শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
সুরঞ্জিতের আসনে কে

পাঁচ নেতাকে ঘিরে জল্পনা কল্পনা

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

প্রায় পাঁচ দশক ধরে সুনামগঞ্জ-২ আসনের (দিরাই-শাল্লা) একচ্ছত্র অধিপতি ছিলেন রাজনীতির প্রবাদপুরুষ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তার মৃত্যুতে এ আসনটি এখন শূন্য। আগামী ৩০ মার্চ এ আসনে উপনির্বাচন। নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে আছেন অন্তত পাঁচজন। যাদের ঘিরে সুনামগঞ্জে চলছে বিস্তর জল্পনা-কল্পনা।

স্থানীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আসন্ন এই উপনির্বাচনে আওয়ামী          লীগ সুরঞ্জিতের পরিবারেরই কোনো একজনকে মনোনয়ন দিতে পারে। এক্ষেত্রে সুরঞ্জিতের স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তই আছেন মূল আলোচনায়। তবে কোনো কারণে পরিবারের কেউ নির্বাচন না করলে বা দলীয় মনোনয়ন না পেলে সেক্ষেত্রে দলীয় নেতা-কর্মীদের অভিমতের ভিত্তিতে কেন্দ্র থেকে অন্য কাউকে মনোনীত করা হতে পারে। সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের পরিবারের বাইরে মনোনয়নের দৌড়ে যারা রয়েছেন তারা হলেন— সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক এমপি মতিউর রহমান, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও শহীদ তালেব উদ্দিনের ভাই অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের সদস্য ব্যারিস্টার অনুকূল তালুকদার ডাল্টন এবং যুক্তরাজ্য শ্রমিক লীগের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক শামছুল হক চৌধুরী। নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এসব নেতা দলীয় মনোনয়ন পেতে নানাভাবে কেন্দ্রে চেষ্টা তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন। স্থানীয় নেতা-কর্মীরা বলছেন, ড. জয়া সেনেরই এ আসনে মনোনয়ন পাওয়া উচিত। দিরাই-শাল্লার অসমাপ্ত উন্নয়নকাজ সুরঞ্জিতের পরিবারের কারও হাত ধরেই সমাপ্ত হবে— নেতা-কর্মীদের এটাই প্রত্যাশা। তবে নেতা-কর্মীদের এমন চাওয়ায় এখনো পর্যন্ত কোনো কথা বলেননি সুরঞ্জিত পরিবারের কেউ। শেষ পর্যন্ত তার পরিবারের বাইরে কাউকে মনোনয়ন দেওয়া হলে নেতা-কর্মীরা তাকেই স্বাগত জানাবেন। এক্ষেত্রে সবচেয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে আছেন মতিউর রহমান ও অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম। সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি হিসেবে মতিউর রহমান সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুস সামাদ আজাদ বলয়ের নেতা হিসেবে পরিচিত। ওই বলয়ের নেতা-কর্মীরা আসনটিতে প্রার্থী হিসেবে তাকেই দেখতে চান। সামাদ অনুসারী সাধারণ ভোটারদের পছন্দের তালিকায়ও রয়েছেন প্রবীণ এই নেতা। অন্যদিকে সুনামগঞ্জ মহকুমা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক শহীদ তালেবের ভাই, সিলেট আইন মহাবিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ও অতিরিক্ত পিপি অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলামও রয়েছেন দলীয় নেতা-কর্মী ও ভোটারদের আলোচনায়। সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত আওয়ামী লীগে যোগদানের পর থেকেই ছাত্র রাজনীতির মধ্য দিয়ে উঠে আসা শামসুল ইসলাম তার সঙ্গেই এলাকা চষে বেড়িয়েছেন। প্রয়াত নেতার আস্থাভাজন হিসেবে সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলয়ের নেতা-কর্মীরা মনে কমরন, কোনো কারণে ড. জয়া নির্বাচন না করলে সেখানে শামসুল ইসলামেরই মনোনয়ন পাওয়া উচিত। এতে দিরাই-শাল্লার রাজনীতি ও উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সুরঞ্জিত সেন স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। এ ব্যাপারে দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আসাব উদ্দিন বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনের পরিবারের কাউকে প্রার্থী হিসেবে চাই আমরা। যদি তা না হয়, নেত্রী যাকে মনোনয়ন দেবেন তাকেই আমরা স্বাগত জানাব’। দিরাই উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লুত্ফুর রহমান ইয়াওর বলেন, ‘সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী কোনো কারণে নির্বাচন না করলে শহীদ পরিবারের সন্তান হিসেবে শামসুল ইসলাম দলীয় মনোনয়ন পাবেন বলে দলের নেতা-কর্মীরা মনে করছেন।’ শাল্লা উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা লাল্টু দাশ বলেন, নির্বাচনের ব্যাপারে আমরা বর্ধিত সভা করেছি। আমরা মনে করি দিরাই-শাল্লার অসমাপ্ত উন্নয়ন কাজ শেষ করার জন্য সুরঞ্জিত পরিবারের কেউই প্রার্থী হবেন। মনোনয়ন প্রত্যাশী অ্যাডভোকেট শামসুল ইসলাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের ছায়ায় রাজনীতি করেছেন। যদি সুরঞ্জিত পরিবারের কেউ প্রার্থী না হন, তাহলে তিনি নির্বাচন করতে আগ্রহী।

আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী মতিউর রহমান বলেন, তিনি মনোনয়ন চাইবেন। তিনি বলেন, সুরঞ্জিত সেনের জন্য তিনবার নির্বাচন করা থেকে বিরত থেকেছি। এ জন্য এবার আমি মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী।

সর্বশেষ খবর