রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা
প্রানেরমেলা প্রতিদিন

অনুবাদের অভাব প্রকট

মোস্তফা মতিহার

অনুবাদের অভাব প্রকট

আকাশ সংস্কৃতির বদান্যতায় বিশ্বসংস্কৃতি এখন বাঙালির হাতের মুঠোয়। বিজ্ঞানের আশীর্বাদে মানুষ যখন মঙ্গলগ্রহ সম্পর্কে জানছে, রোবট ও এলিয়েনকে নিয়েও আগ্রহী হয়ে উঠছে, সংগত কারণেই বিশ্বসাহিত্যের প্রতিও আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে এটাই স্বাভাবিক। নোবেল, ম্যানবুকার ও পুলিত্জারজয়ী সাহিত্যিকদের সৃষ্টকর্ম সম্পর্কে জানতে অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই। যার কারণে তরুণ প্রজন্ম দিনে দিনে অনুবাদের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। বিশ্বসাহিত্যের প্রতি আগ্রহীদের কথা চিন্তা করে বরাবরের মতো এবারের মেলা বেশকিছু অনুবাদের বই এনেছে। তবে পাঠকের আগ্রহের তুলনায় অনুবাদের প্রকাশনার সংখ্যা নিতান্ত। এবারের অমর একুশে গ্রন্থমেলায় গতকাল ২৫তম দিন পর্যন্ত ৩ হাজার ২০৮টি বইয়ের মধ্যে অনুবাদের সংখ্যা মাত্র ১৮। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো অন্যপ্রকাশ থেকে শেকসিপয়রের নাটকের বই ‘হ্যামলেট’। এর অনুবাদ করেছেন সৈয়দ শামসুল হক। পাঠক সমাবেশ প্রকাশ করেছে আমিনুল ইসলাম ভূঁইয়া অনূদিত প্লেটো সিরিজের বেশ কয়েকটি অনুবাদগ্রন্থ। এ সিরিজের মধ্যে রয়েছে ‘প্লেটোর রিপাবলিকের ভূমিকা’, ‘প্লেটো : রাষ্ট্রনায়ক’, ‘প্লেটো : সিম্পোজিয়াম’, ‘প্লেটো : ক্রাতিলাস’, ‘প্লেটো : লেকিস’, ‘প্লেটো : সক্রেটিসের জবানবন্দি’, ‘প্লেটো : প্রোতোগোরাস’ ইত্যাদি। ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে ‘আকবর দ্য গ্রেট’, ‘জাহাঙ্গীরনামা’, ‘জেরুসালেম’সহ বেশ কয়েকটি

অনুবাদগ্রন্থ। ইতিহাস-ধর্ম-দর্শন-বিজ্ঞান-আত্মজীবনী-উপন্যাস-ছোটগল্পের নানা শাখায় ২২টি অনুবাদ বই প্রকাশ করেছে সন্দেশ। অন্যদিকে দেশের সাহিত্যকে গৌরবের সঙ্গে তুলে ধরতে হলেও অনুবাদের কোনো বিকল্প নেই। গতকাল বিকালে মেলাপ্রাঙ্গণে কথা হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শম্পা করের সঙ্গে। এই তরুণী বলেন, ‘দেশ-বিদেশের শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জানতে হলে অনুবাদগ্রন্থের বিকল্প নেই। মেলায় আসি শুধু অনুবাদের বই কেনার জন্য। তবে ঘুরেফিরে পুরনো বইগুলোই পাচ্ছি। নতুন কোনো অনুবাদের বই পাওয়া যাচ্ছে না। অনুবাদের বই আরও বেশি বেশি প্রকাশ করা উচিত।’ অন্যদিকে বিদেশের মূল প্রকাশক ও লেখকের অনুমতি ছাড়াই এ দেশের প্রকাশকরা অনুবাদের বই ছাপছেন এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন দিক থেকে। তবে বিষয়টি মানতে নারাজ পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্সের কর্ণধার কামরুল হাসান শায়ক।

অনুবাদ বইয়ের প্রকাশনা কম কেন— এমন প্রশ্নের উত্তরে প্রকাশনা সংস্থা সন্দেশের স্বত্বাধিকারী লুত্ফুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘পাঠকের কাজে আসবে এমন বইয়ের অনুবাদই আমরা করছি। অনেক লেখক তার অনুবাদের বই নিয়ে এসেছিলেন আমাদের কাছে, কিন্তু মানসম্মত নয় বলে ফিরিয়ে দিয়েছি।’ গতকাল মেলার ২৫তম দিনে প্রতিটি স্টলের সামনেই ছিল বইপ্রেমীর লম্বা লাইন। দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে বই কিনেই বাড়ি ফিরেছেন তারা।

রফি হকের ‘নিভৃত জীবনের ঘ্রাণ’ : অয়ন প্রকাশনা প্রকাশ করেছে শিল্পী রফি হকের ‘নিভৃত জীবনের ঘ্রাণ’। গতকাল বিকালে মেলার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মোড়ক উন্মোচন মঞ্চে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম, শিক্ষাবিদ হায়াৎ মামুদ, শিল্পী মোস্তাফিজ কারিগর।

বইটির প্রচ্ছদ করেছেন মনিরুল ইসলাম। ১০৯ পৃষ্ঠার এ বইটির মূল্য ১৭০ টাকা।

কবরীর ‘স্মৃতিটুকু থাক’ : বিডিনিউজ ২৪-এর প্রকাশনা সংস্থা বিপিএল প্রকাশ করেছে অভিনেত্রী ও সাবেক সংসদ সদস্য কবরীর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’। গতকাল বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন। এ সময় আরও ছিলেন শিল্পী মনিরুল ইসলাম, বিডিনিউজের সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালেদী প্রমুখ।

নতুন বই : গতকাল ২৫তম দিনে মেলায় নতুন বই এসেছে ১৬৩টি এবং ৪১টি নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়।

মূলমঞ্চ : গতকাল বিকাল ৪টায় গ্রন্থমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘বাংলাদেশের শিশুসাহিত্য শীর্ষক আলোচনা। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রফিকুর রশিদ। আলোচনায় অংশ নেন আমীরুল ইসলাম ও আসলাম সানী। সভাপতিত্ব করেন জাকির তালুকদার। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ছিল মুজতবা আহমেদ মুরশেদের পরিচালনায় স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র ও হাসান আবদুল্লাহর পরিচালনায় ঘাসফুল শিশুকিশোর সংগঠনের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এ ছাড়া সংগীত পরিবেশন করেন কমলিকা চক্রবর্তী, আরিফ রহমান, শ্যামল কুমার পাল, সালমা চৌধুরী, রাজিয়া সুলতানা, ডা. রেজাউর রহমান, আবিদা রহমান সেতু ও মনিরা ইসলাম।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর