সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ঘরে ঘরে বোমা আতঙ্ক

আলী আজম

ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে নিম্নমানের ফ্রিজ, এসি ও গ্যাস সিলিন্ডার। মানহীন ও নিম্নমানের একেকটি সিলিন্ডার একেকটি বোমায় রূপ নিয়েছে; যা নিমিষেই ধ্বংস করতে পারে বাসাবাড়ি, দোকানপাট, অফিস-আদালত, যানবাহনসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এসব পণ্য মানুষের জীবনের জন্য আতঙ্ক হয়ে উঠেছে। এমনসব সিলিন্ডার ব্যবহারে প্রায় প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। বাড়ছে হতাহতের সংখ্যা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এসব নিম্নমানের সিলিন্ডার ছেড়ে মানসম্মত সিলিন্ডার ব্যবহার করলে দুর্ঘটনা অনেক কমে আসবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সিএনজি সিলিন্ডারে প্রতি বর্গইঞ্চিতে ৩২০০ পাউন্ড চাপে গ্যাস ভরা হয়। গ্যাস সিলিন্ডার সঠিক মানের না হলে যে কোনো সময় গাড়ি ভয়াবহ বোমা হয়ে বিস্ফোরণ ঘটার আশঙ্কা থাকে। এদিকে গৃহস্থালি বা দোকানের কাজে ব্যবহূত বেশকিছু এলপিজি সিলিন্ডারও বিস্ফোরণ ঘটছে। নিম্ন ও মানহীন সিলিন্ডার ব্যবহার করায় নিরাপদ রান্নাঘর হয়ে উঠেছে বিপজ্জনক।

জানা গেছে, রি-টেস্টের মেয়াদোত্তীর্ণ দেড় লাখেরও বেশি গাড়ি বিপজ্জনক সিলিন্ডার নিয়ে রাস্তায় চলছে। নিম্নমানের সিলিন্ডার ও কিটস ব্যবহার এবং পাঁচ বছর পরপর রি-টেস্ট করার নিয়ম না মেনে গাড়িচালকরা জীবন্ত বোমা নিয়ে যানবাহন চালাচ্ছেন। যা চালকসহ গাড়ির যাত্রী ও পথচারীদের জীবনের জন্যও হুমকি। প্রায়ই ঘটছে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনাও ঘটছে। সর্বশেষ শনিবার বিকালে পুরান ঢাকার লালবাগ চৌরাস্তায় মিঠাই নামের একটি বেকারিতে ফ্রিজের কমপ্রেসার বিস্ফোরণ ঘটে। এতে সাতজন দগ্ধসহ নয়জন আহত হন। এর মধ্যে পাঁচজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক (অপারেশন্স) দেবাশীষ বর্ধন জানান, নিম্ন, মানহীন ও মেয়াদোত্তীর্ণ ফ্রিজ, এসি ও গ্যাস সিলিন্ডর ব্যবহার করায় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। ত্রুটিপূর্ণ পণ্য মানেই ঝুঁকিপূর্ণ। কম দামে নিম্নমানের পণ্য কিনে ব্যবহার করায় নিজেদের বিপদ নিজেরাই ডেকে আনছে। একটা নির্দিষ্ট সময়ে গ্যাস সিলিন্ডারের    ক্যাপাসিটি টেস্ট করানোর কথা থাকলেও অনেকেই তা মানছে না। ফলে এসব পণ্য একেকটি বোমার মতো হয়ে উঠছে। এসব বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতিসহ প্রাণহানির শঙ্কা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, নিম্ন, মানহীন ও পুরাতন কমপ্রেসার দিয়ে গ্যাস সিলিন্ডার, ফ্রিজ, এসি ও ইলেকট্রনিক সামগ্রী তৈরি করায় তা নির্দিষ্ট সময়ের আগেই নষ্ট বা বিস্ফোরণ ঘটছে। এ ধরনের দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে মানসম্মত পণ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। এগুলো ব্যবহারের জন্য জনসচেতনতা ও প্রশিক্ষণ থাকাও জরুরি বলে তিনি মনে করেন। থ্রি স্টার ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্ক নামে একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাসুম বিল্লাহ মৃধা জানান, তারা গ্রিল চিকেনের মেশিন, ওভেন, ডিসপ্লে ফ্রিজসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য তৈরি করেন। আমরা আইডিয়ার ওপর এসব পণ্য তৈরি করি। তবে নিম্ন ও মানহীন পণ্যের ব্যবহার করা হচ্ছে কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, সব ধরনের ইকুইপমেন্ট বিদেশ থেকে এনে দেশে ফিটিং করা হচ্ছে। বিস্ফোরক অধিদফতরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলছেন, ‘মেয়াদোত্তীর্ণ একেকটি সিলিন্ডার একটি বোমার চেয়েও ভয়াবহ। এসব জেনেও আমরা গ্যাসের সিলিন্ডারটি নিয়মিত পরীক্ষা করছি না। মাঝেমধ্যে যে রিপোর্ট পাই তা প্রাইভেট কারের। বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহনের কোনো তথ্যই আমাদের কাছে নেই। ফলে তাদের অবস্থা কী তার কিছুই জানি না। একটি প্রাইভেট গাড়িতে মালিক নিজেই চলাচল করেন। তার পরও তিনি জেনেবুঝে নিয়মিত সিলিন্ডারটি পরীক্ষা করাচ্ছেন না। ফলে ঝুঁকিতে থাকছেন নিজেই। এর জন্য আমরা নানাভাবে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’ নিয়ন্ত্রক সংস্থা রূপান্তরিত প্রাকৃতিক গ্যাস কোম্পানির (আরপিজিসিএল) হিসাব অনুযায়ী, সারা দেশে ২ লাখের বেশি সিএনজিচালিত যানবাহন রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ বছরের বেশি সময় অতিক্রম করা গাড়ির সংখ্যা দেড় লক্ষাধিক। এর ৮০ ভাগই পুনঃপরীক্ষা করা হয়নি। সিএনজি নিরাপত্তার আন্তর্জাতিক মান নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডার পাঁচ বছর পরপর রি-টেস্টের বিধান রয়েছে। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সিলিন্ডার নিয়েই হাজার হাজার যানবাহন রাস্তায় চলাচল করছে। এর ফলে মাঝেমধ্যে গাড়িতে ঘটছে বিস্ফোরণ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আইন করে যদি বিআরটিএ’র ফিটনেস নেওয়ার সময় সিলিন্ডার রি-টেস্ট করানো বাধ্যতামূলক করা যায় তাহলে এ ধরনের ঝুঁকি কমবে। সবাই সচেতন হবে। এর ফলে প্রাণহানি ও যানবাহন নিরাপদ হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর