক এমপির ছেলে পাঁচিল তুলে একটি পরিবারকে উচ্ছেদ করে জমি দখলের চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে অভিযোগ অস্বীকার করে সংসদ সদস্য নূরুল হকের বড় ছেলে মো. মনিরুল ইসলাম বলছেন, ওই জমি তারা কিনে নিয়েছেন। ঘটনার জেরে উভয় পক্ষ থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। খবর বিডিনিউজ। দেয়াল তোলার কারণে পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবদুল আজিজ গোলদারের পরিবার এক প্রকার অবরুদ্ধ। তাদের চলাচল করতে হচ্ছে দেয়ালের নিচে গর্ত কেটে বা মই দিয়ে। আজিজ বলেন, ‘এখানে আমরা সাত দশক ধরে বাস করছি। বাড়ির ২০ শতাংশ জমির দলিল রয়েছে। আর এ জমির পাশের ৩০ শতাংশ খাসজমিও উপজেলা প্রশাসনের মৌখিক সম্মতিতে আমরা ভোগদখল করছি।’ আজিজের অভিযোগ, খুলনা-৬ (পাইকগাছা) আসনের এমপি মো. নূরুল হকের ছেলে মনিরুল ইসলাম পুরো ৫০ শতক জমি কিনে নিয়েছেন দাবি করে তাদের বসতবাড়ি ভেঙে সরিয়ে নেওয়ার জন্য ‘হুমকি দিচ্ছেন’। তিনি বলেন, ‘চলতি বছর ৩ জানুয়ারি নূরুল হকের ভাতিজা শেখ আলাউদ্দিন আমার পরিবারের ১৬ সদস্যের বিরুদ্ধে পাইকগাছা থানায় চাঁদাবাজির মামলা করেছে হেনস্তা করার জন্য।’ মামলার পর গ্রেফতার এড়াতে বাড়ির পুরুষ সদস্যরা আত্মগোপনে গেলে ৫ জানুয়ারি মনিরুল লোকজন নিয়ে এসে প্রাচীর তুলে যাতায়াতের পথ বন্ধ করে দেন বলে জানান আজিজ গোলদার। ‘এর এক সপ্তাহ পর এলাকায় ফিরলে মনিরুলের লোকজন আমাকে মারধর করে পুলিশে দেয়। সে সময় আমাকে ২৬ দিন জেলে থাকতে হয়।’ দেড় মাস ধরে তাকে এই দেয়ালের ভিতরেই পরিবার নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে। এ ঘটনায় তিনি দুটি মামলা করেছেন জানিয়ে বলেন, মনিরুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে বসতবাড়ি ভাঙচুরের একটি মামলা করা হয়েছে। আর পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগে করা হয়েছে আরেকটি মামলা। আজিজ গোলদারের ছেলে মো. আসাদুল ইসলামের অভিযোগ, তাদের জমি থেকে উত্খাত করতে ‘উঠেপড়ে লেগেছেন’। বিষয়টি সবাইকে জানালেও এখনো কোনো সুরাহা হয়নি। পৈতৃক সম্পত্তি রক্ষা করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মনিরুল ইসলাম। তার ভাষ্য, এই ৫০ শতক জমির মালিক ছিলেন ঠাকুরদাস হালদার ও অজিত হালদার। তাদের জমি ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে ৫ লাখ টাকায় কিনে নেন তিনি। মনিরুল পাল্টা অভিযোগ করেন, ‘আজিজ গোলদার ওই দুই ভাইয়ের জমি অবৈধভাবে দখল করে দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করে আসছেন।’ দেয়াল তোলার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের কেনা জমি দখলের জন্য দেয়াল তুলেছি।’ যাতায়াতের পথ বন্ধ করা হয়নি দাবি করে তিনি বলেন, ‘দেয়াল তোলা হলেও একটি গেট রয়েছে। সেখান দিয়ে যাতায়াতে তাদের নিষেধ করা হয়নি।’ গেট সম্পর্কে আজিজ গোলদার বলছেন, ‘সেখানে সব সময় নিরাপত্তা প্রহরী থাকে। তারা হুমকি দেয়। গালাগাল করে। সেখান দিয়ে যাতায়াত করা যায় না।’ এ বিষয়ে সংসদ সদস্য নূরুল হক বলেন, ‘আমি আইনজীবী। কাগজপত্র দেখে ছেলেকে এই জমি কিনতে সমস্যা নেই বলে জানিয়েছি।’ ওই জমির মালিকানা নিয়ে জানতে চাইলে মেয়র সেলিম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে ঠাকুরদাস হালদার ও অজিত হালদার ওই জমির মালিক ছিলেন বলে জানতাম। পরে তারা ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর তারা একবার দেশে এসেছিলেন। পরে আর দেখিনি।’ বিরোধ মেটাতে একাধিকবার শালিস বৈঠকেও সুরাহা হয়নি বলে জানান পাইকগাছা পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এস এম তৈয়বুর রহমান। তিনি বলেন, ‘আমরা একাধিকবার বৈঠক করেছি। এমপি সাহেবও ছিলেন। সমঝোতা হয়নি। পরে এটা আদালতে গড়িয়েছে।’ পাইকগাছা থানার ওসি মারুফ আহম্মদ বলেন, ‘জমির বিরোধসহ তিনটি মামলারই তদন্ত চলছে। শিগগিরই প্রতিবেদন দেওয়া হবে।’

সর্বশেষ খবর