সোমবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

‘তুমি সুখী হও’ আদালতে খাদিজাকে বলল বদরুল

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

আদালতে মুখোমুখি হবেন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিস ও তার ওপর হামলাকারী ছাত্রলীগ নেতা বদরুল আলম। এ নিয়ে সকাল থেকে সিলেট আদালতপাড়ায় ভিড় জমে উত্সুক জনতার। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সাদা মাইক্রোবাসে চড়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আদালতে আসেন খাদিজা। এর ঘণ্টাখানেক পর কারাগার থেকে আদালতে আনা হয় বদরুলকে। খাদিজা ও বদরুলের আগমনে সরগরম হয়ে ওঠে আদালত চত্বর। এক নজর দেখার জন্য ভিড় করা মানুষদের ঠেলে খাদিজা ও বদরুলকে বিচারকক্ষে নিতে পুলিশকে হিমশিম খেতে হয়। আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বদরুল খাদিজাকে উদ্দেশ করে বলে, ‘তুমি সুখী হও, তোমার বিচার আল্লাহ করবে।’ আদালত খাদিজার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আগামী ১ মার্চ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের তারিখ ধার্য করে। কলেজছাত্রী খাদিজা বেগম নার্গিসের ওপর হামলার ঘটনায় করা মামলার সাক্ষী ছিলেন ৩৭ জন। গতকাল মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে ৩৪তম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন ভিকটিম খাদিজা। তার সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিচারক সাইফুজ্জামান হিরো সাক্ষ্য গ্রহণ পর্ব সমাপ্ত ঘোষণা করে যুক্তিতর্কের তারিখ ধার্য করেন। বদরুলের উপস্থিতিতে সাক্ষ্য দিতে গিয়ে আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়েন খাদিজা। আদালতকে তিনি জানান, পাঁচ-ছয় বছর আগে তার বাড়িতে লজিং মাস্টার হিসেবে থাকত বদরুল। ওই সময় থেকে তাকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল সে। গত বছর ৩ অক্টোবর পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে এমসি কলেজের পুকুরপাড়ে বদরুল তার ওপর হামলা চালায়। বদরুলের নৃশংস হামলায় তিনি সারা জীবনের জন্য প্রতিবন্ধী হয়ে গেছেন। এ সময় আদালতের কাছে বদরুলের শাস্তি দাবি করেন খাদিজা। এ সময় বদরুল আদালতে উচ্চৈঃস্বরে বলে ওঠে, ‘তুমি সুখী হও, তোমার বিচার আল্লাহ করবে।’ এরপর বদরুলের আইনজীবী সাজ্জাদুর রহমান চৌধুরী খাদিজাকে জেরা করেন। ওই সময় বদরুলের আইনজীবী একটি ছবি দেখিয়ে খাদিজার কাছে জানতে চান, ছবিটি তার কি না। খাদিজা তা অস্বীকার করেন। এ ছাড়া বদরুলের সঙ্গে খাদিজার প্রেমের সম্পর্ক ছিল কি না জানতে চাইলে খাদিজা ‘না’ উত্তর দেন। এরপর আদালত বদরুলের কাছে জানতে চায়, সে সাফাই সাক্ষ্য দেবে কি না। উত্তরে বদরুল ‘না-সূচক’ জবাব দেয়। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে খাদিজার আইনজীবী এ কে এম শমিউল আলম বলেন, ‘সাক্ষ্য-প্রমাণের মাধ্যমে বদরুলের নৃশংসতা প্রমাণে আমরা সক্ষম হয়েছি। আমরা আশাবাদী বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তি দেবে আদালত।’ সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালত থেকে বের হয়ে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন খাদিজা। এ সময় তিনি বদরুলের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানোর পাশাপাশি দুঃসময়ে তার পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। প্রসঙ্গত, ৩ অক্টোবর সিলেটের এমসি কলেজ কেন্দ্রে স্নাতক পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে হামলার শিকার হন সিলেট সরকারি মহিলা কলেজের স্নাতক (পাস কোর্স) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী খাদিজা। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক বদরুল আলমের ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তার মাথার খুলি ভেদ করে মস্তিষ্কও জখম হয়। হামলার পর ঢাকায় এনে স্কয়ার হাসপাতালে ৪ অক্টোবর বিকালে খাদিজার অস্ত্রোপচার করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ১৩ অক্টোবর তার লাইফ সাপোর্ট খোলার পর ‘মাসল চেইন’ কেটে যাওয়া তার ডান হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়। স্কয়ারে তিন দফা অস্ত্রোপচারের পর অনেকটা সুস্থ হন খাদিজা। শরীরের বাঁ পাশ স্বাভাবিক সাড়া না দেওয়ায় চিকিৎসার জন্য স্কয়ার থেকে তাকে পাঠানো হয় সাভারের সিআরপিতে। সিআরপিতে তিন মাসের চিকিৎসা শেষে শুক্রবার বাড়ি ফেরেন খাদিজা।

সর্বশেষ খবর